চার দিনে লোকসভা ও রাজ্যসভা মিলিয়ে সাসপেন্ড ৯২ সাংসদ

মীযান ডেস্ক: গত বুধবার পার্লামেন্টের অধিবেশন চলাকালে হামলা হয়। যার জেরে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় প্রথমে ১৪ জন বিরোধী দলীয় সাংসদকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এবার হট্টগোল পাকানোর অভিযোগে লোকসভা ও রাজ্যসভা মিলিয়ে সব দলের মিলিয়ে মোট ৯২জন সাংসদকে সাসপেন্ড করা হল। তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভার সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অপরূপা পোদ্দার, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, সুনীল মণ্ডল, সৌগত রায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, প্রতিমা মণ্ডল, অসিত মাল, শতাব্দী রায়কে সাসপেন্ড করেছেন স্পিকার ওম বিড়লা।

ঘটনার বিবরণে জানা গিয়েছে, লোকসভায় তখন বক্তৃতা দিচ্ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। নয়া সংসদ ভবনের নিরাপত্তার প্রশ্নে সরব হন বিরোধী দলের সাংসদরা। শুরু হয় তুমুল হই-হট্টগোল। দু’দফায় অধিবেশন মুলতুবি করে দেন স্পিকার। কিন্তু তারপরেও যখন পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, তখন সাসপেন্ড করে দেওয়া হয় বিরোধী দলের ৩৩ জন সাংসদকে। আর রাজ্যসভায়? ৪৫ জন। কদিন আগে বহিষ্কার করা হয়েছিল রাজ্যসভার তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক ওব্রায়েন সহ ১৪ জনকে। আজ সোমবার বহিষ্কার করা হল কংগ্রেসের লোকসভরা দলনেতা অধীর চৌধুরী সহ অনেককে। সব মিলিয়ে গত চারদিনে মোট ৯২জন সাংসদকে সাসপেন্ড করা হল।

এদিন অধিবেশন শুরুর পরেই পাস হয়ে যায় পোস্ট অফিস বিল। প্রতিবাদে তুমুল হট্টগোল শুরু করেন বিরোধীরা। তার জেরেই সাসপেনশনের খাঁড়া নেমে এসেছে ৩৩ সাংসদের উপরে। তালিকায় রয়েছেন তৃণমূলের ৫ সাংসদও। উল্লেখ্য, শীতকালীন অধিবেশনের শুরু থেকেই একের পর এক সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, চলতি শীতকালীন অধিবেশনে আর যোগ দিতে পারবেন না তাঁরা।

সাসপেন্ড হওয়ার পর সংবাদমাধ্যমের সামনে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সাংসদরা। তাঁদের মতে, সংখ্যাগরিষ্ঠের বাহুবল কাজে লাগিয়ে বিরোধীদের কণ্ঠস্বর দমিয়ে দিতে চাইছে মোদি সরকার। বিরোধীদের উপর বুলডোজার চালানো হচ্ছে। এই বুলডোজার পরোক্ষে দেশের সংবিধান ও গণতন্ত্রের ওপরেও।

আজ, সোমবার লোকসভায় অধীর চৌধুরী সহ সাসপেন্ড করা হল বিরোধী দলের মোট ৩৩ জন সাংসদকে। আগামী ২২ তারিখ পর্যন্ত সংসদে প্রবেশ করতে পারবেন না তাঁরা। এই তালিকায় রয়েছেন তৃণমূলের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অপরূপা পোদ্দার, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, শতাব্দী রায়, সৌগত রায়, প্রতিমা মণ্ডল, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, সুনীল কুমার মণ্ডল, অসিতকুমার মাল। ডিএমকের এ রাজা, দয়ানিধি মারান, গণেশন সেলভাম, সিএন আন্নাদুরাই, টি সামান্থা, এস এস প্ল্যানিমানিকম, সেল্লা পেরুমল রামালিঙ্গম, টি বালু, ডাঃ কে ভেরাস্বামী। কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী, অ্যান্থনি, কে মুরলিধরণ, সুরেশ কোদিকুন্নিল, ডাঃ অমর সিং, থিরুনাভুখরেশ্বর, গৌরব গগৈ, রাজমোহন, ডাঃ কে জয়কুমার, আবদুল খালেক। আই ইউ এম এল-এর ইটি মহঃ বসির, কে নাভাসকানি। জেডিইউয়ের কৌশলেন্দ্র কুমার। আরএসপির এন.কে প্রেমাচন্দ্রন।

দিল্লিতে মমতা কী বললেন?

মমতা ব্যানার্জী এখন দিল্লিতে রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এমন নয় যে, প্রত্যেককে সাসপেন্ড করতে হবে। ওরা যদি মনে করে হাউস সবার উপরে, তাহলে ভয় কীসের? যদি সব সদস্যকে সাসপেন্ড করে দেয়, তাহলে তাঁরা কীভাবে আওয়াজ তুলবে? তিনটে বিল পাস করাতে চাইছে। গণতন্ত্রে একটা পদ্ধতি আছে। জনগণের হয়ে কে কথা বলবে? জনগণের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে। পুরো হাউসটাকে আগে সাসপেন্ড করে দিক। হাউস চালানোর কোনও নৈতিক অধিকারই নেই.. রঙ্গব্যঙ্গ করবে’।

৩৩ জন সাংসদ সাসপেন্ডের ঘটনায় প্রতিক্রিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, যা ঘটছে তা হওয়া উচিত নয়। আমি ভাগ্যবান যে, আমি এখন সাংসদ নই। এ তো দেখছি পুরো পার্লামেন্ট সাসপেন্ড হওয়ার মতো অবস্থা। দেশে স্বৈরতন্ত্র চলছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রসঙ্গত, বিরোধী জোট ইন্ডিয়া-র বৈঠক আগামীকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার। তার আগেই নয়াদিল্লি পৌঁছে গিয়েছেন মমতা। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা আগেও হয়েছে। আগামীকাল তা আরও বিস্তারিত ভাবে হতে পারে। এই কাজ খুব সহজ নয়। তবে খুব দেরিও হয়ে যায়নি।

Stay Connected

Advt.

%d bloggers like this: