মীযান ডেস্ক: জামাআতে ইসলামী হিন্দের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হয়ে গেল গত ২০-২২ এপ্রিল। তিনদিন ধরে চলা মিটিংয়ে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির পাশাপাশি বৈশ্বিক প্রেক্ষিত নিয়েও আলোচনা পর্যালোচনা হয় এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জামাআত নেতৃত্বের তরফে উদ্বেগ প্রকাশ বলা হয়, দেশজুড়ে দ্রুত পটপরিবর্তন ঘটছে এবং সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ক্রমাবনতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। সমাজে ঘৃণা-বিদ্বেষ ক্রমবর্ধমান, ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার ও তার পরিসর সংকুচিত হচ্ছে, সংখ্যালঘু বিশেষত মুসলিমদের ওপর অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতার ঘটনা, মুসলিমদের ইবাদাতগাহে পর্যন্ত নিরাপত্তার অভাববোধ হচ্ছে, ব্যক্তি স্বার্থের নেপথ্যে রাজনীতি এবং রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের অনুপ্রবেশ, জাতীয় রাজনীতিতে পুঁজি ও সম্পদের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা এবং সর্বোপরি রাজনীতির সংস্পর্শে থাকা ব্যক্তিদের অপরাধ প্রবণতা বেড়েই চলেছে। এসব বিষয়কে গভীর উদ্বেগজনক বলে অভিহিত করা হয়েছে এবং স্পষ্ট বলা হয়েছে, এসব অশুভ প্রবণতা ক্রমাগত দেশকে দুর্বল করে তুলছে।
একই সঙ্গে দেশজুড়ে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের দিকে স্পষ্ট ইঙ্গিত করে বলেছে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের স্বশাসনের পরিধি হ্রাস এবং বিরোধী কণ্ঠস্বর ও ভিন্নমত দমনের মতো বিষয়গুলিতে জামাআতে ইসলামী হিন্দের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদ তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। ধন-সম্পদের পুঞ্জিকরণ, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং বেকারত্ব-সহ আর্থিক বৈষম্য, বিশেষত যুব সমাজ ও কৃষকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে। এতে দেশের কল্যাণ ও উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। তিনদিনের বৈঠকে চলমান লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে সুষ্ঠু ভোট প্রক্রিয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেওয়া হয়। ভোট প্রচারে ঘৃণা-বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রদান এবং বিভাজন ও মেরুকরণের প্রচেষ্টার নিন্দা করেন জামাআত নেতৃত্ব। পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে ভোট চলাকালে ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা এবং গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে চলা সুনিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের নিরিখে জামাআতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদ মনে করছে, এই মুহূর্তে বিশ্ব-শান্তি হুমকি ও চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি আগ্রাসন, ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে একে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে অমানবিক, পাশবিক ও জঘন্য অধ্যায় বলে নিন্দা করেছেন তাঁরা। দীর্ঘ ৭ মাস ধরে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ধিক্কার ও প্রতিবাদ-বিক্ষোভের বিষয়টি জামাআত নেতারা তুলে ধরেন এবং যুদ্ধবাজ ইসরাইল যে পশ্চিমাদের কাছ থেকে সাহায্য ও সমর্থন পেয়ে চলেছে, তার তীব্র সমালোচনা করেন। পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলোর গাফিলতি বা উদাসীনতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন তাঁরা।
জামাআতে ইসলামী এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছে এবং ইসরায়েলের প্রতি পশ্চিমাদের সমর্থন অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানিয়েছে। গাজায় গণহত্যা বন্ধ করে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফেরাতে আন্তর্জাতিক মহলকে এই বৈঠক থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। ইসরায়েলি যুদ্ধাপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি সুনিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ করার আহ্বানও জানিয়েছে জামাআত।
কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের এই বৈঠকে জোর দিয়ে বলা হয়, ইসরাইল ফিলিস্তিনের এই সংঘাত সংঘর্ষ দুই দেশেই সীমাবদ্ধ থাকেনি; বরং সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য এর মাশুল দিচ্ছে। বিশ্বব্যাপী এর পরোক্ষ প্রভাব পড়েছে এবং পরিণতিতে সর্বত্র অস্থিরতা, অচলাবস্থা ও আর্থিক সংকট পরিলক্ষিত হচ্ছে। অগত্যা স্থায়ী যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে বৈশ্বিক শান্তি পুনরুদ্ধারে রাষ্ট্রসংঘ এবং আন্তর্জাতিক মহলকে আরও তৎপর ও মানবিক হতে আহ্বান জানিয়েছে জামাআতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদ। এক্ষেত্রে একইসঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক প্রভাব বলয়কে ইতিবাচক পন্থায় কাজে লাগাতে ভারত সরকারকেও আহ্বান জানিয়েছে।