মীযান ডেস্ক: নির্বাচনী প্রচারে রাজপুত-ক্ষত্রিয়দের অপমান করেছেন রাজকোটের বিজেপি প্রার্থী তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পুরুষোত্তম রুপালা। তার জেরে লোকসভা ভোটের আগে স্বয়ং মোদি-শাহের রাজ্য গুজরাতে চূড়ান্ত অস্বস্তিতে বিজেপি। রাজপুত-ক্ষত্রিয়দের রোষ ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে হিন্দুত্বের ল্যাবরেটরি বলে কথিত গুজরাতে। সেখান থেকেই দেওয়া হচ্ছে বিজেপিকে উৎখাতের জোরালো ডাক। গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে রীতিমতো বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে এই দুই সম্প্রদায়। রুপালার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রথম দানা বেঁধেছিল সৌরাষ্ট্রে। কিন্তু এবার মোদি-শাহের রাতের ঘুম হারাম করে বিক্ষোভ আছড়ে পড়েছে রাজ্যের দক্ষিণেও। সুরাত জেলার বারদোলিতে কেদারেশ্বর মহাদেব মন্দিরের ময়দানে রবিবার বিশাল ‘অস্মিতা মহাসম্মেলন’ করেছে ক্ষত্রিয়রা। সেখানেই শোনা গিয়েছে ‘বিজেপি হটাও’ হুঙ্কার। গুজরাতে জনসংখ্যার ১৭ শতাংশ রাজপুত-ক্ষত্রিয়। রাজ্যের ২৫টি আসনের (সুরাত বাদে) মধ্যে ১০টিতেই তারা এককাট্টা হলে মহা ফ্যাসাদে পড়তে পারে গেরুয়া শিবির। কিদিন আগে রাজকোটে এক নির্বাচনী সভায় রুপালা বলেন, ‘ইংরেজ জমানায় নিজেদের স্বার্থে আপস করত রাজপুত ও ক্ষত্রিয় শাসকরা। ব্রিটিশদের সঙ্গে বাণিজ্যিক ও বৈবাহিক সম্পর্কও রেখে চলত।’ এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই উভয় সম্প্রদায় ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয়। সৌরাষ্ট্র ও কচ্ছ অঞ্চলে ক্ষত্রিয় সমাজের লোকজন প্রতিবাদ বিক্ষোভে শামিল হয়। গুজরাতের গণ্ডি ছাড়িয়ে তার প্রভাব পড়ে উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থানের মতো প্রতিবেশি ডাবল ইঞ্জিন রাজ্যগুলিতেও। আন্দোলনকারীরা রুপালার প্রার্থী পদ বাতিলের দাবিতে গর্জে ওঠে। কিন্তু সেই দাবি মানেনি বিজেপি। বরং রুপালা-সহ বিভিন্ন নেতাকে দিয়ে এই ইস্যুতে একাধিকবার ক্ষমা চাইয়ে ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা চলে। তাতেই ক্ষত্রিয়-রাজপুতদের অসন্তোষের তির ঘুরে গিয়েছে বিজেপির দিকে। ‘অস্মিতা মহাসম্মেলনে’ রাজপুত সঙ্কল্প সমিতির মুখপাত্র করনসিং শাভদা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘আমরা কোনওভাবেই বিজেপিকে জিততে দেব না। ওরা আমাদের মহিলাদের অসম্মান করেছে। আমাদের মর্যাদায় আঘাত দিলে কাউকে রেয়াত করা হবে না।’ আগামী পরশু ৭ মে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার শপথও নেওয়া হয়েছে ওই প্রতিবাদী সভায়। সুরাত, ভারুচ, ভালসাদ, নভসারির মতো দক্ষিণ গুজরাতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার ক্ষত্রিয়-রাজপুত সেখানে জমায়েত হন। গুজরাত বিজেপির সভাপতি তথা নভসারি আসনের প্রার্থী সি.আর পাতিল অবশ্য ক্ষোভ প্রশমণের চেষ্টা কম করেননি। এমনকী ক্ষত্রিয় নেতাদের সমর্থনের দাবি করে আন্দোলন রুখতেও তৎপর হন। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। তাঁর বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে শাভদার কটাক্ষ, ‘রুপালার মন্তব্যের কারণেই এককাট্টা হয়েছে রাজপুত ক্ষত্রিয় সমাজ। আমাদের অস্ত্র তলোয়ার নয়, ভোট।’ শুধু তা-ই নয়, ক্ষত্রিয়-রাজপুতদের প্রতি বিজেপি সরকারের বঞ্চনা ও উদাসীনতার অভিযোগও সামনে এসেছে। গুজরাত রাজপুত সমাজ ইনস্টিটিউশনসের মহিলা সভাপতি তৃপ্তিবা রাওয়াল বলেছেন, ‘এই লড়াই আমাদের মান, মর্যাদা রক্ষার লড়াই। সেইসঙ্গে গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই। ভোটাধিকার ব্যবহার করেই লড়াই চালাব।’