নোবেলজয়ী ইউনূসের পক্ষে হাসিনাকে ১৭৫ বিশ্বনেতার খোলা চিঠি

মীযান ডেস্ক: শান্তিতে নোবেলজয়ী, বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের আচরণের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খোলাচিঠি লিখেছিলেন রাজনীতি, কূটনীতি, ব্যবসা, শিল্পকলা ও শিক্ষাক্ষেত্রের ৪০ জন বিশ্বনেতা। এবার তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে ১৭৫ জন বিশ্বনেতা নতুন এক খোলাচিঠি দিলেন। এই চিঠিতে সই করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও সাবেক মার্কিন বিদেশমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস-হোর্তা, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন, রাষ্ট্রসংঘের সাবেক মহাসচিব বান-কি মুনের মতো ব্যক্তিত্ব।

চিঠিতে লেখা হয়েছে, আমরা বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে বলছি। সম্প্রতি বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি যে হুমকি দেখছি তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া এবং সব রাজনৈতিক দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগের দুটি নির্বাচনে বৈধতার অভাব ছিল। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানবাধিকারের প্রতি যে হুমকি আমাদের উদ্বিগ্ন করে তা হলো- নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের মামলা। সম্প্রতি তাকে টার্গেট করা হয়েছে। এটা ক্রমাগত বিচারিক হয়রানি বলেই আমাদের বিশ্বাস। আমরা বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, আপনি অবিলম্বে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করুন।

আমরা নিশ্চিত যে, তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনার করলে তিনি খালাস পাবেন। বেকারত্ব বিমোচনে, দারিদ্র্য মুক্ত করতে মাইক্রো ফাইনান্সের ওপর ড. ইউনূস যে অভাবনীয় কাজ করে চলেছেন, তা আমাদের সকলের জন্য অনুপ্রেরণামূলক। আমরা আন্তরিকভাবে কামনা করি তিনি যেন হয়রানি থেকে মুক্ত হয়ে তার উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে সক্ষম হন। 

আত্মবিশ্বাস থাকলে ইউনূস বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়াতেন না: হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আত্মবিশ্বাস থাকলে ড. ইউনূস আন্তর্জাতিক বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়াতেন না। সরকার কোনো বিবৃতিতেই প্রভাবিত হবে না। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা আইন অনুযায়ী চলবে। মঙ্গলবার বিকেলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, যারা বিবৃতি দিয়েছেন তাদের আহ্বান জানাই, বিবৃতি না দিয়ে বিশেষজ্ঞ পাঠান, আইনজীবী পাঠান। দলিল দস্তাবেজ, কাজগপত্র ঘেঁটে দেখুন, অন্যায় আছে কি না। এ দেশে সব কিছুই আইন মতো চলে। কেউ যদি ট্যাক্স (কর) না দেয়, শ্রমিকের অর্থ আত্নসাৎ করে, শ্রমিকদের পক্ষ থেকে যদি মামলা করা হয়, সেখানে আমাদের কী সেই হাত আছে যে, মামলা বন্ধ করে দেব? নোবেলজয়ী বলে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? পৃথিবীতে এমন বহু নোবেলজয়ী আছেন, যারা তাদের কাজের জন্য কারাগারে আছেন। আদালত, আইন, বিচার স্বাধীনভাবে চলবে।

অন্যদিকে, ড. ইউনূসের পক্ষে পালটা সাংবাদিক সম্মেলন করে বিরোধী দল বিএনপি-র মহাসচিব মির্যা ফখরুল ইসলাম বলেন, হাসিনা সরকার বেপরোয়া হয়ে গেছে। ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে গেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে হাসিনার বিদায় অনিবার্য। ইউনূসের মতো বিশ্ববিখ্যাত নোবেলজয়ী ব্যক্তিকেও জেলে পাঠাতে হাসিনা সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে। ইউনূস এমন একজন ব্যক্তিত্ব, যার জন্য বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের মাথা উঁচু হয়েছে। অথচ তাঁর প্রতি ন্যূনতম সম্মান, সৌজন্য পর্যন্ত দেখাতে অপারগ প্রধানমন্ত্রী।

Stay Connected

Advt.

%d bloggers like this: