মীযান ডেস্ক: দক্ষিণ কোরিয়ার উচ্চ আদালত জাপানকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে জোরপূর্বক যৌন দাসত্বের শিকার মহিলাদেরকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। আদালত রায়ে বলেছে, ভুক্তভোগীদের প্রত্যেককে ১ লাখ ৫৪ হাজার ডলার করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আদালত এও বলেছে, জোরপূর্বক যৌন চাহিদা পূরণে এইসব মহিলাদেরকে অপহরণ করেছিল জাপানি সেনারা। ফলে তারা ব্যাপক ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে এবং ‘যুদ্ধোত্তর স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেনি।’
১৬ জন অভিযোগকারীর মধ্যে একজন ৯৫ বছর বয়সি লি ইয়ং-সু এদিন রায় শুনে আদালত থেকে বেরিয়ে বলেন, আমি ভুক্তভোগীদের ধন্যবাদ জানাই। সুদীর্ঘকাল আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে ন্যায় মিলল। ঐতিহাসিকরা বলছেন, বেশিরভাগ দক্ষিণ কোরিয়া ও চীন-সহ এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে আন্তত ২ লাখ নারী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-৪৫) সময় জাপানি সৈন্যদের যৌনদাসী হতে বাধ্য করা হয়েছিল।
যৌন দাসী ‘কমফর্ট উইমেন’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যৌন দাসী হিসাবে কাজ করতে যাদেরকে বাধ্য করা হয়েছিল তাদেরকে বলা হত ‘কমফোর্ট উইমেন’। তাদের মধ্যে লি ইয়ং-সু ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর। আদালতে জবানবন্দিতে তিনি বলেছেন, তখন দৈনিক গড়ে চার-পাঁচজন পুরুষের সঙ্গে তাকে যৌন সম্পর্কের জন্য জোরজবস্তি ও বাধ্য করা হত। বিশ্রামের কোন সুযোগ দেয়া হত না। ভয় দেখাতে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হত। রোমহর্ষক কাহিনি শুনিয়ে তিনি বলেন, একবার এক সৈনিক তাকে ছুরি মেরেছিল। অনেক নির্যাতন সহ্য করেও মুখ বুঁজে জাপানি হায়েনা-সেনাদের কাছে তারা নিজেদেরকে সঁপে দিতে বাধ্য হত তারা। যুদ্ধ শেষ হলে বাড়ি ফিরে গেলে পরিবারের লোকেরা তাদেরকে অচ্ছুৎ বলে গ্রহণ করেনি। তাদের আর বিয়েও হয়নি।
২০০০ সালে জাপানের সামরিক যৌন দাসত্ব সম্পর্কিত মহিলাদের আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিনি সাক্ষ্য দেন এবং পরে আমেরিকার হলোকাস্ট মিউজিয়ামে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বলেন। ২০০৭ সালে মার্কিন কংগ্রেসেও সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা ইনসাফ পেতে আন্তর্জাতিক আদালতেও আবেদন করেছেন।