দান-সাদকার উপযুক্ত সময় রমযান মাস

ড. আবু সালেহ মুহা. ত্বহা

রমযান হল সবর ও মুয়াসাতের মাস। সবর মানে ধৈর্য, আর মুয়াসাত মানে সহানুভূতি। গরিব-দুঃখী ও অসহায় মানুষেরা বিভিন্ন সময় ক্ষুধা-তৃষ্ণার কষ্ট সহ্য করে থাকে। রোযার মাধ্যমে রোযাদারের সেই উপলব্ধির সুযোগ হয়। অন্যের দুঃখ-কষ্ট বোঝার অনুভূতি সৃষ্টি হয়। সহানুভূতি প্রকাশের পথ উন্মুক্ত হয়। তার আলোকে রমযানে অপরিহার্য ও সাধারণ; সব ধরনের দান-সাদকার ক্ষেত্রে উদার হতে হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) এমনিতেও সব মানুষের চেয়ে বেশি দানশীল ছিলেন।
রমযান মাসে তাঁর দানের হাত আরো প্রসারিত হত। ইবন আব্বাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) সব মানুষের থেকে বেশি দানশীল ছিলেন। রমযান মাসে তাঁর দানের হাত আরো বেশি প্রসারিত হত, যখন জিব্রীল (আ.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতেন। রমযানের প্রতি রাতে জিব্রীল (আ.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতেন।
রাসূল (সা.) জিব্রীল (আ.)-এর সঙ্গে কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করতেন। আর রাসূল (সা.) প্রবলবেগে প্রবাহিত বাতাসের থেকেও বেশি দানশীল ছিলেন। (বুখারী: ৬/মুসলিম: ৬১৪৯)।
যাকাত: যাকাত বছরে একবার আদায়যোগ্য ইবাদত হলেও তা আদায়ের জন্য রমযান মাসকে বেছে নেওয়া উচিত। কারণ, এতে সহানুভূতির মাসে সহানুভূতি প্রকাশ করা যায়। অন্যদিকে রমযানের কারণে বেশি মাত্রায় নেকি বা সওয়াব পাওয়া যায়।
সাদাকাতুল ফিতর: সাদাকাতুল ফিতর তো এক মাস রোযা রাখার পর রোযার ভুল-ত্রুটির কাফফারা হিসেবে আদায়কৃত সাদকা। ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাদাকাতুল ফিতর আত্মশুদ্ধি ও আমলের পূর্ণতার জন্য। (আবু দাউদ: ১৬১১/ইবন মাজাহ: ১৮২৭)।
রাসূল (সা.) ঈদগাহে যাওয়ার আগেই সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতেন। তা ছাড়া রোযার মাধ্যমে গরিবদের জীবনযাত্রার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নিয়েই রোযাদার ঈদের মুখোমুখি হয়। ঈদের আনন্দে সবাইকে শরিক করতে যাকাত ও সাদাকাতুল ফিতর অন্যতম ভূমিকা পালন করে।
অন্যকে ইফতার করানো: রমযানে অন্যকে ইফতার করানো রমযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। রমযানের বাইরে এর কোনো সুযোগ নেই। অন্যকে ইফতার করানোর দ্বারা রোযার সমপরিমাণ সওয়াব পাওয়া যায়। যায়দ ইবন খালিদ আল-জুহানি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোযাদারকে ইফতার করায় সে রোযাদারের মতোই সওয়াব লাভ করে এবং রোযাদারের সওয়াবও কমে না।’ (তিরমিজি: ৮০৭)।
সালমান (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি রমযান মাসে কোনো রোযাদারকে ইফতার করায়, তার পাপ মাফ করে দেওয়া হয়, জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং তাকে রোযাদারের সওয়াব কমানো ছাড়াই রোযাদারের সমান সওয়াব দেওয়া হয়। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের অনেকেরই অন্যকে ইফতার করানোর সামর্থ্য নেই। নবী (সা.) বলেন, যদি কেউ দুধ, খেজুর অথবা এক ঢোঁক পানি দিয়েও ইফতার করায়, আল্লাহ তাকেও এই সওয়াব দান করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো রোযাদারকে পরিতৃপ্ত করে খাওয়ায়, আল্লাহ তাকে আমার হাউজ থেকে এমনভাবে পান করাবেন যে, সে জান্নাতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত মোটেই পিপাসার্ত হবে না। (মিশকাতুল মাসাবিহ: ১৯৬৫)।
কর্মচারীর কাজের চাপ কমানো: রমযানে নিজের অধীনস্থ কর্মীদের কাজের চাপ কমিয়ে দেওয়া উচিত। মজুরি না কমিয়ে কাজের চাপ কমিয়ে দিলে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।
সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি এ মাসে অধীনস্থদের কাজের চাপ কমিয়ে দেয়, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।’ (ইবন খুজাইমা: ১৮৮৭)।
সাধারণ দান-সাদকা: রমযানে সাধারণ ও নফল দান-সাদকার পরিধি বৃদ্ধি করা একান্ত জরুরি। আল্লাহ বলেন, ‘তারা তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করে, কী ব্যয় করবে? বলে দাও, নিজেদের প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর যা বাঁচে তা-ই ব্যয় করবে। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য নির্দেশ সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যেন তোমরা চিন্তা করতে পারো।’ (সূরা বাকারাহ: ২১৯)।

Stay Connected

Advt.

%d bloggers like this: