রমাদানে এতেকাফের গুরুত্ব

মুফতি মাও. এএইচএম আবুল কালাম আযাদ:

‘এতেকাফ’ আরবি শব্দ। ‘আকফ’ মূলধাতু থেকে গঠিত। আকফ শব্দের অর্থ হল অবস্থান করা, স্থির থাকা, যেমন আল্লাহ তায়ালার বাণী “আর তোমরা তোমাদের স্ত্রী’দের যৌন মিলন করো না, যখন তোমরা মসজিদে এতেকাফে থাকো”। (সূরা বাকারা: ১৮৭)। আভিধানিক ভাবে কোনো বস্তুকে বাধ্যতামূলকভাবে ধারণ করা কিংবা কোনো বস্তুর ওপর নিজেকে দৃঢ়ভাবে আটকিয়ে রাখার নাম এতেকাফ। শরিয়তের পরিভাষায়, যে মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত স্বলাত জামাত সহকারে নিয়মিত আদায় করা হয়, এমন মসজিদে মহান আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে নিয়ত সহকারে অবস্থান করাকে এতেকাফ বলে। দুনিয়াবী কাজকর্ম ও পরিবার পরিজন থেকে আলাদা হয়ে সওয়াবের নিয়তে মসজিদে বা ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করা হল এতেকাফ। যে কোন সময় এতেকাফ জায়েয। তবে রমাদান মাসে উত্তম এবং রমাদানের শেষ দশকে বা ২০টা রোযার পর থেকে ক্কদরের উদ্দেশ্যে তা সর্বোত্তম। রাসূল (সা.) প্রতি বছর রমাদানে এতেকাফ করেছেন এবং এতেকাফ করার জন্য সাহাবাদের উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করেছেন।

এতেকাফের ফজিলত:

রমাদানের শেষ দশকে আল্লাহর অসংখ্য, অগণিত রহমত উম্মতে মুহাম্মদীর উপর অবিরাম বর্ষিত হতে থাকে। আল্লাহর রহমতের জোয়ার আসে। তাই এই দশকের এতেকাফে বিশেষ ফজিলত রয়েছে। রাসূল (সা.) নিজেও এই দশকে এতেকাফ করেছেন এবং এতেকাফকারীদের জন্য বহু সওয়াবের সু-সংবাদ দিয়েছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একদিন এতেকাফ করে, আল্লাহ সেই ব্যক্তি ও দোজখের মধ্যে ৩ খন্দক পরিমাণ দূরত্ব সৃষ্টি করেন। (তাবারানী ও হাকেম)। প্রত্যেক খন্দক পূর্ব ও পশ্চিমের দূরত্বের চাইতে আরো বহুদূর।

আলী বিন হোসাইন নিজ পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি রমাদানে ১০ দিন এতেকাফ করে, তা দুই হজ্জ ও দুই ওমরাহর সওয়াবের সমান। (বায়হাকী)। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, এতেকাফকারী সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন, এতেকাফকারী গুনাহ থেকে বিরত থাকে। তাকে সকল নেক কাজের কর্মী বিবেচনা করে বহু সওয়াব দেয়া হয়। (ইবনে মাজাহ)

এতেকাফের উদ্দেশ্য:

১) আল্লাহর সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করা: আল্লাহর দিকে আকৃষ্ট হওয়া ও আল্লাহকেন্দ্রিক ব্যতিব্যস্ততা যখন আত্মার সংশোধিত ও ঈমানী দৃঢ়তা অর্জনের পথ, কেয়ামতের দিন তার মুক্তিও বরং এ পথেই, তাহলে এতেকাফ হল এমন একটি ইবাদত, যার মাধ্যমে বান্দা সমস্ত সৃষ্ট জীব থেকে আলাদা হয়ে যথাসম্ভব প্রভুর সান্নিধ্যে চলে আসে। বান্দার কাজ হল তাঁকে স্মরণ করা, তাঁকে ভালবাসা ও তাঁর ইবাদত করা। সর্বদা তার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা, এরই মাধ্যমে আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক দৃঢ় ও মজবুত হয়।

২) অহেতুক কাজ থেকে দূরে থাকা: রোযার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদেরকে বাঁচিয়ে রাখেন অতিরিক্ত পানাহার ও যৌনাচার-সহ পাশবিক প্রবৃত্তির বিবিধ প্রয়োগ থেকে। অনুরূপভাবে তিনি এতেকাফের বিধানের মাধ্যমে তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখেন অহেতুক কথা-বার্তা, মন্দ সংস্পর্শ ও অধিক ঘুম হতে। এতেকাফের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ অর্থে আল্লাহর জন্য নিবেদিত হয়ে যায়। নামায, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির ও দোয়া ইত্যাদি অবাধ চর্চার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের অফুরান সুযোগের আবহে সে নিজেকে পেয়ে যায়।

