কাজী মনজুর আলম
যাকাতের নিসাব দু’টি। (১) ৬১২.৩৬০ গ্রাম রূপার নিসাব। (২) ৮৭.৪৮০ গ্রাম সোনার নিসাব। উল্লেখ্য, ২০ মার্চ ২০২৫ কলকাতায় রূপার দাম প্রতি ১০০ গ্রাম ৯,৮৭৫ টাকা। একই তারিখে সোনার দাম ২২ ক্যারেটে ১০ গ্রাম ৮১ হাজার ২০৩ টাকা এবং ২৪ ক্যারেটে ৮৮ হাজার ৬৪৯ টাকা। সোনার নিসাবে যাকাতের হিসাব শুধুমাত্র তখন হবে, যখন প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও ঋণ ব্যতীত সঞ্চিত সম্পদ শুধুমাত্র সোনা থাকবে, সঞ্চিত নগদ অর্থ বা ব্যবসায়িক সম্পত্তি ইত্যাদি থাকবে না। অন্যথায় রূপার নিসাবই ধর্তব্য হবে। বর্তমান অর্থনৈতিক কাঠামোতে মেয়েদের কাছেও এমনটা হয় না যে, তাদের কাছে শুধুমাত্র সোনা আছে, সঞ্চিত নগদ অর্থ নেই। উদাহরণ স্বরূপ কারো কাছে ১ ভরি সোনা ও নগদ ১ হাজার টাকা জমানো আছে। তাহলে যেহেতু ১ ভরি সোনা + ১০০০ টাকা মিলে রূপার নিসাব পূরণ হয়ে যাচ্ছে, সেজন্য উক্ত সম্পদ ১ বছর থাকলে তাকেও যাকাত দিতে হবে এবং এমন ব্যক্তি যাকাত নিতেও পারবে না।
বছরের শুরু ও শেষ প্রান্তে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকলে তবেই যাকাত ফরয হয়। বছরের মাঝে নিসাব থেকে সম্পদ কমে একেবারে নিঃশেষ হয়ে গেলে পুনরায় নিসাবের মালিক হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। পুনরায় নিসাবের মালিক হলে সেই দিন থেকে হিজরি ক্যালেন্ডারে ১ বছর অতিবাহিত হলে যাকাত ফরয হবে।
যাকাত ফরয হলে তখনই একসাথে আদায় করা জরুরি নয়। সুবিধামতো আদায় করা যেতে পারে। তবে অযথা বিলম্ব না করাই উচিত। বছর পূর্ণ হওয়ার সময় যে সম্পদ থাকবে তার ওপরে যাকাত দিতে হবে। বছরের শুরু বা মাঝের কোনো ধর্তব্য হবে না। উদাহরণ স্বরূপ বছরের শুরুতে আছে ২ লাখ টাকা, মাঝে কমে হল ১ লাখ, বছরের শেষে আছে ৪ লাখ, যাকাত ৪ লাখের উপর দিতে হবে।
অনুরূপ এর বিপরীত। যাকাত বাড়ন্ত সম্পদের উপর হয়। যেমন নগদ অর্থ, সোনা, রূপা, ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ক্রয় করা যে কোনো মাল সামগ্রী। স্থাবর বিষয়ের ওপর যাকাত হয় না। ভাড়া খাটানো গাড়ি বা কারখানার মেশিনারি কিংবা এস্টাব্লিশমেন্টের ওপর যাকাত নেই। এগুলো থেকে উপার্জনের ওপর নির্দিষ্ট হিসাবে যাকাত আদায় করতে হয়।
নামায যেমন সকলের ওপর আলাদা আলাদা ফরয, অনুরূপ যাকাতও। স্ত্রী নিসাবের মালিক হলে তার যাকাত আলাদা। স্বামীর হিসাব আলাদা। অবশ্য একজনের যাকাত অন্যজন তাকে জানিয়ে আদায় করে দিলে আদায় হয়ে যাবে। এক সংসারে থাকলেও যাকাত হিসাবের সময় বাপ, ভাই সকলে নিজস্ব সঞ্চিত সম্পদের আলাদা আলাদা হিসাব করবে। নাবালেগ সন্তানদের মালিকানায় কোনো অর্থ, গহনা ইত্যাদি থাকলে তার ওপর যাকাত নেই। তবে এগুলো সন্তানের জন্য লাভজনক খাত ছাড়া নিজেদের কাজে অভিভাবকরা ইচ্ছেমতো ব্যবহার করতে পারবে না।
প্রয়োজনীয় সামগ্রী অর্থাৎ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানকেন্দ্রিক যাবতীয় প্রয়োজনীয় দ্রব্য। সোনা-রূপা ব্যবহার্য হলেও তা প্রয়োজনের আওতাভুক্ত নয়। আপনি যদি ঋণী হন, যাকাত হিসাব করার সময় আপনার সম্পত্তি থেকে ঋণের পরিমাণ বিয়োগ করবেন। অনুরূপ আপনি যদি কাউকে ঋণ দিয়ে থাকেন, বা আপনার পিএফ ফান্ড বা এমন ধরনের কোনো নিশ্চিত সঞ্চিত অর্থ থাকে, তাহলে সেই পরিমাণ অর্থ আপনার সম্পদে যোগ করে যাকাতের হিসাব করবেন। ওপরে বর্ণিত নিসাবের মালিককে যাকাত দিলে যাকাত আদায় হবে না।
যাকাত একটি ফরয ইবাদাত। একে বোঝা মনে করা অনুচিত। রূপার মূল্য কম হওয়ায় যাকাত ফরয হওয়া নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলেন। বিষয়টা এইভাবে ভাবা উচিত যে, একটি ফরয ইবাদাত আদায়ের রাস্তা খুললো। তবে উল্লেখ্য, যাকাতের অর্থ একসাথে দেওয়াটাও জরুরি নয়। সুবিধামতো বছরের যে কোনো সময় দেওয়ারও অবকাশ আছে। তবে রমযান মাসে যেহেতু যে কোন নেক আমলের বিনিময়ে আল্লাহ তার সওয়াব বহুগুণ (৭০০ গুণ পর্যন্ত) বাড়িয়ে দেন। তাই এই মাসে দান, সাদকা, যাকাত ইত্যাদি আদায় করা উত্তম। শেষ করা হল, যাকাত যথাযথ হিসেব কষে আদায় না করলে আমাদের রোজগার বা উপার্জন আল্লাহর দরবারে হালাল বলে গণ্য হবে না। স্বভাবতই আমাদের ইবাদাতও কবুল হবে না।