দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুরে আন্তঃধর্মীয় সংলাপ ও সুধী সমাবেশ

মীযান ডেস্ক: জামাআতে ইসলামী হিন্দের মহিলা বিভাগের পক্ষ থেকে দেশজুড়ে ১-৩০শে সেপ্টেম্বর ২০২৪ “নৈতিকতাই স্বাধীনতার ভিত্তি” শিরোনামে প্রচারাভিযান পরিচালিত হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার উদ্যোগে রবিবার ২৯ সেপ্টেম্বর বুনিয়াদপুরের চৌধুরী লজে এক ‘আন্তঃধর্মীয় সংলাপ ও সুধী সমাবেশের’ আয়োজন করা হয়। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেড় শতাধিক মানুষের সমাগম হয়। মহিলাদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। জেলার বিভাগীয় সম্পাদক মাওলানা আবুল কাসিম সাহেবের দারসে কুরআনের মাধ্যমে সমাবেশের সূচনা হয়। জেলা নাযিম আমিরুল ইসলাম প্রারম্ভিক ভাষণে বলেন, “জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যাঁরা আজকের এই মহতী আয়োজনে সামিল হয়েছেন, তাঁরা সকলেই ব্যক্তিগত জীবন, সামাজিক জীবন এবং রাষ্ট্রীয় জীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন। আপনারা এই সবের পরিবর্তন আশা করেন এবং তার জন্য কাজ করতে চান। আমরা যদি সত্যিকার অর্থে দেশপ্রেমিক হতে চাই, তাহলে সমাজ পরিবর্তনের এই কাজ করতেই হবে। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের উত্তরসূরীদের একটি আদর্শ সমাজ ও জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র উপহার দিয়ে যেতে পারব ইনশাল্লাহ।”

জেলার ক্যাম্পেইন কনভেনর নূরুন্নেসা সাহেবা ‘আদর্শ নারী সমাজের মানদণ্ড কী হওয়া উচিত’ – সে প্রসঙ্গে বলেন, “সততা, শালীনতা, চারিত্রিক উৎকর্ষতা এবং ধার্মিকতা হল আদর্শ নারী সমাজের মানদণ্ড। নারীজাতিকে এই মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হয়ে আদর্শ নারী সমাজ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।” গঙ্গারামপুর মহকুমার ‘মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার’ সম্পাদক বিভূতিভূষণ চক্রবর্তী মহাশয় ‘ক্রীড়া ও সংস্কৃতি চর্চার নৈতিক দিক’ বিষয়ে বলেন, “সরলমনা শিশুদেরকে দেশাত্মবোধের শিক্ষা দিতে হবে। তবেই ক্রীড়া ও সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে তারা নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন হয়ে গড়ে উঠবে।” বিশিষ্ট সমাজসেবী আকমাল হোসেন ‘নাগরিক সমাজের জন্য নৈতিক মূল্যবোধের গুরুত্ব ও করণীয়’ বিষয়ে বলেন, “একটি জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নাগরিক সমাজের নৈতিক মূল্যবোধের গুরুত্ব অপরিসীম। আর এই শিক্ষা পাওয়া যাবে ধর্মীয় শিক্ষা বা আধ্যাত্মিক চেতনা থেকে। তাই সকল নাগরিককে নিজ নিজ ধর্মের আদর্শকে ধারণ করে জীবন যাপন করতে হবে।” বিশিষ্ট সমাজসেবী আব্দুল রহমান ‘আদর্শ ছাত্র-যুব সমাজের নৈতিক মানদণ্ড’ বিষয়ে বলেন, “বর্তমান ছাত্র-যুব সমাজ মোবাইল আসক্তির কারণে আত্মপরিচয়, গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে ফেলেছে। তাদেরকে মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিটা পরিবারে নীতি-নৈতিকতার শিক্ষা দিতে হবে।”

আন্তঃধর্মীয় সংলাপ ও সুধী সমাবেশের বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত বংশীহারী চিত্রকূট ধামের মহারাজ শ্রী চিত্তরঞ্জন সন্ন্যাসী মহাশয় ‘সনাতন ধর্মে স্বাধীনতা ও নৈতিকতার দিকনির্দেশনা’ বিষয়ে বলেন, “আমরা সবাই মানুষ, এটাই আমাদের সবথেকে বড় পরিচয়। ধর্মীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে মানবসেবায় নিজেদেরকে আত্মনিয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি স্রষ্টা আল্লাহ বা বিধাতার বিধানের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে অর্থাৎ সেগুলি মাথা পেতে মেনে নিতে হবে। তবেই ভেদাভেদ, হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি, অন্যায়, পাপাচার দূর হয়ে সমাজ হবে স্বর্গ বা বেহেশতের টুকরো।”

সবশেষে প্রধান অতিথি হিসেবে জামাআতে ইসলামী হিন্দের রাজ্য মজলিসে শূরার সদস্য ও বিভাগীয় সম্পাদক নুরুল ইসলাম ইঞ্জিনিয়ার “নৈতিকতাই স্বাধীনতার ভিত্তি” বিষয়ে সমাপ্তি ভাষণে বলেন, “বর্তমান পৃথিবীর একমাত্র অবিকৃত ধর্ম এবং খাঁটি মতাদর্শ হল ইসলাম। ইসলামী জীবন দর্শনের দুটি মৌলিক উৎস হল কুরআন ও বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর হাদীস। প্রত্যেক নাগরিক যদি নিরপেক্ষ ও উদার মানসিকতা নিয়ে এই দুটি জিনিসকে জানা-বোঝার চেষ্টা করি, তাহলে আমরা আমাদের সমাজ ও দেশ গড়ার সব সূত্রই পেয়ে যাব। তাই ইসলাম ও পবিত্র কুরআন-হাদীসকে শুধুমাত্র মুসলিমদের ধর্ম বা ধর্মগ্রন্থ মনে করলে হবে না। বরং ইসলাম বিশ্বজনীন মতাদর্শ এবং পবিত্র কুরআন সমগ্র মানবজাতির জন্য সংবিধান – এই ধারণা ও বিশ্বাস নিয়েই আমাদের তা চর্চার বস্তুতে পরিণত করতে হবে। এখানেই আমরা খুঁজে পাব নৈতিকতা ও মূল্যবোধ। আর এটাই হচ্ছে প্রকৃত স্বাধীনতার ভিত্তি। জামাআতে ইসলামী হিন্দ বিপন্ন সমাজকে রক্ষার্থে এই প্রচারাভিযানের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছে।” প্রোগ্রাম সঞ্চালনা করেন ‘সলিডারিটি ইয়ুথ মুভমেন্ট’ দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার সভাপতি মসিউর রহমান।

Stay Connected

Advt.

%d bloggers like this: