কেন ইসরাইলে হামলা? রাষ্ট্রসংঘকে জানাল ইরান, আমেরিকাকে সতর্ক করেছে ইরান

বিশেষ প্রতিবেদন:

ইসরায়েলে হামলার কারণ জানিয়েছেন রাষ্ট্রসংঘে নিযুক্ত ইরানের দূত। নিরাপত্তা পরিষদে নিযুক্ত ইরানি দূত রবিবার বলেছেন, তাঁর দেশের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। হামলার মধ্য দিয়ে ইরান সেই অধিকারই রক্ষা করেছে। ইরানি দূত আমির সায়্যিদ ইরাভানি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্রসংঘ ও নিরাপত্তা পরিষদ। ১ এপ্রিলে সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলের হামলার উল্লেখ করে এ কথা বলে তিনি জানান, পাল্টা জবাব দেওয়া ছাড়া তেহরানের হাতে বিকল্প ছিল না। যাতে ইরানের জ্যেষ্ঠ কয়েকজন সামরিক কমান্ডার নিহত হন। তিনি আরও বলেন, ‘ইরান উত্তেজনা বা যুদ্ধ চায় না।’ তবে যেকোনো হুমকি বা হামলার জবাব দেবে ইরান।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ভেদ করেছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র, আঘাত হেনেছে দুই বিমানঘাঁটিতে

শনিবার ১৩ এপ্রিল ইসরায়েলে রাতভর তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। তার মধ্যে অন্তত নয়টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দুটি বিমানঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে। এ ক্ষেত্রে ইসরায়েলের বিস্তৃত আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এবং ওই অঞ্চলে দেশটির মিত্রশক্তিগুলোর ছোড়া গুলি এড়িয়ে লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছাতে হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের নেভাটিম বিমানঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে। এতে সেখানে থাকা ইসরায়েলের একটি রসদবাহী উড়োজাহাজ, একটি রানওয়ে এবং একটি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর চারটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে ইসরায়েলের নেগেভ বিমানঘাঁটিতে।
ইসরায়েল এই প্রথম অ্যারো-৩ নামে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহার করেছে। আমেরিকা ও ইসরায়েলের যৌথ উদ্যোগে তৈরি এই অ্যারো-৩ বিশেষত হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আকাশেই ধ্বংস করার জন্য তৈরি হয়েছে। এরপরও নয়টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানাটা দেশটির জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই অ্যারো-৩ এর কার্যকারিতা নিয়ে এখন ময়নাতদন্ত চলছে। যদিও ইসরায়েল প্রকাশ্যে এই ব্যবস্থা সফল হওয়ার কথা বলছেন।
উল্লেখ্য, শনিবার রাতে ইরান থেকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে তিন শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছোড়া হয়। এর ৯৯ শতাংশই আকাশে থাকতে ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। অবশ্য ইরানি হামলায় নেভাটিম বিমানঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে তারা। 
ইরান বলেছে, চলতি মাসের শুরুতে সিরিয়ায় ইরানের কূটনৈতিক কম্পাউন্ডে প্রাণঘাতী হামলার বদলা হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে। তেহরান এও বলেছে যে, ইসরায়েল যদি পাল্টা হামলা চালায়, তাহলে আরও বড় পরিসরে হামলার মধ্য দিয়ে তার জবাব দেওয়া হবে।

সর্বশেষ যা জানা গেল

ইরানের ইতিহাসে এই প্রথমবার দেশটির ভূমি থেকে সরাসরি ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী বলেছে, হামলায় তিন শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই আকাশে ধ্বংস করা হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ইরানের হামলা নিয়ে আলোচনার জন্য তাঁর দেশের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার বৈঠক করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ইরানের এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য বাইডেন ধনী দেশগুলোর জোট জি-৭–এর নেতাদের সঙ্গে একটি অনলাইন বৈঠক করেছেন। হোয়াইট হাউস বলেছে, মধ্যপ্রাচ্য সংকট আরও বাড়ুক, তা চায় না আমেরিকা। তবে ইজরাইলকে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে ওয়াশিংটন।
ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মাইকেল বলেছেন, জি-৭ সর্বসম্মতিক্রমে ইরানের হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং সব পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন। ব্রিটিশ বিদেশমন্ত্রী তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, তিনি ইরানের বিদেশমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন এবং জোরালোভাবে ইসরায়েলে হামলার সমালোচনা করেছেন।

ব্রিটেন, জার্মানি ও ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে ইরান

ব্রিটেন, জার্মানি ও ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে ইরান। রবিবার ইরানের বিদেশ মন্ত্রক তাঁদের তলব করেন। পরে ইরানে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত সিমন শেরক্লিফ, জার্মানির রাষ্ট্রদূত হানস উডো মুজেল ও ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস হোস সেখানে হাজির হন। তেহরান প্রশাসন বলেছে, রাষ্ট্রসংঘ সনদের ৫১ অনুচ্ছেদের আওতায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনী ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটিগুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে।
ইউরোপের তিন দেশের ‘দ্বিমুখী আচরণের’ সমালোচনা করে ইরান বলেছে, যেকোনো অবৈধ শক্তি প্রয়োগের বিরুদ্ধে ইরান দৃঢ়তার সঙ্গে তার সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও জাতীয় স্বার্থকে রক্ষা করবে।

পরবর্তী পরিকল্পনাও জানাল ইরান

ইসরায়েলে যেসব লক্ষ্যে হামলা চালানো হয়েছে, তার সব কটিই পূরণ হয়েছে বলে দাবি করেছেন ইরানের সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ মোহাম্মদ বাগেরি বলেছেন, ইসরায়েল যদি এ হামলার জবাব না দেয়, তাহলে দেশটিতে আর কোনো হামলার পরিকল্পনা নেই তেহরানের।
বাগেরি আরও বলেন, শনিবার কোনো বেসামরিক ও অর্থনৈতিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়নি। শুধু সামরিক স্থাপনাগুলো টার্গেট করা হয়েছিল। বিশেষ করে হেরমন পর্বতে ইসরায়েলের একটি গোয়েন্দা ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে। দামেস্ক কনস্যুলেটে হামলায় ওই ঘাঁটি জড়িত। নেগেভ মরুভূমিতে ইসরায়েলের নেভাতিম বিমানঘাঁটিতেও হামলা হয়েছে। সেখান থেকে ইসরায়েলের যুদ্ধবিমানগুলো কনস্যুলেটে হামলা চালিয়েছিল।  

আমেরিকাকে সতর্ক করেছে ইরান

মোহাম্মদ বাগেরির বক্তব্যের বরাতে তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েল চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করায় হামলা চালিয়েছে ইরান। বাগেরি এও বলেন, সুইজারল্যান্ডের মাধ্যমে আমেরিকার কাছে একটি বার্তা পাঠিয়েছে তেহরান। তাতে বলা হয়েছে, আমেরিকা যদি ‘এই অঞ্চলে নিজেদের ঘাঁটি ও সামরিক স্থাপনার মাধ্যমে জায়নবাদীদের আগ্রাসী পদক্ষেপের সঙ্গে জড়ায়, তাহলে এ অঞ্চলে মার্কিন ঘাঁটি, স্থাপনা ও কর্মকর্তাদের কোনো নিরাপত্তা থাকবে না।’

Stay Connected

Advt.

%d bloggers like this: