মীযান ডেস্ক: গতবছর ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী নির্বিচার হামলা তথা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। পরিণতিতে গত পাঁচ মাসে এক হাজারেরও বেশি মসজিদ ধ্বংস হয়েছে। গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে ১৯৫২ সালে নির্মিত আল-হুদা নামে এক প্রাচীন মসজিদকে টার্গেট করে এবং ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। ওই এলাকার বৃহত্তম মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল এই মসজিদটি।
এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদে দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ একসাথে নামায আদায় করতে পারতেন। এই মসজিদে বড় একটি ইসলামী লাইব্রেরী বা গ্রন্থাগারও ছিল। হামলায় প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া এই মসজিদের ভগ্নপ্রায় অংশে অল্পসংখ্যক মুসল্লি এখন নামায আদায় করেন। এমতাবস্থায় ফিলিস্তিনি মুসলমানরা পবিত্র রমযান মাসের জন্য প্রস্তুত। সেখানে আজ সোমবার শুরু হয়েছে প্রথম রোযা। আজ ইফতারের কিছু পর তারা আল-হুদা মসজিদে তারাবীহর নামাযের জন্য জমায়েত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। স্থানীয়দের আশা, যুদ্ধের অবসান হলে মসজিদটি পুনর্নির্মাণ করা হবে। রাফাহর ওই এলাকায় এটাই ছিল কেন্দ্রীয় মসজিদ; যেখানে আশপাশের অনেক এলাকা থেকে মুসল্লিরা নামায আদায়ের জন্য জমায়েত হতেন।
অন্যদিকে উত্তর গাজায় অনাহারে নারী ও শিশু সহ এ পর্যন্ত মোট ২৫ জন শহিদ হয়েছেন। গত পাঁচ মাসে গাজা উপত্যকা সহ সমগ্র ফিলিস্তিনে ৩১ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার পাশবিক হামলায় ২৪ লাখ বাসিন্দার গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। অর্ধাহার-অনাহারে অগণিত মানুষ দিনাতিপাত করছেন। ইসরায়েলি হামলা থেকে বাঁচতে উপত্যকার দক্ষিণের রাফাহ শহরে বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এরই মাঝে শুরু হয়ে গেছে রোযা। এই পবিত্র মাসেও এই শহরটিতে ইসরায়েল হামলা বাড়াতে পারে বলে জানিয়েছে। তবে রাফাহ শহরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের বিরোধিতা করেছে আমেরিকা।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শনিবার মন্তব্য করেছেন গাজায় যুদ্ধ ঘিরে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দৃষ্টিভঙ্গি ‘ইসরায়েলকে সহায়তার চেয়ে ক্ষতিই বেশি করছে।’ এদিন এক সাক্ষাৎকারে অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র নেতানিয়াহুকে নিয়ে এহেন মন্তব্য করেছেন তিনি।
রোযার শুরুতে ৪৫ দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা ভেস্তে গেছে। এদিকে পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস বা আল আকসা মসজিদ ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জারি রেখেছে ইসরায়েলি পুলিশ। মসজিদ কমপ্লেক্সের প্রত্যেক গেটে কন্ট্রোল অ্যাক্সেস চালু করা হয়েছে। ১৯৬৭ সালে যুদ্ধে ইসরায়েল এই অংশ-সহ সমগ্র পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয়। তাই এই স্থানটি ফিলিস্তিনিদের কাছে সংগ্রামের মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠেছে।