মীযান ডেস্ক: সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে, এক্সিট পোলের মুখে ঝামা ঘষে দিয়ে রাজ্যে ঘাসফুল শিবিরের নীল-সাদা রঙই বজায় থাকল। দেশে বিজেপির আসন ৩০৩ থেকে ৬৩টার মতো কমে হল ২৪০। আর রাজ্যে গেরুয়া শিবিরের ৬টি আসন কমে হল ১২। যদিও এবার বাংলায় লাগাতার ২২দফা নির্বাচনী সভা-সমাবেশ করেছিলেন মোদি।
অন্যদিকে বিরোধীদের মহাজোট ‘ইন্ডিয়া’ও কিন্তু খুব বেশি দূরে নেই। তাদের দখলে ২৩৪টি আসন। এক দশক পর অনেকখানি ফর্মে ফিরেছে শতাব্দী প্রাচীন কংগ্রেস দলও। এবার তারা প্রায় ১০০ আসন পেয়েছে। সুতরাং সরকার যে বা যারাই গড়ুক, বিরোধী লবি জোরদার হবে এবার। আর সর্বোপরি মোদির দল বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় মূলত নীতিশ ও নাইডুর ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকছে। সুতরাং নিঃসন্দেহে বলা যায় সংবিধান বদল কিংবা হিন্দু রাষ্ট্র গড়া অধরাই রয়ে গেল।
এককথায় বলা যায়, এবার মোদির ম্যাজিক ফিকে হয়ে গেছে। উল্টে ম্যাজিসিয়ান মোদিকেই জাদু দেখিয়ে ঘোল খাইয়ে ছেড়েছে দেশবাসী। মোদি-শাহদের টার্গেট ও উচ্চাশাকে ভারতবাসী ফানুসের মতো উড়িয়ে দিয়েছে। একইসঙ্গে অগ্নিপরীক্ষায় হেরে ভূত হয়ে গিয়েছে বিভিন্ন পেড নিউজ চ্যানেলের এক্সিট পোল। হাস্যকর হয়ে গিয়েছে গদি মিডিয়া। হিন্দি বলয়ের পার্টির পরিচয় থেকে বেরিয়ে ভারতের মানচিত্র দখলের আগ্রাসী স্বপ্ন দেখেছিলেন মোদি।
বলা হয়েছিল দাক্ষিণাত্য জয় হবে এবার। সেরকম তো হলই না, উল্টে নিজেদের দুর্গ আর্যাবর্তের একের পর এক রাজ্যে রামধাক্কা খেতে হয়েছে বিজেপিকে। রাজস্থান থেকে হরিয়ানা – সর্বত্র আসন হারিয়েছে মোদির টিম। সবথেকে চমকপ্রদ ফল হয়েছে গোবলয়ের প্রধান রাজ্য উত্তরপ্রদেশে। এই রাজ্যে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি এবং কংগ্রেসের জোট ম্যাজিক দেখিয়েছে। মুখ থুবড়ে পড়েছে যোগী-মোদি ডাবল ইঞ্জিনের মিথ।
এখন বেশ কিছু ছোট খাট ও মাঝারি মাপের শরিকদের নিয়ে যৌথ সংসার পাততে হবে মোদিকে। যদিও মোদির নীতি হল এক দেশ এক দল, এক দেশ এক সরকার ইত্যাদি। গতবারও এনডিএ জোট ছিল। কিন্তু শরিকদের উপযুক্ত সম্মান অথবা পাত্তা দেননি মোদি। কারণ, সেবার মোদির দল একাই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরীষ্ঠ ছিল। বিজেপির আসন ছিল ৩০৩। এবার এক ধাক্কায় নেমে গিয়েছে ২৪৩-এ। সুতরাং একক শক্তিতে সরকার আর এবার হচ্ছে না। হবে আক্ষরিক অর্থেই এনডিএ সরকার। ১০ বছরের মধ্যেই ব্র্যান্ড মোদি উধাও। মোদির গ্যারান্টি, ম্যাজিক কিছুই কাজে দেয়নি। তাই জোড়াতালি দিয়ে মিলিজুলি সরকার গড়লে সর্বক্ষণ শরিকদের দয়া-দাক্ষিণ্যের উপর নির্ভর করতে হবে একনায়কতন্ত্রী মোদিকে। যেটা তার ধাতে সয় না।
তবুও সময়ের দাবি মেনে শরিক নিয়েই ঘর বাঁধতে হতে পারে মোদিকে। সেক্ষেত্রে এনডিএ সরকারের দুই ক্রাচ হতে চলেছে নীতীশ কুমারের সংযুক্ত জনতা দল এবং চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলুগু দেশম। এই দুই দলের সমর্থন ছাড়া নরেন্দ্র মোদির সম্ভাব্য তৃতীয় সরকার পঙ্গু। এরই মধ্যে কিন্তু বিজেপির সংসারে গোপনে হানা দেওয়া শুরু হয়েছে। নীতীশ ও নাইডুর সঙ্গে যোগাযোগ করছে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের কারিগররা। গরিষ্ঠতা হাইজ্যাক হয়ে সরকার হাতছাড়া হওয়ার আতঙ্কে প্রধানমন্ত্রী মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মঙ্গলবার দুপুরেই নাইডু ও নীতীশকে ফোন করে প্রায় আকুল হয়ে তাঁদের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করেন। কারণ তাঁরা জানেন, যে কোনও সময় পটপরিবর্তন হতে পারে। ইতিমধ্যেই চন্দ্রবাবুকে নাইডুকে বার্তা পাঠানো হয়েছে, অন্ধ্রপ্রদেশকে ইন্ডিয়া জোট সরকার বিশেষ প্যাকেজ ও স্পেশাল রাজ্যের মর্যাদা দেবে। তাহলে অন্ধ্র সরকার কেন্দ্র থেকে অনেক বেশি অনুদান ও সাহায্য পাবে। আবার নীতীশ কুমারকে দেওয়া হচ্ছে উপ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অফার।
কারণ, এই দুই দলের হাতে রয়েছে ২৮টি আসন, যা এনডিএ এবং ইন্ডিয়া দুই শিবিরের কাছেই মহামূল্যবান। এদিকে পাকাপোক্ত মহাজোট করে মহারাষ্ট্রে বিজেপির দল-ভাঙানো পলিটিক্স মহাধাক্কা খেয়েছে উদ্ধব থ্যাকারে, শারদ পাওয়ার ও কংগ্রেসের কাছে।