৩) লাইলাতুল ক্কদর তালাশ করা: এতেকাফের মাধ্যমে লাইলাতুল ক্কদর বা শবে ক্কদর খোঁজ করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মূল উদ্দেশ্য ছিল। আবু সায়ীদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস সে কথারই প্রমাণ দেয়। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমি প্রথম দশকে এতেকাফ করেছি এই (ক্কদর) রজনী খোঁজ করার উদ্দেশ্যে, অতঃপর এতেকাফ করেছি মাঝের দশকে, অতঃপর মাঝ-দশক পেরিয়ে এলাম, তারপর আমাকে বলা হল, (কদর) তো শেষ দশকে। তোমাদের মধ্যে যদি কেউ এতেকাফ করতে চায়, সে যেন এতেকাফ করে, অতঃপর লোকেরা তাঁর সাথে এতেকাফ করল। (মুসলিম: ১১৬৭)।

৪) মসজিদে অবস্থানের অভ্যাস গড়ে তোলা: এতেকাফের মাধ্যমে বান্দার আত্মা মসজিদের সাথে জুড়ে যায়, মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে। হাদীস অনুযায়ী, যে সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা তাঁর আরশের ছায়া দান করবেন, তাদের মধ্যে একজন হলেন ওই ব্যক্তি, মসজিদের সাথে যার হৃদয় ছিল বাঁধা।

৫) দুনিয়া ত্যাগ ও বিলাসিতা থেকে দূরে থাকা: এতেকাফকারী যেসব বিষয়ের স্পৃক্ততায় জীবন যাপন করত, সেসব থেকে সরে এসে নির্দিষ্ট কয়েকদিন নিজেকে মসজিদে আবদ্ধ করে ফেলে। এতেকাফ অবস্থায় দুনিয়া ও দুনিয়ার স্বাদ থেকে সে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ঠিক ওই আরোহীর ন্যায় যে কোন গাছের ছায়ার নীচে বসল, অতঃপর সেখান থেকে উঠে চলে গেল।

৬) ইচ্ছাশক্তি প্রবল করা এবং প্রবৃত্তিকে খারাপ অভ্যাস ও কামনা-বাসনা থেকে বিরত রাখার অভ্যাস গড়ে তোলা: কেননা, এতেকাফ দ্বারা খারাপ অভ্যাস থেকে বিরত থাকার ট্রেন্ড গড়ে ওঠে। এতেকাফ তার জন্য সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় নিজেকে ধৈর্য্যের গুণে গুণান্বিত করতে ও নিজের ইচ্ছাশক্তিকে শানিত করতে। এতেকাফ থেকে একজন মানুষ সম্পূর্ণ নতুন মানুষ হয়ে বের হয়ে আসার সুযোগ পায়, যা পরকালে উপকারে আসবে না – তা থেকে বিরত থাকার ফুরসত মেলে।

৭) মসজিদে এতেকাফের মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহ তাআলার উদ্দেশে নিজেকে আবদ্ধ করে নেওয়ার কারণে মুসলমানের অন্তরের কঠোরতা দূরীভূত হয়। কেননা, কঠোরতা সৃষ্টি হয় দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা ও পার্থিবতায় নিজেকে আরোপিত করে রাখার কারণে। মসজিদে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখার কারণে দুনিয়ার প্রতি ভালবাসায় ছেদ পড়ে এবং আত্মিক উন্নতির অভিজ্ঞতা অনুভূত হয়। মসজিদে এতেকাফ করার কারণে ফেরেশতারা দোয়া করতে থাকে, ফলে এতেকাফকারী ব্যক্তির আত্মা নিম্নাবস্থার নাগপাশ কাটিয়ে ফেরেশতাদের অন্তরের দিকে ধাবিত হয়। ফেরেশতাদের পর্যায় থেকেও বরং ঊর্ধ্বে ওঠার প্রয়াস পায়। কেননা, ফেরেশতাদের প্রবৃত্তি নেই; বিধায় প্রবৃত্তির ফাঁদে তারা পড়ে না। আর মানুষের প্রবৃত্তি থাকা সত্ত্বেও সব কিছু থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর জন্য একাগ্রচিত্ত হয়ে যায়।

এছাড়াও এতেকাফের মাধ্যমে অন্তরে প্রশান্তি আসে, বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াতের সুযোগ সৃষ্টি হয়, ঐকান্তিকভাবে তাওবাহ করার সুযোগ লাভ হয়, তাহাজ্জুদে অভ্যস্ত হওয়া যায়, সময়কে সুন্দরভাবে কাজে লাগানো যায়।

এতেকাফের প্রকার:

এতেকাফ তিন প্রকার। ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদা, মুস্তাহাব বা নফল। মান্নতের এতেকাফ আদায় করা ওয়াজিব। যথা- কেউ এরূপ মান্নত করল যে, আমার অমুক কাজটি সুসম্পন্ন হলে আমি এতেকাফ করব। তাহলে সেই কাজ উদ্ধার হলে এতেকাফ আদায় করা ওয়াজিব হয়ে যায়। আদায় না করলে গুনাহগার হবে। রাসূল (সা.) বলেছেন: কোন ব্যক্তির মান্নত যদি আল্লাহর আনুগত্যের জন্য হয়, তা যেন পূরণ করা হয়। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)।

ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত: উমর (রা.) রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেন, আমি জাহেলিয়াতের যুগে মসজিদে হারামে এক রাত এতেকাফ করার নিয়ত করেছিলাম। রাসূল (সা.) বলেন, তোমার মান্নত পূরণ করো।

পবিত্র রমাদান মাসের শেষ দশকে এতেকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। কারণ, রাসূল (সা.) সর্বদা এই দিনগুলোতে এতেকাফ করতেন এবং সাহাবাগণকেও এতেকাফ করার জন্য উৎসাহিত করতেন। এ ছাড়া বছরের যে কোন দিন যে কোন সময় এতেকাফ করাকে নফল বা মুস্তাহাব এতেকাফ বলে।

এতেকাফের সময়:

নফল বা মুস্তাহাব এতেকাফ সামান্য সময়ের জন্যও হতে পারে। এ কারণেই উলামায়ে কেরাম বলেন, নামাযের জন্য মসজিদে প্রবেশের সাথে সাথে এতেকাফের নিয়ত করে নিবে, তাতে নামাযের পাশাপাশি নফল এতেকাফের সওয়াবের অধিকারী হওয়া যাবে। তবে সুন্নতে মুয়াক্কাদা এতেকাফের সময় হচ্ছে রমাদানের ২০ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব থেকে ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা পর্যন্ত। ওয়াজিব এতেকাফের জন্য ন্যূনতম সময় হল একদিন। একদিনের কম সময়ের জন্য এতেকাফের মান্নত হয় না। এর অধিক যত দিন মনে চায়, তত দিনের মান্নত করা যায়। কিন্তু যেসব দিনে রোযা রাখা নিষেধ, ওইসব দিনে এতেকাফের মান্নত করা জায়েয নয়। কারণ, মান্নতের এতেকাফের সময় রোযাও রাখতে হয়। কারণ, রোযা ব্যতীত মান্নতের এতেকাফ আদায় হয় না। যদি শুধু একদিনের এতেকাফের মান্নত করে, তাহলে তার সাথে রাত শামিল হবে না। তবে যদি রাত-দিন উভয়ের নিয়ত করে, বা একত্রে কয়েক দিনের মান্নত করে, তাহলে রাতও শামিল হবে। দিন বাদ দিয়ে শুধু রাতে এতেকাফের মান্নত হয় না। (তথ্যসূত্র: কীভাবে কাটাবেন মাহে রমাদান: মুফতী মুহাম্মদ তাকী উসমানী)।

এতেকাফকারীর জন্য যেসব কাজ জায়েয:

১) এতেকাফকারীর জন্য মসজিদে পানাহার ও ঘুমানোর অনুমতি আছে। তবে মসজিদের পবিত্রতা রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। এ ব্যাপারে সকল ইমামগণ একমত। তবে এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত; কেননা আল্লাহর প্রতি একাগ্রচিত্ত এবং একনিষ্ঠভাবে মনোনিবেশের জন্য কম খাওয়া, কম ঘুমানো সহায়ক বলে বিবেচিত।

২) জরুরী কাজের জন্য মসজিদের বাইরে যাওয়া। নিজ পরিবারের লোকদেরকে বিদায় জানানোর জন্য অল্পক্ষণ মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েয। হযরত সফিয়া থেকে বর্ণিত হাদীসেও অনুরূপ ঘটনা জানা যায়। তবে বিনা প্রয়োজনে বের না হওয়াই ভাল। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: এতেকাফকারীর জন্য সুন্নাত হল রোগী দেখতে না যাওয়া, জানাযায় অংশগ্রহণ না করা, স্ত্রী স্পর্শ না করা এবং সহবাস না করা এবং খুব বেশী প্রয়োজন না হলে মসজিদ থেকে বের না হওয়া। (আবু দাউদ)।

৩) গোসল করা, চুল আঁচড়ানো, তেল ও সুগন্ধি ব্যবহার, ভাল পোশাক পরা – এ সবের অনুমতি আছে। আয়েশা (রা.) আনহার হাদিসে এসেছে: তিনি মাসিক অবস্থায় নবী (সা.)-এর মাথার কেশ বিন্যাস করে দিতেন, যখন রাসূল (সা.) মসজিদে এতেকাফরত অবস্থায় থাকতেন, আয়েশা (রা.) তার কক্ষে থাকা অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মাথার নাগাল পেতেন। (বুখারি: ২০৪৬)।

৪) এতেকাফকারীর পরিবার তার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবে, কথা বলতে পারবে। প্রিয়নবী (সা.)-এর স্ত্রীগণ এতেকাফকালীন তার সাথে সাক্ষাৎ করতেন। কিন্তু সাক্ষাৎ দীর্ঘ না হওয়া বাঞ্ছনীয়।

যেসব কাজে এতেকাফ ভঙ্গ হয়:
১) এতেকাফের স্থান থেকে শরীয়তসম্মত প্রয়োজন বা স্বাভাবিক প্রয়োজন ছাড়া বের হয়ে গেলে তবে শরীয়ত সম্মত প্রয়োজন হলে মসজিদের বাইরে বের হওয়া যায়।

২) স্ত্রী সহবাস করলে, চাই বীর্যপাত হোক বা না হোক। ইচ্ছাকৃত হোক বা ভুলক্রমে হোক। সহবাসের আনুষাঙ্গি কাজ যেমন চুম্বন, আলিঙ্গন ইত্যাদি কারণে বীর্যপাত হলে এতেকাফ ফাসেদ হয়ে যাবে। তবে চুম্বন ইত্যাদির কারণে বীর্যপাত না হলে এতেকাফ বাতিল হবে না। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এতেকাফ অবস্থায় এসব করা হারাম। আল্লাহ তায়ালা বলেন: “আর তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের যৌন মিলন করো না, যখন তোমরা মসজিদে এতেকাফে থাকো”। (সূরা বাকারা: ১৮৭)।

এছাড়াও পাগল হওয়া, স্ত্রীলোকের হায়েজ নেফাস হওয়া, ধর্মত্যাগী (মুরতাদ) হওয়া ইত্যাদি।

মসজিদ থেকে বের হওয়ার বিধান:

১) এতেকাফকারী বিনা প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হলে তার এতেকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে।

২) এতেকাফের স্থান থেকে যদি মানবীয় প্রয়োজন মিটানোর জন্য বের হয় তাহলে এতেকাফ ভঙ্গ হবে না।

৩) মসজিদে থেকে পবিত্রতা অর্জন সম্ভব না হলে মসজিদ থেকে বের হওয়ার অনুমতি আছে।

৪) বাহক না থাকার কারণে এতেকাফকারীকে যদি পানাহারের প্রয়োজনে বাইরে যেতে হয় অথবা মসজিদে খাবার গ্রহণ করতে লজ্জা বোধ হয়, তবে বাইরে যাওয়ার অনুমতি আছে।

৫) যে মসজিদে এতেকাফে বসেছে, সেখানে জুমার নামাযের ব্যবস্থা না থাকলে জুমার নামায আদায়ের প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হওয়া ওয়াজিব এবং আগেভাগেই রওয়ানা হওয়া তার জন্য মুস্তাহাব।

৬) ওজরের কারণে এতেকাফকারী মসজিদ থেকে বের হতে পারে। সাফিয়্যা (রা.) রমাদানের শেষ দশকে এতেকাফস্থলে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে কিছুক্ষণ কথা বললেন, অতঃপর যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালেন, রাসূল (সা.)-ও তাকে বিদায় দিতে উঠে দাঁড়ালেন। (বুখারি: ২০৩৫)।

৭) নেকির কাজ করার জন্য এতেকাফকারীর মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ নয়। যেমন রোগী দেখতে যাওয়া, জানাযায় উপস্থিত হওয়া ইত্যাদি।

এতেকাফকারীর জন্য মাকরূহ:

এতেকাফ অবস্থায় চুপ থাকলে সওয়াব হয়, এই মনে করে চুপ থাকা মাকরূহে তাহরীমী। বিনা প্রয়োজনে পার্থিব কোন কাজে লিপ্ত হওয়া মাকরূহে তাহরীমী। যেমন কেনাবেচা ইত্যাদি। তবে একান্ত প্রয়োজনে যেমন- ঘরে খাবার নেই এবং সে ব্যতীত অন্য কোন বিশ্বস্ত মানুষও নেই- এরূপ অবস্থায় মসজিদে মালপত্র উপস্থিত না করে কেনাবেচার চুক্তি করতে পারে।

এতেকাফের মুস্তাহাব বিষয়:

১) বেশী বেশী নামায আদায় করা, কুরআন তিলাওয়াত, নিজ ভাষায় তরজমা এবং ব্যাখ্যা-সহ তাফসীর পড়া; ইসলামী সাহিত্য ও ইসলামী বই-পুস্তক পড়া, অর্থাৎ দ্বীনি ইলম অর্জন করা।

২) বেহুদা কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকা। ঝগড়াঝাঁটি এবং গাল-মন্দ না করা।

৩) মসজিদের একটি নির্দিষ্ট অংশে অবস্থান করা। নাফে (রা.) থেকে বর্ণিত, আব্দুল্লাহ বিন উমর আমাকে মসজিদে নববীতে রাসূল (সা.) এর এতেকাফের সুনির্দিষ্ট স্থানটি দেখিয়েছেন। (সহীহ মুসলিম)।

মহিলাদের এতেকাফ:

পুরুষের ন্যায় মহিলারাও এতেকাফ করতে পারবে। ঘরের যে অংশে সাধারণত নামায পড়া হয় সেখানে যদি পর্দার যাবতীয় শর্তাবলী পাওয়া যায় এবং সার্বিক দিক বিবেচনা করে নিরাপদ মনে হয়, তাহলে সেখানে এতেকাফের জন্য নির্দিষ্ট করে নেবে। তারপর সেখানে বসে ইবাদত বন্দেগী করা শুরু করবে। মহিলাদের জন্য স্বামীর অনুমতি ব্যতীত এতেকাফ করা ঠিক না। স্বামী উপস্থিত থাকলে তার অনুমতি নিয়ে এতেকাফ করবে। স্বামীর খেদমতের প্রয়োজন হলে এতেকাফে বসবে না। তদ্রুপ শিশুর তত্ত্বাবধান ও যুবতী কন্যার প্রতি খেয়াল রাখার আবশ্যকতা থাকলে এতেকাফে না বসাই ভাল। তবে এ জাতীয় সমস্যা না থাকলে স্বামীর জন্য উচিত হবে স্ত্রী’কে নিজ ঘরে এতেকাফের অনুমতি প্রদান করা এবং এই বিরাট পুণ্যের কাজে অনুপ্রাণিত করা। কারণ, এতে পরকালীন উপকার ছাড়াও বৈষয়িক অনেক উপকারিতা রয়েছে।

এতেকাফ এমন এক বৈধ নির্জনতা, যেখানে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত, জিকির ও আনুগত্যের উদ্দেশ্যে নিজের আত্মা ও সত্তাকে একান্তভাবে নিয়োজিত করে এবং নামায, রোযা, কুরআন অধ্যয়ন, ইসলামী জ্ঞান চর্চা ও গবেষণায় নিজেকে সম্পূর্ণ ব্যস্ত রাখে। একই কারণে তিনি দুনিয়ার সকল কাজ ও ব্যস্ততা থেকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দূরে থাকেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের পথে যেন কোন দুনিয়াবী চিন্তা ও কাজ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে। এতেকাফ কিন্তু মোটেই বৈরাগ্যবাদ নয়। বৈরাগ্যবাদ স্থায়ী জিনিস, আর এতেকাফ হচ্ছে সাময়িক। তাই এতেকাফের বিরাট সওয়াব ও মর্যাদা লাভ করার জন্য সবারই সচেষ্ট হওয়া দরকার। আল্লাহ আমাদের সেই তাওফীক দিন, আমীন।

(লেখক: খতিব- বাইতুল মামুর জামে মসজিদ, উত্তরা ১২ নং সেক্টর, ঢাকা)।

Stay Connected

Advt.

%d bloggers like this: