মীযান ডেস্ক: মানুষের চেহারা সাধারণত দু ধরনের হয়। রোগা এবং মোটা। উভয় প্রকার মানুষ একে অন্যের ওপর হিংসা বা ঈর্ষায় ভোগে। বিপরীত চেহারার মানুষ ভিন্ন গড়নের মানুষকে প্রতিদ্বন্দ্বী না ভাবলেও, এটা মনে করে যে, উনিই হয়ত সুখে আছেন বা ভাল আছেন। অথচ যাকে দেখে তিনি এই আফসোস করছেন, সেই ভদ্রলোকও কিন্তু ঠিকই একই রকম ভাবেন। অর্থাৎ নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস, ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস। যাহোক, এই পরিস্থিতিতে পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বের মানচিত্র ঢেকে যাচ্ছে গোলগাল মুখে। তার মানে হল স্থূলতা যেন মহামারীর আকার নিয়েছে।
বর্তমানে সারা বিশ্বের জনসংখ্যা ৮০০ কোটিরও বেশি। তার মধ্যে ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ স্থূল বা মোটা। অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যার নিরিখে প্রতি আটজনে একজন স্থূলকায়। দৈত্যাকার চেহারা বা অতিরিক্ত ওজনের কারণে অনেক গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং গবেষকদের আন্তর্জাতিক সমীক্ষা এই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানাচ্ছে। এই পরিসংখ্যান অবশ্য সদ্য সমাপ্ত ২০২৩ সালের।
অনেক নিম্ন ও মধ্যম আয়ের যেসব দেশের মানুষরা অপুষ্টিতে ভুগত, এখন সেসব দেশ-সহ বেশির ভাগ দেশে কম ওজনের চেয়ে স্থূলতা সাধারণ ব্যাপার হয়ে উঠেছে। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিজ্ঞান বিষয়ক ম্যাগাজিন দ্য ল্যানসেটে গতকাল শুক্রবার এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক ও গবেষণা তথা লন্ডন ইম্পেরিয়াল কলেজের অধ্যাপক মাজিদ ইজ্জতি বলেন, স্থূলতা নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষের সংখ্যা চমকে দেওয়ার মতো। ৪ মার্চ বিশ্ব স্থূলতা দিবসকে সামনে রেখে এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৯০ সালে বিশ্বে প্রাপ্তবয়স্ক, কিশোর ও শিশুদের মধ্যে ২২ কোটি ৬০ লাখ স্থূলতার সমস্যায় ভুগছিলেন। ২০২২-২৩ সালে এই সংখ্যা অন্তত ১০৩ কোটি ৮০ লাখ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু-র পুষ্টিবিষয়ক প্রধান ফ্রান্সেসকো ব্রানকা বলেন, ‘অতীতে আমরা মনে করতাম, স্থূলতার সমস্যা কেবল ধনী দেশগুলোর। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, স্থূলতা বিশ্বের অধিকাংশ দেশের একটি কমন সমস্যা।’ ল্যানসেটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে স্থূলতার হার দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। আর ৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে এই হার চার গুণের বেশি বেড়েছে। একই সময়ে কম ওজনের রোগাপাতলা ছেলে-মেয়ে ও প্রাপ্তবয়স্কদের সংখ্যা যথাক্রমে এক-পঞ্চমাংশ, এক-তৃতীয়াংশ ও অর্ধেক কমে গেছে।
অধ্যাপক ইজ্জতি বলেন, খুব কম ওজন শিশুদের বিকাশের ক্ষেত্রে বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। কিন্তু স্থূলতা অকালমৃত্যুর কারণ হতে পারে। ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, কিডনির রোগ-সহ বিভিন্ন ধরনের গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা বা চ্যালেঞ্জ দেখা দিতে পারে। ক্যারিবিয়ান, মধ্যপ্রাচ্যের কিছু অংশসহ কিছু নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে এই দুই ধরনের সমস্যাই রয়েছে বলে জানান তিনি। এও জানান, পাঁচ বছরের বেশি বয়সী শিশু-কিশোরদের প্রায় ৭৭ কোটি ৪০ লাখ স্থূল।