গাজা শাসন করবে ফিলিস্তিনি সংস্থা, কায়রো বৈঠকে ৫৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের অনুমোদন

মীযান ডেস্ক: যুদ্ধ পরবর্তী ফিলিস্তিনের গাজা শাসন নিয়ে জটিলতা ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা দখল এবং গাজাবাসীকে অন্যত্র সরানো নিয়ে বক্তব্য রাখার পর সংকট আরও বেড়েছে। এদিকে মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি মঙ্গলবার ঘোষণা করেছেন, তাদের পরিকল্পনা অনুসারে গাজা একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি সংস্থা দ্বারা পরিচালিত হবে, যা গাজাবাসীর তাদের স্বভূমিতে থাকার অধিকার সুনিশ্চিত করবে। আরব দেশগুলো গাজার ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করতে কায়রোতে একত্রিত হওয়ার পর এই মন্তব্য করেন তিনি।
কায়রোতে আরব লীগ সম্মেলনে ট্রাম্পের গাজার বাসিন্দাদের স্থানান্তরের প্রস্তাব খারিজ করে পালটা বক্তব্য রাখার সময় আল-সিসি বলেন, ফিলিস্তিনিরা তাদের ভূমিতে থাকবে এবং গাজার তত্ত্বাবধান করবে ফিলিস্তিনি প্রযুক্তিবিদদের একটি কমিটি। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট ড. মাহমুদ আব্বাস গাজা পুনর্গঠন পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, তিনি তার সরকারের জন্য একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট নিয়োগ করবেন। এছাড়া, তিনি কায়রো সম্মেলনে ফাতাহ পার্টির বহিষ্কৃত সদস্যদের জন্য ক্ষমার ঘোষণা দেন। আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকদের দীর্ঘদিনের অনুরোধের পর আব্বাস এই পদের ঘোষণা দিলেন, যা বহিষ্কৃত ফাতাহ সদস্য মুহাম্মদ দাহলানকে ভাইস প্রেসিডেন্টের জন্য মনোনীত করার পথ প্রশস্ত করতে পারে। ওই সম্মেলনে আব্বাস বলেন, যদি পরিস্থিতি অনুমোদন করে, তিনি প্রেসিডেন্ট ও সংসদীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুত। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষই একমাত্র বৈধ শাসন ও সামরিক শক্তির অধিকারী। মিসর ৫৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পাঁচ বছরের পুনর্গঠন পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছে, যা গাজার অবরুদ্ধ এলাকায় ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
এক ডকুমেন্টে দেখা গেছে, ধ্বংসাবশেষ অপসারণ এবং প্রায় ৬০ হাজার আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ঘর-বাড়ি মেরামতে প্রয়োজন ৩ বিলিয়ন ডলার এবং ছয় মাসের সময়। এই পরিকল্পনার অধীন ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ লক্ষ মানুষের বসবাসের জন্য নতুন ঘর তৈরি হবে, সঙ্গে বিমানবন্দর, বন্দর, শিল্প তালুক, হোটেল এবং পার্কও নির্মাণ হবে। পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করতে হলে অন্তর্বর্তী শাসন ব্যবস্থা, নিরাপত্তা এবং দুই রাষ্ট্র সমাধান প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, মিসর ও জর্ডান ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, যাতে তারা গাজার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। সম্মেলনের চূড়ান্ত বিবৃতিতে মিশরের পরিকল্পনা সমর্থন পেয়েছে এবং গাজার পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু করার জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থনের আবেদন জানানো হয়েছে।
আরব সম্মেলন ফিলিস্তিনিদেরকে তাদের ভূমি থেকে বিতাড়ন না করার নীতি পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং ইসরাইলের মানবিক সহায়তা প্রবাহ বন্ধ করার সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে, যা তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তি, আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করছে। ফিলিস্তিনি মুজাহিদ গোষ্ঠী ‘হামাস’ও এই পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বয়কটের আহ্বান জানিয়েছে। হামাস সম্মেলন শেষে এক বিবৃতিতে বলেছে, এই সম্মেলনটি ফিলিস্তিনিদের জন্য আরব ও ইসলামি জোটের সমর্থনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বিশেষ করে গাজা, পশ্চিম তীর এবং জেরুজালেমে ইসরাইলি আক্রমণ এবং বিতাড়ন প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে। হামাস আরব নেতাদের প্রশংসা করে এও বলেছে, এটি এক ঐতিহাসিক বার্তা, যা দ্বিতীয় নাকবা (বিপর্যয়) ঘটতে দেবে না।

Stay Connected

Advt.

%d bloggers like this: