মীযান ডেস্ক: 'অ্যাটোসেকেন্ড পালস'। একেবারেই একটা নতুন শব্দবন্ধনী। বিষয়টি জড়িত ইলেকট্রন ডায়নামিক্সের সঙ্গে। ইলেকট্রনের জগৎকে ঘিরে নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য এমন এক পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে, যার মাধ্যমে আলোর 'অ্যাটোসেকেন্ড পালস' তৈরি হয়! তিন বিজ্ঞানী এবারে অণু ও পরমাণুর ভিতরের ইলেকট্রনের জগৎকে নতুন করে উদ্ভাবনের এক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন! কেউ কেউ তাঁদের এই উদ্ভাবনকে বলছেন আলোর স্পন্দনের সন্ধান দিতে গিয়ে তাঁরা নিজেরাই আলোকবর্তিকা হয়ে উঠেছেন। আমরা জানি, সবথেকে দ্রুত গতিতে ছোটে আলো। আলোর গতিবেগ প্রতি সেকেণ্ডে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল। আলোর স্পন্দন বা গতির পরিমাপই ছিল তাঁদের গবেষণার লক্ষ্য। আর তা আবিষ্কার হলে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে খুলে যাবে নতুন দিগন্ত। সেই এককই হল অ্যাটোসেকেন্ড। যা সময় পরিমাপের ক্ষেত্রে সবথেকে ছোট একক। এটি এক সেকেন্ডের এক কুইন্টিলিয়ন ভাগের সমান। ১৯৮০ সাল থেকে এই এককের উপস্থিতি থাকলেও এতদিন তা প্রমাণিত হয়নি। সময়ের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এই একক নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষাই ছিল তিন নোবেল প্রাপকের অন্যতম কাজ। আলোর সেই স্পন্দন মাপতে সফল হয়েছেন তাঁরা। লেজার ফিজিক্সে এই মৌলিক গবেষণাই তাঁদের এবারের নোবেল সম্মান এনে দিল। মঙ্গলবার পদার্থবিদ্যায় নোবেলজয়ী হিসাবে এই তিন বিজ্ঞানীর নাম ঘোষণা করল রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি। মোদ্দা কথা হল, ইলেকট্রনের গতি ও আলোর সম্পর্ক নিয়ে পরীক্ষামূলক গবেষণা করছিলেন এই তিন পদার্থবিজ্ঞানী। আমেরিকার পিয়ের অগস্টিনি, হাঙ্গেরির ফেরেঙ্ক ক্রাউটজ এবং ফ্রান্সের অ্যান এলহুইলার। নোবেল কমিটির মতে, তাঁদের আবিষ্কার পরমাণু এবং অণুর ভিতর ইলেকট্রন জগৎ চিনতে দিশা দেখাবে। আলোর গতির থেকে কম গতি সম্পন্ন হলেও ইলেকট্রন খুব দ্রুত গতিতে অণুর মধ্যে চলাচল করে। সেই গতি মাপতে সহায়ক হবে অ্যাটোসেকেন্ড। এতে মহাবিশ্বকে উপলব্ধি করা সহজতর হবে। প্রযুক্তির পাশাপাশি রোগ নির্ণয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে এই নয়া আবিষ্কার। অগাস্টিনি বর্তমানে আমেরিকার ওহিয়ো ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক, ফেরেঙ্ক জার্মান গবেষণা সংস্থা ‘মিউনিখ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ফোটোনিক্স’এর গবেষক এবং সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটির পদার্থ বিজ্ঞানের প্রধান অ্যানে। প্রতি বছর ২ অক্টোবর থেকে নোবেল পুরস্কার প্রাপকদের নাম ঘোষণা করা হয়। প্রথমে চিকিৎসা, তারপর পদার্থ, আজ বুধবার রসায়ন, বৃহস্পতিবার সাহিত্য, শুক্রবার নোবেল শান্তি পুরস্কার এবং সবশেষে ৯ অক্টোবর অর্থনীতিতে নোবেলজয়ীর নাম ঘোষণা হবে। তাই অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ টানটান উত্তেজনা ও কৌতুহল থাকে বিশ্বজুড়ে। উল্লেখ্য, শুধুমাত্র শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা হয় নরওয়ের রাজধানী অসলো থেকে। বাকি ৫টি বিষয়ে সুইডেন থেকে ঘোষণা হয়। প্রখ্যাত সুইডিশ ধনকুবের ও ডিনামাইটের উদ্ভাবক আলফ্রেড নোবেলের নামে এই মহান পুরস্কার দেয়া শুরু হয় ১৯০১ সাল থেকে। তাঁর মৃত্যু হয় ১৮৯৬ সালে। তাঁর উইল অনুযায়ী পাঁচ বছর পর ১৯০১ সাল থেকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসা, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, সাহিত্য এবং শান্তিতে পুরস্কারের যাত্রা শুরু হয়েছিল আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছায়। পরে অর্থনীতি বিষয়টিও যোগ হয়। এ বছর নোবেল পুরস্কারের মোট অঙ্ক ১০ লক্ষ ডলার (প্রায় ৮ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা)। এই অর্থ তিন বিজ্ঞানীর মধ্যে ভাগ করে দেবে নোবেল কমিটি।