মীযান ডেস্ক: এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়কে খারিজ করে উত্তর প্রদেশের মাদ্রাসা শিক্ষাকে আইনি বৈধতা দেওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের রুলিংকে স্বাগত জানাল জামাআতে ইসলামী হিন্দ। মঙ্গলবার এই মর্মে জামাআতের সর্বভারতীয় তালিমি বোর্ড এর সেক্রেটারি সাইয়েদ তানভীর আহমেদ প্রেস বিবৃতিতে বলেন, ২০০৪ সালের মাদ্রাসা শিক্ষা আইনকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দেওয়া এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে সুপ্রিম কোর্ট যে ইনসাফপূর্ণ রায় দিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক। দেশের শীর্ষ আদালতের এই রায়ে উত্তর প্রদেশের সংখ্যালঘুদের শিক্ষার অধিকার আবারও মান্যতা ফিরে পেল এবং মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার আইনি বৈধতা বজায় রইল।
তিনি আরও বলেন, মাদ্রাসায় সম্পূর্ণরূপে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা দেওয়া হয়। মাদ্রাসায় ধর্মীয় বৈষম্য, বিদ্বেষের পাঠ দেওয়া হয় না। তাই জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে মাদ্রাসায় বহু অমুসলিম ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করে এবং অসংখ্য অমুসলিম শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মাদ্রাসাগুলিতে চাকরি করেন। অর্থাৎ মাদ্রাসা শিক্ষা বহুত্ববাদী সমাজের কল্যাণে নিয়োজিত রয়েছে। তাই সংখ্যালঘুদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়া এবং সেখানে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া সংবিধান প্রদত্ত অধিকার। এই অধিকার কেউ হরণ করতে পারে না।
সবশেষে জামাআতে ইসলামী শিক্ষা বিভাগের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি সৈয়দ তানভীর আহমেদ বলেন, সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পর আশা করি ধর্মীয় বিদ্বেষ ও বিভাজন সৃষ্টির অপচেষ্টা কমবে, মাদ্রাসার ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করার অপপ্রয়াস দূরীভূত হবে।
উল্লেখ্য, উত্তরপ্রদেশের মাদ্রাসা শিক্ষা আইন-২০০৪-কে বৈধ বলে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সম্প্রতি লোকসভা ভোটের সময় ২২ মার্চ এই আইনকে অসাংবিধানিক বলে রায় দেয় এলাহাবাদ হাইকোর্ট। আজ মঙ্গলবার এই মামলার শুনানিতে এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায় খারিজ করে দিল দেশের শীর্ষ আদালত। ফলে উত্তরপ্রদেশে প্রায় ১৬ হাজার মাদ্রাসার ১৭ লক্ষ পড়ুয়া ও কয়েক হাজার শিক্ষক স্বস্তি পেলেন।
সমাজবাদী পার্টির প্রধান মুলায়ম সিং যাদব উত্তরপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ২০০৪ সালে ‘উত্তরপ্রদেশ মাদ্রাসা বোর্ড শিক্ষা আইন’ কার্যকর করেন। কিন্তু যোগী আদিত্যনাথ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরই রাজ্যের মাদ্রাসা নিয়ে বৈষম্য ও বিদ্বেষী রাজনীতি শুরু হয়। মাদ্রাসাগুলিতে কোনও বিদেশি অনুদান আসছে কি না, তা নিয়ে সমীক্ষা হয়। মাদ্রাসার সিলেবাস বদলেও উদ্যোগ নেয় রাজ্য শিক্ষা দফতর। একই সঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষাকে উঠিয়ে দিয়ে ‘মূল শিক্ষা ব্যবস্থা’র সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার প্রয়াস শুরু হয়। বেশ কিছু মাদ্রাসাকে স্কুলে পরিণত করা হয়। সেই আবহেই মাদ্রাসা শিক্ষা আইনের বৈধতা নিয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্টে এক জনস্বার্থ মামলা হয়। যাতে আদালত জানায় মাদ্রাসা শিক্ষা আইন অসাংবিধানিক। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে পাল্টা মামলা দায়ের হয়। সেই মামলার শুনানিতেই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ সাফ জানিয়েছে, এই আইন বৈধ এবং সাংবিধানিক। এলাহাবাদ হাইকোর্ট তাদের রায়ে আইনের মৌলিক কাঠামোগত ত্রুটির নিয়ে যে কথা বলেছিল, তা ভুল ছিল। এই আইন মাদ্রাসা প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করে না। মাদ্রাসা আইনে কিছু ধর্মীয় বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকা মানেই তা অসাংবিধানিক হতে পারে না।
উল্লেখ্য, গত ১১ অক্টোবর সব মাদ্রাসা বোর্ডকে ভেঙে দিয়ে, রাজ্য সরকারগুলোকে মাদ্রাসা শিক্ষা খাতে অনুদান বন্ধ করতে, মাদ্রাসার পড়ুয়াদের ছাড়িয়ে নিয়ে মূলস্রোতের স্কুলে ভর্তির নিদান দিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা বন্ধ করতে দেশের সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে নির্দেশিকা পাঠায় জাতীয় শিক্ষা অধিকার সুরক্ষা কমিশন (এনসিপিসিআর)। যা নিয়ে দেশজুড়ে তীব্র বিতর্ক দেখা দিলে দুদিন পর কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রিয়াঙ্ক কানুনগো ডিগবাজি খেয়ে বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষা বন্ধের সার্কুলার দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র অনুদান বন্ধের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।