২৩০০ ধনকুবেরের সাড়ে ১০ লক্ষ কোটি ঋণ মকুব, পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে স্বীকার করলেন অর্থমন্ত্রী

মীযান ডেস্ক: মোদি সরকারের সেকেন্ড ইনিংস শেষ হতে আর বড়জোর মাস পাঁচেক বাকি। এর মধ্যে জানা গেল গত পাঁচ বছরে ধনকুবের বা শিল্পপতিদের ঋণ মকুব হয়েছে ১০ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকাযার পুরোটাই কর্পোরেট লোন। চোখ কপালে তোলা এই তথ্য বিরোধী দলগুলোর নয়, খোদ কেন্দ্র সরকার এই পরিসংখ্যান জানিয়েছে। শুধু তাই নয়, ২৩০০ জন এমন ব্যবসায়ী ও শিল্পপতির ঋণ মোদি সরকার মকুব করেছে, যাঁদের প্রত্যেকের লোনের পরিমাণ ৫ কোটি বা তারবেশি। ১৪০ কোটির দেশে এই সংখ্যা হাতেগোনা বললেও ভুল বলা হবে না। কিন্তু কারা এঁরা? সেই তথ্য কিন্তু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সংসদে প্রকাশ করেননি।

তাই আম জনতার মধ্যে কৌতূহল বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিতর্কও। কারণ, একদিকে ঋণখেলাপির সংখ্যা মাথাচাড়া দিচ্ছে, আর অন্যদিকে চলছে ঋণ মকুব। কেন? লক্ষ্য একটাই, সরকারিভাবে ঋণখেলাপি অ্যাকাউন্ট কম দেখানো। তাতে ব্যাঙ্কের ব্যালান্স শিটে নন পারফর্মিং অ্যাসেট অর্থাৎ অনুৎপাদী সম্পদ কম করে দেখানো। তাই মঙ্গলবার সংসদে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ দাবি করেন, ব্যাঙ্কের আর্থিক স্বাস্থ্য ভালে হচ্ছে এবং এনপিএ কমছে। উন্নত দেশগুলির তুলনায় ভাল হচ্ছে ভারতের আর্থিক অবস্থা।

এনপিএ বা অনুৎপাদী সম্পদ কী? ঋণ নিয়ে বছরের পর বছর তা পরিশোধ না করায় ব্যাঙ্কগুলির ঘাড়ে যে আর্থিক বোঝা চাপে, সেটাই এনপিএ। এদিন অর্থমন্ত্রী দাবি করেন, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত খেলাপি ঋণের ৩৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। সরাসরি অর্থ আদায় করে কিংবা সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। নির্মলা এই আদায়কে সাফল্য হিসেবে দেখাতে চাইলেও আদতে পরিমাণটা সিন্ধুতে বিন্দুসম। কারণ, মার্চ পর্যন্ত ইচ্ছাকৃতভাবে না মেটানো ঋণের পরিমাণ ৩ লক্ষ ৫৩ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। এক বছর আগে তা ছিল ৩ লক্ষ ৪ হাজার কোটি। অর্থাৎ এক বছরে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি বেড়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকার। শুধু স্টেট ব্যাঙ্কেই মোট ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি অ্যাকাউন্টে বকেয়া প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা।

সংসদেই প্রশ্ন উঠেছে, ঋণ মকুবে কেন্দ্র সরকারের ভূমিকা কেমন? অর্থমন্ত্রী নির্মলা কিন্তু যাবতীয় দায় স্রেফ অস্বীকার করে এদিন রাজ্যসভায় তিনি বলেন, আংশিক ঋণ মকুবের সিদ্ধান্ত সরকার নেয় না। বিশেষ কমিটি থাকে কমিটি অব ক্রেডিটরস। তারাই সিদ্ধান্ত নেয়, কোন ঋণখেলাপি অ্যাকাউন্টের কত টাকা পর্যন্ত মকুবের আবেদন গ্রহণ করা যাবে। সুতরাং যারা সরকারের উপর দায় চাপাতে চাইছে, তাদের এই ভুল ধারণা দূর করা দরকার। অর্থাৎ তিনি স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন, ঋণ মকুবের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সরকারের তেমন কোন সম্পর্ক নেই। বিরোধীদের প্রশ্ন, তাহলে মোদি সরকার অতীতের সরকারের উপর দোষ চাপায় কেন যে, তারাই বহু শিল্পপতির ঋণ মকুব করেছে? এ প্রশ্নে নিরুত্তর নির্মলা।

Stay Connected

Advt.

%d bloggers like this: