মীযান ডেস্ক: মাত্র দিন কয়েক আগে মার্কিন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘দ্য হিন্দু ওয়াচ’ এর রিপোর্টে বলা হয়েছিল, গত ছয় মাসে বিদ্বেষমূলক ভাষণের ৮০ শতাংশই দিয়েছেন বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা। এবার প্রায় একই ধরনের রিপোর্ট দিল অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস বা এডিআর। এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ৫ বছরে মোট ১০৭ জন সাংসদ ও বিধায়কের বিরুদ্ধে রয়েছে বিদ্বেষ ভাষণ দেওয়ার অভিযোগ। যথারীতি এদের সিংহভাগই বিজেপি দলের। আর যে রাজ্যের নেতারা সবচেয়ে বেশি ঘৃণা-বিদ্বেষমূলক ভাষণ দিয়েছেন, সেটি হল যোগীরাজ্য উত্তরপ্রদেশ। এডিআর এর রিপোর্ট বলেছে, গত পাঁচ বছরে এ ধরনের মামলায় অভিযুক্ত ৪৮০ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এডিআর ও ন্যাশনাল ইলেকশন ওয়াচ যুগ্মভাবে এই রিপোর্ট পেশ করেছে বিধায়ক ও সাংসদদের দেওয়া নির্বাচনী হলফনামা বিশ্লেষণ করে। তালিকায় বিজেপি সাংসদের সংখ্যা সর্বোচ্চ। ৩৩ জনের মধ্যে মোট ২২ জন সাংসদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ভাষণ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সেখানে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম ছ’মাসে ৮০ শতাংশ ঘৃণা ভাষণ দিয়েছেন গেরুয়া শাসকরাই। এডিআরের তালিকায় কংগ্রেসের দু’জন সাংসদ, আপ, ডিএমকে, শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরেপন্থী), পিএমকে-এর একজন করে সাংসদ রয়েছেন। যোগীরাজ্য উত্তরপ্রদেশে ঘৃণাভাষণের অভিযোগে বিদ্ধ সাংসদের সংখ্যা সবথেকে বেশি। বিজেপির এই মডেল রাজ্যে রয়েছেন সাতজন। এরপরই তালিকায় আছে তামিলনাড়ুর চারজন সাংসদ। বিহার, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানায় তিনজন। আবার গুজরাত, অসম, মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গে দু’জন করে সাংসদ রয়েছেন এই তালিকায়। ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, কেরল, ওড়িশা ও পাঞ্জাব থেকে রয়েছেন একজন করে সাংসদ। পাশাপাশি ৭৪ জন বিধায়কের বিরুদ্ধে এই ঘৃণা ভাষণের মামলা রয়েছে। এক্ষেত্রেও শীর্ষে রয়েছে বিজেপি। বিজেপির মোট ২০ জন বিধায়কের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ভাষণ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে কথার মাধ্যমে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে বহুত্ববাদী দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, বৈচিত্রকে ধূলিসাৎ করে দেওয়া হচ্ছে। মানুষে মানুষে মেরুকরণ ও বিভাজন তীব্র করা হচ্ছে। আর এটা হল রাজনৈতিক সংস্কৃতি। অথচ এই রাজনৈতিক দলগুলোই বিভিন্ন রাজ্যে সরকার চালাচ্ছে, এমনকী দেশ চালাচ্ছে। তাহলে এ দেশের হাল কেমন হচ্ছে বা অদূর ভবিষ্যতে আরও কতখানি খারাপ পরিস্থিতি দেখা দেবে, তা সহজেই অনুমেয়। আশ্চর্য্যের ব্যাপার হল, একজন নেতাকেও বিদ্বেষ ভাষণের অপরাধে জেলে রাখা হয়নি। অথচ কেন্দ্র সরকারের বিভিন্ন নীতি, পলিসি ও কাজের সমালোচনা করে বক্তব্য রাখলে কিংবা লেখালিখি করলে তাদেরকে দেশদ্রোহের অভিযোগে আটক করা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, কেন এই দ্বিচারিতা। তাহলে বাক স্বাধীনতা বলে এদেশে আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না।
