‘নৈতিকতাই স্বাধীনতার ভিত্তি’ ক্যাম্পেইন উপলক্ষে কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন

মীযান ডেস্ক: ”নৈতিকতাই স্বাধীনতার ভিত্তি” – এই শিরোনামে দেশজুড়ে এক অভিনব ক্যাম্পেইন চালাবে জামাআতে ইসলামী হিন্দ। আগামী কাল ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত সারা মাসব্যাপী সব রাজ্যে এই সময়োচিত প্রচারাভিযান চলবে। সেই উপলক্ষে শনিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জামাআতের সর্বভারতীয় সেক্রেটারি মোসাম্মৎ রহমাতুন্নেসা, রাজ্য সভাপতি ডা. মসিহুর রহমান, রাজ্য সেক্রেটারি মশিউর রহমান, রাজ্য মহিলা সম্পাদক মঞ্জুরা খাতুন, বিভাগীয় রাজ্য সেক্রেটারি শা’দাব মাসুম, ড. সাবা তাজ প্রমুখ।

জামাআতের রাজ্য সভাপতি ডা. মসিহুর রহমান বলেন, স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। আর নৈতিকতা তার গৌরবময় সম্পদ। নৈতিকতা বিবর্জিত স্বাধীনতা মানব সমাজকে তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম হবে না। স্বাধীনতা মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ঠিকই; কিন্তু অবাধ স্বাধীনতা এইসব ক্ষেত্রগুলিতে বিপর্যয় ডেকে এনেছে। মানবাধিকারের ঘোষণাপত্রে ‘স্বাধীনতা’র যে সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অন্যের জন্য ক্ষতিকর না হয়, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমা সভ্যতা বস্তুবাদকে উৎসাহিত করেছে। নীতি-নৈতিকতাকে লঘু করে ছেড়েছে। অনৈতিকতার অন্ধ অনুসরণ স্বাধীনতার প্রকৃত ধারণাকে কালিমালিপ্ত করেছে। তাই মানুষের বিবেককে জাগ্রত করতে হবে এবং মানুষের চেতনা ও নৈতিক জাগরণ ঘটাতে এই ধরনের সময়োচিত ক্যাম্পেইন কর্মসূচি নিয়েছে জামাআতে ইসলামী হিন্দ।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান পুঁজিবাদী সভ্যতা উদারনৈতিকতা, অবাধ স্বাধীনতা ও মুক্তমনার নামে মনুষ্য সমাজকে বিভ্রান্তিতে ফেলছে। যার কু-প্রভাব পড়ছে শালীনতা, নৈতিক মূল্যবোধ, পারিবারিক ব্যবস্থাপনা ও দাম্পত্য জীবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে। পরিবার নারীদের জন্য সুরক্ষিত দুর্গের ন্যায়। বিবাহের মাধ্যমে এই পবিত্র বন্ধন রচিত হয়। কিন্তু নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অভাবে বল্গাহীন স্বাধীনতার বদৌলতে এখন বিবাহ বহির্ভূত অবাধ যৌনতার প্রতি ঝোঁক-প্রবণতা বাড়ছে। যা নৈতিকতার সংকট, মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় এবং সর্বোপরি মানব সভ্যতাকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাঁর কথায়, এসব অভিশাপ থেকে বাঁচার একমাত্র পথ হল সৃষ্টিকর্তার তরফে দেওয়া ঐশী পথনির্দেশনার আলোকে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে পরিবার ও সমাজ গড়তে হবে। এই ক্যাম্পেইনে সমাজের সব স্তরের মানুষকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।

কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোসাম্মৎ রহমাতুন্নেসা বলেন, আমাদের দেশ ৭৮ বছর স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু ব্যক্তি স্বাধীনতা ও অধিকার এতটা খারাপ জায়গায় চলে গেছে যে, প্রতি ১৬ মিনিটে একজন ধর্ষণ হয়। অতি সম্প্রতি আরজি কর হাসপাতালের জুনিয়র মহিলা ডাক্তারকে বর্বরভাবে ধর্ষণের পর খুন করা হয়। সে প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত দু-সপ্তাহে বিভিন্ন রাজ্যে বেশ কতগুলো ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণ করে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এনসিআরবি-র রিপোর্ট বলছে, প্রতিদিন এ দেশে গড়ে ৯০ জনেরও বেশি ধর্ষিতা হন। আইন করে এসব প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। ১২ বছর আগে দিল্লিতে নির্ভয়া ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে দেশ উত্তাল হয়েছিল। কিন্তু তার একযুগ পর আজও দেশে ধর্ষণ কমেনি; বরং বেড়েই চলেছে। এসব বন্ধ করতে হলে মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোকে বন্ধ করতে হবে। এসেবর অন্যতম কারণ হিসেবে সবার আগে মদ, ড্রাগস, পর্নোগ্রাফি নিষিদ্ধ করতে হবে বলে তিনি জানান। এছাড়াও অবাধ যৌনতা, পরকীয়া, সমকামিতা, বহুগামিতা, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক গড়াকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করতে হবে। উল্লেখ্য, আজ রবিবার ১ সেপ্টেম্বর কলকাতার ভাষা পরিষদে এই ক্যাম্পেইনের আনুষ্ঠানিক সূচনা হবে।

Stay Connected

Advt.

%d bloggers like this: