থ্রিডি প্রিন্টার বিজ্ঞানের যুগান্তকারী সৃষ্টি

আজহারুল ইসলাম
ধরা যাক, বারান্দায় বসে চা খাওয়ার জন্য আপনার একটি চেয়ার প্রয়োজন। বিষয়টি যদি এমন হয়- চেয়ার কেনার জন্য আপনাকে দোকানে যেতে হবে না; বরং ঘরে বসে প্রিন্ট করেই আসল চেয়ার পেয়ে যাবেন। তা হলে কি অবাক হবেন? শুনতে অবাক লাগলেও বিষয়টি সত্যি। থ্রিডি প্রিন্টারের এই যুগে এসবই সম্ভব। কল্প-বিজ্ঞান বা সায়েন্স ফিকশন মনে হলেও বিষয়টা তা নয়। অহরহই এভাবে প্রিন্ট হচ্ছে ঘরের আসবাব থেকে শুরু করে বড় বড় মেশিন। আর প্রযুক্তি জগতে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে থ্রিডি প্রিন্টার। এর ক্ষমতা আমাদের শরীরের ক্ষুদ্রতম কোষ থেকে আকাশছোঁয়া বিল্ডিং পর্যন্ত; এক কথায় অসীম। সাধারণ কম্পিউটার প্রিন্টিংয়ে কেবল দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ আছে। কিন্তু এর সঙ্গে উচ্চতা যোগ করলে তা হয়ে যায় ত্রিমাত্রিক বা থ্রিডি বস্তু। আমাদের চারপাশের জগতের সবকিছুই যেহেতু ত্রিমাত্রিক, সেহেতু সাধারণ প্রিন্টারের বদলে ত্রিমাত্রিক বা থ্রি ডাইমেনশনাল (থ্রিডি) প্রিন্টারে নির্দেশ দিলে আমাদের বাস্তব জগতের যে কোনো বস্তুর হুবহু আদল প্রিন্ট হয়ে যায়। এর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতাও আছে। থ্রিডি মুভির পর থ্রিডি প্রিন্টারও এখন প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনে অন্যতম একটি মাধ্যম। গাড়ি, বাড়ি, এমনকি নদীর ওপর সেতু নির্মাণেও এখন থ্রিডি প্রিন্টার ব্যবহারের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। তবে বর্তমানে থ্রিডি প্রিন্টারের যে জৌলুস, তা শুরু হয়েছে অনেক আগেই। প্রায় ৩৫ বছর আগে থ্রিডি প্রিন্টার জাপানের প্রযুক্তি ক্ষেত্রে প্রকাশ হয়। ১৯৮১ সালে জাপানের বিজ্ঞানীরা থ্রিডি প্রিন্টার দিয়ে বিভিন্ন বস্তু প্রিন্ট করে দেখেন। ওই সময় কোনো মডেল তৈরির জন্য উপাদান হিসেবে তরল ফটোপলিমার ব্যবহার হত। তিন বছর পর ১৯৮৪ সালে বিজ্ঞানী চার্লস হল স্টেরিও লিথোগ্রাফির মাধ্যমে থ্রিডি প্রিন্টারের পরিচয় ঘটান। যেখানে ডিজিটাল ডেটা দিয়ে ডিজাইনাররা ইচ্ছামতো মডেলের ডিজাইন করতে পারেন। চার্লস আবিষ্কৃত থ্রিডি প্রিন্টারে তরল ফটোপলিমারই ব্যবহার হত। ফটোপলিমার গরম হয়ে ডিজাইনের আকারে প্লাস্টিক তৈরি করত। ১৯৯২ সালে থ্রিডি প্রিন্টারে তরল ফটোপলিমারের বদলে পাউডার ব্যবহার শুরু হয় এবং যে কোনো মডেলের জিনিস প্রিন্ট করা সম্ভব হয়। বর্তমানে সেরামিক, বালি, চিনি, চকোলেট এবং বিভিন্ন ধাতুও ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে এ দিয়ে যে কোনো আকৃতি, প্রকৃতি ও ডিজাইনের প্রতিকৃতি তৈরি করা সম্ভব। কাঙ্খিত বস্তু একেবারে রেডিমেড পাওয়ায় এতে আলাদা করে কাটাছেঁড়া বা ড্রিল করা ইত্যাদির দরকার পড়ে না।

Stay Connected

Advt.

%d bloggers like this: