মীযান ডেস্ক: ওয়েলফেয়ার পার্টির পক্ষ থেকে রাজ্যজুড়ে মদ বিরোধী বিক্ষোভ কর্মসূচির কেন্দ্রীয় সমাবেশ হয়ে গেল কলকাতায়। সোমবার দুপুরে মৌলালির রামলীলা ময়দান থেকে মিছিল বের হয়। কয়েক হাজার নারী ও পুরুষ এই বিশাল মিছিলে পা মেলান। অধিকাংশের হাতে মদ, সুদ, ঘুস, জুয়া, সাট্টা ও লটারী নিষিদ্ধ করে এবং সমাজকে এসব অভিশপ্ত উপাদান থেকে মুক্ত করতে পোস্টার, প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। তরুণী, যুবতী ও মহিলারা দলে দলে হাতে ঝাঁটা উঁচিয়ে রাজ্য থেকে মদ, জুয়া, লটারী বিদায় করতে প্রতীকি অঙ্গীকার করেন। মিছিল থেকে ঘন ঘন স্লোগান ওঠে, 'সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিবার ও সমাজ ধ্বংসকারী মদ নামক বিষের গণবণ্টন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে'। 'মদ চাই না দুধ চাই, মদ মুক্ত বাংলা চাই'। 'ছাত্র-যুব দিচ্ছে ডাক, মদ-জুয়া নিপাত যাক'। 'মা বোনেদের আহ্বান, বংলা থেকে মদ হটান'। 'সুলভ মূল্যে মদ নয়, সুলভ মূল্যে দুধ চাই'।
কলকাতা ও বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ওয়েলফেয়ার পার্টির কর্মী-সমর্থকরা পদযাত্রা করে আসেন মেয়ো রোডে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে। এখানেই জমায়েত ও প্রকাশ্য সমাবেশ হয়। উপস্থিত ছিলেন পার্টির সর্বভারতীয় সভাপতি ড. এস.কিউ.আর ইলিয়াস, প্রাক্তন সভাপতি মুজতবা ফারুক, জাতীয় সহ-সভাপতি ডা. রইসউদ্দীন, সম্পাদক সিরাজ তারিক, সাধারণ সম্পাদক সীমা মহসীন, রাজ্য সভাপতি মনসা সেন, সাধারণ সম্পাদক সারওয়ার হাসান, সহ-সভাপতি নূরুল হাসান মির্জা, আমিনাল হাসান প্রমুখ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দেশের ১১টা রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্ব।
পার্টির রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতারা তাঁদের বক্তব্যে বলেন, ওয়েলফেয়ার পার্টি আর পাঁচটা রাজনৈতিক দলের মতো নয়। এই পার্টি মূল্যবোধভিত্তিক রাজনৈতিক মতাদর্শের কথা বলে, এই পার্টি সত্যিকার অর্থে জনগণের কল্যাণ চায়, সংবিধানের আলোকে সাম্য, মৈত্রি ও ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে। ওয়েলফেয়ার পার্টি মেকি জনদরদি সেজে ভোটে জেতার লক্ষ্যে পদক্ষেপ করে না। জনগণকে প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতা দিতে চায়। সব মানুষের ইনসাফের কথা বলে। ওয়েলফেয়ার পার্টি জাতপাত, মেরুকরণ, বিভাজন ও ঘৃণা, বিদ্বেষ ছড়িয়ে হীন রাজনীতি করে না। বরং দেশকে সঠিক দিশা দেখাতে বদ্ধপরিকর ওয়েলফেয়ার পার্টি।
তাঁরা এও বলেন, মদ, জুয়া, লটারী ইত্যাদি হল শোষণের হাতিয়ার। এগুলো সমাজের কোনও উন্নয়ন বা গঠনমূলক কাজে লাগে না; বরং পরিবার ও সমাজকে ধ্বংস করে। অথচ দেশজুড়ে এসবেরই রমরমা কারবার। সরকার এগুলোকে লাইসেন্স দিয়ে বৈধতা দেয়। সব সরকার এগুলো থেকে আয় করে এবং রাজকোষ ভরায়। অথচ মদ, জুয়া, লটারী দেশের সিংহভাগ সমস্যার মূল কারণ। কিন্তু কোনও সরকার এগুলোকে বন্ধ করতে আগ্রহী নয়। দেশের মূল সমস্যা লাগামছাড়া বেকারত্ব, আর্থিক অধোগতি, অনুন্নয়ন, মূল্যবৃদ্ধি রুখতে সরকার সদর্থক পদক্ষেপ করছে না। আর এই পাহাড়প্রমাণ ব্যর্থতা ঢাকতে আম জনতাকে মদ, সুদ, ঘুস, জুয়া, লটারীর ঘূর্ণাবর্তে ঘুরপাক খাওয়াচ্ছে। দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও মদ, জুয়া, লটারীর মতো শোষণের উৎসমুখ বন্ধের পরিবর্তে খুলে আম করে দেওয়া হচ্ছে।
ডা. রইসউদ্দীন বলেন, অর্থের একটা ন্যূনতম নৈতিক দিক থাকা উচিৎ। তবেই সেটা অর্থনৈতিক পদবাচ্য হতে পারে। তাঁর কথায়, মদকে সাড়ে চোদ্দশত বছর আগে নিষিদ্ধ করেছে ইসলাম। কারণ, সমাজে সংঘটিত সব রকমের অপরাধ ও দুর্ঘটনার ৯০ শতাংশের নেপথ্য কারণ হল মদ। তিনি বলেন, জনগণের কল্যাণকামী নীতিই সরকারকে রূপায়ণ করা উচিৎ। কিন্তু সরকার রাজকোষ ভরাতে অর্থের আমদানি খাতগুলোর নৈতিক দিক দেখছে না। কোথা থেকে সরকার আয় করবে, সেই খাতগুলো জনগণকে পরিপুষ্ট ও কল্যাণ করছে কিনা, নাকি অকল্যাণ ডেকে আনছে – সরকারকে তা পর্যালোচনা করতে হবে। তা না করে সরকার অনেতিক পথে অর্থ উপার্জন করছে। এর আগে কোনও রাজনৈতিক দল এসবের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেনি, তাই দেশের সর্বত্র মদ, জুয়া, লটারীর বন্যা বয়ে যাচ্ছে। ব্যতিক্রম ওয়েলফেয়ার পার্টি। একমাত্র এই দলটাই রাজনৈতিক ভাবে মদ, জুয়া, লটারি, সুদ ও ঘুসের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি এও বলেন, গান্ধী মূর্তির পাদদেশেই চলছে এসএসসি পাস করেও চাকরী না পাওয়াদের শিক্ষিত ভাইবোনদের অনশন। দীর্ঘ এক হাজার দিন অতিক্রম করে চলছে এই শান্তিপূর্ণ গণ অবস্থান। দুদিন আগে তারা মস্তক মুণ্ডন করে প্রতিবাদের চূড়ান্ত রূপ দেখিয়েছে বলেও উল্লেখ করে তাদের পাশে, তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের লড়াইয়ে সমর্থন ব্যক্ত করেন ডা. রইসউদ্দীন।
সর্বভারতীয় সভাপতি ড. এস.কিউ.আর ইলিয়াস বলেন, সবকা সাথ সবকা বিকাশের স্লোগান দিয়ে সাড়ে ৯ বছর আগে কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি সরকার। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে সবকা সাথ নয়, কতিপয় মানুষের সাথে রয়েছে এই সরকার। হাতেগোনা কিছু লোকের বিকাশ হচ্ছে। আর সবকা বিনাশ হচ্ছে। পশ্চিমবাংলার মাটিকে তিনি প্রতিবাদ, বিপ্লব, ক্রান্তি ও ইনকিলাবের সূতিকাগার বলে অভিহিত করেন। আরও বলেন, পুঁজিপতিরা এ বিশ্বকে মানুষের বাসযোগ্য করেনি, তারা কেবল পুঁজি বিনিয়োগ করেছে নিজেদের মুনাফার জন্য। আর শোষণ করেছে মেহনতি মানুষদের। মানব সভ্যতার পর্যায়ক্রমে বিশ্বকে গড়েছে মজদুর শ্রেণির মানুষরা। তারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশ ও দশের কল্যাণ করে চলেছে। কিন্তু তারা সেই অর্থে তারা তাদের ন্যায্য প্রাপ্যটুকু পায়নি। শাসক থেকে পুঁজিপতি ও ব্যবসায়ী সবাই তাদেরকে শোষণ করেছে। আর তাদের যন্ত্রণা ভুলিয়ে দিতে সহজলভ্য করে দিয়েছে মদ। হাতে তুলে দিয়েছে সাট্টা ও লটারীর টিকিট। কিন্তু এসব বন্ধ না হলে গরিব ও পিছিয়েপড়া মানুষের তিমির কোনদিন বদলাবে না।