মীযান ডেস্ক: বাক স্বাধীনতা বা মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে বর্তমান কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে বার বার অভিযোগ উঠছে। দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাষ্ট্রসংঘ ইত্যাদি বিভিন্ন মহল থেকে প্রায়ই এ নিয়ে ভারত সরকারের দমননীতির সমালোচনা করে রিপোর্ট দেওয়া হয়। প্রতিবারই কিন্তু নয়াদিল্লি প্রশাসন বিষয়টিকে অভ্যন্তরীন ইস্যু বলে কাউকে নাক না গলানোর নিদান দেওয়া হয়। এহেন চাপান উতোরের মাঝেই এবার একাধিক রাজ্যের বিভিন্ন শহরে রাতভর তল্লাশি চালানো হল বহু নামজাদা লোকদের বাড়ি ও অফিসে। প্রশ্ন উঠছে, পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা এবং লোকসভা ভোটের আগে সংবাদমাধ্যমকে কড়া বার্তা, নাকি গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের কণ্ঠরোধের প্রয়াস?
অভিযোগ উঠেছে, ভোটের আগে ফের কেন্দ্রের টার্গেট সেই সাংবাদিক এবং সমাজকর্মীরা। এদিন ভোর থেকে অনলাইন মিডিয়া ‘নিউজক্লিক’ এর বিরুদ্ধে তেড়েফুঁড়ে নামে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্ত দিল্লি পুলিস। দিল্লি ও মুম্বইয়ের অন্তত ৩০ জায়গায় একযোগে চলে অভিযান। আটক করা হয় একঝাঁক সাংবাদিক, লেখক, ইতিহাস গবেষক ও সমাজকর্মীকে। এর মধ্যে ৪৬ জনকে স্পেশাল সেলে নিয়ে গিয়ে জেরা করা হয়। দিনভর জেরার পর রাতে গ্রেপ্তার করা হয় ‘নিউজক্লিক’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থ এবং এইচআর অমিত চক্রবর্তীকে। নিউজক্লিক এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন ইউএপিএ ধারায় মামলাও করা হয়েছে। এছাড়াও খ্যাতনামা সাংবাদিক পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা, উর্মিলেশ প্যাটেল, অনিন্দ্য চক্রবর্তী, অভিসার শর্মা, সঞ্জয় রাজৌরা, সোহেল হাশমির মতো একঝাঁক সাংবাদিক ও লেখককে আটক করা হয়। প্রত্যেকের ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন সহ যাবতীয় গ্যাজেটস ও নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিস। তল্লাশি চালানো হয়েছে বিশিষ্ট সমাজকর্মী তিস্তা শেতলাবাদের বাড়িতেও। অভিযোগ একটাই—এঁরা সবাই নাকি দেশবিরোধী বা সরকার-বিরোধী কাজে মদত দিয়ে চলেছেন।
পাশাপাশি সিপিএম এর সর্বোচ্চ নেতা সাংসদ সীতারাম ইয়েচুরীর বাড়িতেও এদিন তল্লাশি হয়। একইসঙ্গে আপ দলের সুবক্তা ও সাংসদ সঞ্জয় সিং এর বাড়িতেও এদিন হানা দেওয়া হয়। ‘নিউজক্লিক’-এর বিরুদ্ধে ঠিক কী অভিযোগ? পুলিসের দাবি, চীন থেকে অর্থ সাহায্য বা লগ্নি আসে এই নিউজ পোর্টালে। আর সেই টাকায় তারা চালায় দেশ ও মোদি সরকারের বিরুদ্ধে প্রচার, যা কার্যত দেশদ্রোহ এবং সন্ত্রাসবাদেরই নামান্তর।
এদিন দিনভর এই ইস্যুতে মোদি সরকারকে তুলোধোনা করেছে বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ, এই ঘটনা আদতে স্বৈরতন্ত্রের পদধ্বনি। পরোক্ষে হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে—মোদি সরকারের বিরুদ্ধে কিছু লেখা অথবা বলা হলেই তার জন্য এমন দুর্দিন অপেক্ষা করে আছে। কংগ্রেসের আইটি সেলের অন্যতম শীর্ষকর্তা পবন খেরা বলেন, মিডিয়াকে ভয় দেখানো মানে আসলে মোদি সরকার ভয় পেয়েছে। জাতিগত জনগণনার দাবি জোরালো হচ্ছে। তাই এসব করে ওই ইস্যুকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
তৃণমূল এমপি মহুয়া মৈত্র প্রশ্ন তুলেছেন, ‘এই তাহলে মোদির নিউ ইন্ডিয়া?’ আরজেডি সাংসদ অধ্যাপক মনোজ ঝা বলেছেন, ‘দিল্লি পুলিস আবার কী? ও তো অমিত শাহের অধীনে। এজন্য কিন্তু মাশুল গুনতে হবে।’ পুলিসের এহেন আচরণের নিন্দায় সরব হয়েছে প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়া, এডিটর্স গিল্ডও। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ সিং ঠাকুর অবশ্য বলেন, ‘পুলিসের কাছে তথ্য প্রমাণ না থাকলে তারা কেন অভিযান চালাবে? আর যদি কোনও মিডিয়া দেশবিরোধী কাজ করে তাহলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত তো হওয়াই উচিত!’
