জিরো ব্যালেন্সে ৫০ কোটি অ্যাকাউন্ট, অথচ লেনদেন-শূন্য অসংখ্য গরিবের পাসবুক

মীযান ডেস্ক: জিরো ব্যালেন্সে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার হিড়িক পড়ে গিয়েছিল এক সময়। এখন সেই প্রবণতা একটু কমলেও রোজই নতুন অ্যাকাউন্ট চালু হচ্ছে। জনধন যোজনায় ব্যাঙ্কে খাতা খোলাটাই যেন সাফল্য। লেনদেন হোক আর নাই হোক। তবুও এরই জয়গান গেয়ে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সোমবার রোজগার মেলাতেও তার ব্যতিক্রম হল না। প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনায় জিরো ব্যালেন্সে গরিব মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা যেন রকেট গতিতে বেড়ে চলেছে। কিন্তু তাতে টাকা কোথায়? কোটি কোটি পাসবুকে লেখা থাকছে শূন্য! ডরমেন্ট বা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে রয়েছে আরও কয়েক কোটি অ্যাকাউন্ট। 

২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে এই প্রকল্পের অধীন অ্যাকাউন্ট এর সংখ্যা ছিল সাড়ে ৪৭ কোটি। দুমাস পর মার্চে এক ধাক্কায় তা পৌঁছে যায় ৪৯ কোটিতে। আর চলতি আগস্টে ৫০ কোটি ছাড়িয়ে গেল। অর্থাৎ প্রতি মাসে যেন লক্ষ লক্ষ অ্যাকাউন্ট খোলার উৎসব চলছে। অথচ এর মধ্যে প্রায় ৫ কোটি অ্যাকাউন্টে কোনও টাকাই জমা নেই। অর্থাৎ জিরো ব্যালান্স। আরও প্রায় ১০ কোটি অ্যাকাউন্টে গত দুবছরে কোনও লেনদেনই হয়নি। সেগুলিও নিষ্ক্রিয় অবস্থায় পড়ে আছে। সব মিলিয়ে ৫০ কোটি অ্যাকাউন্টে মোট জমার পরিমাণ ২ লক্ষ ৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ, গড়ে মাত্র ৪ হাজার টাকা। একথা বলছে খোদ সরকারি তথ্যই।

তা সত্ত্বেও এদিন রোজগার মেলায় প্রধানমন্ত্রী রীতিমতো উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন, জনধন যোজনা গোটা সমাজকে আমূল বদলে দিয়েছে। অথচ ব্যাঙ্কের কপালে বাড়ছে চিন্তার ভাঁজ। কারণ, একটা অ্যাকাউন্টের বছরভর রক্ষণাবেক্ষণে অন্তত সাড়ে ৫ হাজার টাকা জমা থাকা প্রয়োজন। অথচ জনধনে গড় আমানত সেই ন্যূনতম অঙ্কেও পৌঁছচ্ছে না। 

একদা এই প্রকল্পে গরিব মানুষের উৎসাহ বাড়াতে একগুচ্ছ সুযোগ-সুবিধা ঘোষণা করা হয়েছিল। যেমন, গ্রাহকদের ডেবিট কার্ড প্রদান, ১ লক্ষ টাকা দুর্ঘটনা বিমা, ১০ হাজার টাকা ওভারড্রাফ্ট। গরিবের ভর্তুকির টাকা জনধন অ্যাকাউন্টেই ট্রান্সফার হয়। তাহলে জিরো ব্যালান্স কেন? কারণ একটাই। মূল্যবৃদ্ধি আর কর্মহীনতার জেরে গরিবের কাছে ব্যাঙ্কে টাকা জমা রেখে বিলাসিতা দেখানোর মতো কোনও সঞ্চয় বা উদ্বৃত্ত থাকছে না! 
বিরোধীদের অভিযোগ, দেশজুড়ে অগণিত গরিব ও প্রান্তিক মানুষকে এই অ্যাকাউন্ট খোলানো হয়েছে। তারা ভেবেছিল, বিদেশ থেকে কালো টাকা উদ্ধার করে এনে মোদি সরকার তাদের এই অ্যাকাউন্টে ১৫ লাখ করে দেবে। অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ফল হয়েছে সম্পূর্ণ উলটো। গরিব মানুষ একটা টাকাও পায়নি; বরং তাদের সামান্য সঞ্চয়টুকুও এই প্রকল্পের মাধ্যমে শুষে নেওয়া হয়েছে। এই সরকার আসলে গরিবের রক্ত চোষা সরকার।
 

Share :

Stay Connected

Advt.

%d bloggers like this: