পাভেল আখতার
ইসলাম ধর্মে কোনটা ‘আবশ্যক’ আর কোনটা ‘আবশ্যক নয়’ সেটা জানার আগে ধর্মের চোখ দিয়ে ‘আবশ্যক’ শব্দটিকে ‘দেখা’ দরকার; নিজের চোখ দিয়ে নয়। ইসলাম ধর্মে বা তার বিধানে ‘আবশ্যক’ ব্যাপারটায় ধর্ম অথবা ধর্মের ‘পুরোধা যিনি’ তার কোনও ‘কল্যাণ’ নেই; মাটির পৃথিবীর ভাষায়- কোনও ‘স্বার্থ’ নেই। সমস্ত ‘কল্যাণ’ যাদের জন্য, ‘আবশ্যক’ও তাদেরই জন্য। অর্থাৎ, ধর্ম অথবা ধর্মীয় বিধানে ‘আবশ্যক’ বা ‘অবশ্য পালনীয়’ ব্যাপারটা তার অনুসারীদের কল্যাণের জন্য। এখন এই ‘আবশ্যকতা’র পালনও অনুসারীর ‘স্বাধীন ইচ্ছে’র উপর নির্ভরশীল। ‘তিনি’ জোর করে তা পালন করতে আরক্ত চোখের সৈনিক অবতরণ করেন না ! যদিও কারো ‘ইচ্ছে না-হওয়া’র অর্থ সে ধর্ম নির্দেশিত প্রক্রিয়ায় ‘কল্যাণ’-এ বিশ্বাসী নয়; সেক্ষেত্রে তার মূল ধর্মীয় বিশ্বাসটাই শিথিল ও অর্থহীন হয়ে যায়। ধর্মীয় বিধান পালন ‘আবশ্যক’ বা ‘বাধ্যতামূলক’ এই কথাগুলি সাধারণত এমনভাবে প্রচার করা হয় যে, তার সঙ্গে যেন মানুষের ‘স্বাধীনতা’র কোনও সম্পর্কই নেই ! অথচ, বিষয়টা তেমন নয়। ‘মানবে কি না’- সে ব্যাপারে তো অবশ্যই ‘স্বাধীন’। তাহলে মানতে চাইলে ‘স্বাধীনতা’ কীভাবে লংঘিত হ’ল সেকথা বোঝা অসম্ভব !
এখন ধর্মীয় বিধিবিধান ‘আবশ্যক’ হওয়ার কতকগুলি ‘স্তর’ আছে। কোনওটি সরাসরি বলা হয়, কোনওটি পরোক্ষ বচনে ব্যক্ত হয়। কোনওটির ক্ষেত্রে থাকে স্পষ্টতই নির্দেশের আঙ্গিক, আবার কোনওটির ক্ষেত্রে নৈতিক উপদেশের ভঙ্গিমা। তদুপরি, ইসলাম ধর্মের উৎস কেবল কুরআন নয়, হাদীসও। নবী (সা.)-‘র জীবন ও বাণী, যা হাদীস নামে পরিচিত, তা কুরআনেরই ছায়া কিংবা প্রতিধ্বনি। এই আয়োজনটা শিক্ষায় ‘গ্রন্থ ও শিক্ষক’-এর দ্বৈত আবশ্যকতার সঙ্গে তুলনীয়। এরপরও আছে। সারা জীবন ধরে যেসব ‘জ্ঞানতাপস’ গভীর অধ্যয়নে ডুবে থেকে ‘মণিমুক্তো’ কুড়িয়ে ‘ফিকাহ’ নামক শাস্ত্রের জন্ম দিয়েছেন, সেটিও। এই ‘ফিকাহ’ আবার কুরআন ও হাদীসের ছায়া। এই সমগ্রতার দিকে না-তাকালে ‘আবশ্যকতা’র মর্ম উদ্ধারে চূড়ান্ত ‘ভ্রান্তি’ উৎপন্ন হওয়া ছাড়া গতি নেই।
শুধু কুরআনকে বুঝতে যাওয়া খণ্ডিত ও নিরর্থক প্রয়াস। তবুও, যদি কেউ সেই ‘চেষ্টা’ করেও তবে তারও ‘পদ্ধতি’ আছে, যার ‘কিছুটা আভাস’ উপরে দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় অবলম্বিত ‘স্বরচিত পদ্ধতি’ একেবারেই বিভ্রান্তিমূলক। মুসলিম সমাজে আহলে হাদীসসহ পাঁচটি মাযহাব আছে। প্রায়শই অনেকে প্রশ্ন করেন, এই ‘বিভাজন’-এর কারণ কী? এই বিভাজন কি পারস্পরিক দ্বন্দ্বের জন্য মুসলিম সমাজকে দুর্বল করছে না? প্রথম কথা হচ্ছে, ‘বিভাজন’ শব্দটাকেই প্রথমে মাথা থেকে বের করতে হবে। কারণ, এই শব্দটা মনে ও মননে যে অভিঘাত তৈরি করে তা কিন্তু বিষয়টির অভিপ্রেত উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। বিভাজন নয়, বিষয়টিকে চিন্তার বৈচিত্র্যগত পার্থক্য বলা উত্তম। মূল ইসলাম ধর্মকে নিয়ে বছরের পর বছর গবেষণার পর সম্মানিত ইমামরা যে ‘মাযহাব’ রচনা করেছেন, তা কোনও দ্বন্দ্বের ইতিহাস নয়, তাঁদের বিশুদ্ধ হৃদয় ও মস্তিষ্ক থেকে উৎসারিত পথের বিভিন্নতা, যা চিন্তার বৈচিত্র্য থেকে সৃষ্ট। এই বিভিন্নতা বা বৈচিত্র্য সত্ত্বেও সকলেরই গন্তব্য কিন্তু অভিন্ন। বাসে, ট্রেনে, প্লেনে ইত্যাদি বিভিন্ন যানে গেলেও সবার গন্তব্য একই হলে যেমনটি হয় তেমন আর কি।
তাহলে দ্বন্দ্বের উপাখ্যানটা আসছে কোত্থেকে? আসছে এই কারণে যে, অনেকেই নিজের যানটিকেই শ্রেষ্ঠ মনে করছে বলে, যা অযৌক্তিক। এখানেও সহাবস্থান একান্ত কাম্য। নিতান্ত অজ্ঞতার জন্যই কেবল এই অনাকাঙ্ক্ষিত দ্বন্দ্ব চোরাস্রোতের মতো মুসলিম সমাজে বইলেও, যতটা প্রকটভাবে দেখানোর চেষ্টা হয় এবং বোঝানো হয় যে, সমাজকে এটা ভেতরে ভেতরে দুর্বল করে দিচ্ছে, প্রকৃত বাস্তব কিন্তু তা নয়। এটা নিছক এক ‘নির্মাণ’। কিন্তু যে বস্তুটা খুব সূক্ষ্ম কৌশলে মুসলিম সমাজে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে এবং দুঃখজনকভাবে এই কাজে কতিপয় ‘শিক্ষিত’ মুসলিমও যুক্ত, তা যে মুসলিম সমাজকে সত্যি সত্যিই দুর্বল ও বিপন্ন করবে, সেটা হলফ করে বলা যায়। কী সেই বস্তু? ভাষা ও আর্থিক মানদণ্ডের ভিত্তিতে বিভাজন– বাঙালি ও উর্দুভাষী মুসলিম এবং আশরাফ-আতরাফ (অভিজাত বা ধনী ও দরিদ্র মুসলিম)। ‘আশরাফ-আতরাফ’- এই বিভাজন এত ভিত্তিহীন যে এ সম্পর্কে কিছু বলাই বৃথা। যদিও ‘বৃথা’ হলেও এর অনুশীলন যে মারাত্মক ক্ষতিকর তা অবশ্য অনস্বীকার্য। কেবল ‘বাঙালি ও উর্দুভাষী মুসলিম’ এই বিভাজন সম্পর্কে বলতে হয় যে, নিজস্ব ভাষিক আবেগ যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ, তা অন্তরে লালন করাও প্রয়োজন; কিন্তু তার জন্য কি ভাষিক বিদ্বেষ জরুরি? মনে রাখা উচিত, যেকোনও বিদ্বেষই বিভাজন ও দ্বন্দ্বের জন্ম দেয়, যা ডেকে আনে দুর্বলতা ও ক্ষয়িষ্ণুতা। কেবল ধর্মীয় বিদ্বেষ ও বিভাজনের বিরুদ্ধে কথা বলব, আর অন্যত্র তার চর্চা করব না– এটা কি সুস্পষ্ট স্ববিরোধিতা নয়?
যাঁদের আমরা জ্ঞানী, বুদ্ধিমান বলে বেশ কদর করি, সম্মান করি, জগতের নানা বিষয়ে তাঁদের জ্ঞান ও বুদ্ধি যতই গভীর হোক না কেন, একটি জায়গায় এসে তাঁরা শুধু অশেষ করুণাই পেতে পারেন ! সেই জায়গাটার নাম- ইসলাম। কী অসীম অজ্ঞতা ভাবা যায় না ! অথচ, ভাবখানা জ্ঞানভারে এমন, ফলভারে অবনত তরু যথা ! প্রায়ই বলা হয়, মুসলিম সমাজ ‘নাকি’ ইসলাম নির্দেশিত ‘লিঙ্গবৈষম্যে’ আচ্ছন্ন, দীর্ণ ! নারী ও পুরুষের সমান অধিকার ‘নাকি’ ইসলাম দেয়নি ! এত বড় একটি কথা অনায়াসেই বলে দেওয়া হয়। এবং, নিরন্তর। অথচ, কোনও ‘রেফারেন্স’ দেওয়া হয় না। অদ্ভুত ! ইসলামের উৎস দুটি- কুরআন ও হাদীস। তো, এই দুই উৎসের কোথায় কোথায় তার প্রমাণ আছে? ‘রেফারেন্স’ নেই, উপরন্তু তাঁদের বক্তব্য হ’ল, ইসলামে নারীকে ‘বঞ্চনা’ করা হয়েছে ‘নানা দিক থেকে’। ‘নানা দিক’ বলতে হবে না, শুধু ‘একটি দিক’ বলা হোক।
ইত্যবসরে দু’একটি প্রশ্ন করা যাক। মুসলিমরা নারীকে বিয়েতে ‘মোহর’ দেয়। এটা ইসলাম নির্দেশিত নারীর অধিকার, যে অধিকার তাকে সম্মানিত করে, গর্বিত করে। বস্তুত, ইসলাম ‘পণ’ নিষিদ্ধ করেছে এবং ‘মোহর’ আবশ্যক করেছে। ‘পণপ্রথা’ নারীজাতির সবথেকে বড় অবমাননা! তার উপর জুলুম ! সেটা যতক্ষণ সমাজ থেকে উৎপাটিত না হচ্ছে ততক্ষণ ‘লিঙ্গবৈষম্য’ নিয়ে এত বেশি কথা বলা অবান্তর। প্রচলিত সমাজ নারীকে ‘পণ্য’ করেছে। আর, ইসলাম নারীকে ‘পণ্য’ ভাবার, ‘পণ্য’ করার সমস্ত পথ বন্ধ করেছে। কোনটা নারীর জন্য সম্মানের? আর, যেখানে ‘সম্মান’ থাকে বস্তুত সেখানেই ‘সাম্য’ থাকে। জানতে হবে, বুঝতে হবে।
দ্বিতীয়ত, নারীর শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অধিকার নিয়ে বিস্তর কথা বলা হয়। জানা দরকার যে, নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই শিক্ষা অর্জনকে ইসলাম আবশ্যক ঘোষণা করেছে। আর, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। মুসলিম নারী কার কার সম্পত্তিতে অধিকারী জানা আছে? এমনকি, তার স্বাবলম্বিতা অর্জনকেও ইসলাম নিরুৎসাহিত করেনি। যদি তা করত তাহলে মুসলিম মেয়েরা শিক্ষক, গবেষক, চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি হচ্ছে কীভাবে? বস্তুত, বিষয়গুলো এত সংক্ষিপ্তও নয়। ‘জানার ইচ্ছে’ থাকলে পড়াশুনা করতে হবে। আসল সমস্যাটা এখানেই। ইসলামের পূর্ণাঙ্গ জীবনদর্শন, জীবনবোধ সম্পর্কে হয় একেবারেই অজ্ঞতা, নয়ত অপূর্ণ বা ভাসাভাসা জ্ঞান ও ধারণার ভিত্তিতেই ইসলাম ও মুসলিম সমাজের উদ্দেশে ‘লিঙ্গবৈষম্যের’ অভিযোগটি করা হয়, যা ভিত্তিহীন।
প্রায়ই অনেকে একটি প্রশ্ন করেন। মুসলিম সমাজে কোনও ‘সংস্কারক’-এর দেখা পাওয়া যায় না কেন? কথাটা ভুল। ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ, ইমাম গাজ্জালী, ইমাম ইবনে তাইমিয়া, শাহ ওয়ালিউল্লাহ, শায়খ আলফেসানী প্রমুখ। এঁরা হলেন ওই জিজ্ঞাসিত ‘সংস্কারক’। ইসলামী পরিভাষায় অবশ্য ‘সংস্কারক’-কে বলে ‘মুজাদ্দিদ’। মোটেই ‘এলেবেলে’ বিষয় নয়। জানার পথে পা বাড়ালে তা নিশ্চয়ই বোঝা যাবে। তো, মুজাদ্দিদের কাজ কী, তিনি কী করেন ও কেমনভাবে করেন, তার যোগ্যতা ও গুণাবলী কী কী বা কোন কষ্টিপাথরে সেসব যাচাইযোগ্য – এসবই লিখিত আকারে সংরক্ষিত আছে। যে কেউই তা জেনে নিতে পারেন। এ প্রসঙ্গে আরেকটি কথা মনে রাখা উচিত, ‘সংস্কারক’ আর ‘বিপ্লবী’র মধ্যে পার্থক্য আছে। ‘সংস্কারক’ মৌলিক বিষয়ের সংস্কার করেন না; বরং যখন মৌলিক বিষয় থেকে দূরে সরে যাওয়া হয় এবং বহু আবর্জনায় মৌলিক বিষয়টিকে আচ্ছন্ন ও আবিল করে ফেলা হয় তখনই ‘সংস্কারক’-এর আবির্ভাব হয় ও তাঁর ‘কাজ’ও শুরু হয়। মৌলিক বিষয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও অনুসৃত বিষয়গুলিকে তিনি চিহ্নিত করে সেগুলিকে ‘বিচ্ছিন্ন’ ও মূল বস্তুটিকে ‘পরিচ্ছন্ন’ করেন। তাঁর ভূমিকা নির্মাতার নয়, মেরামত-শিল্পীর। কিন্তু ‘বিপ্লবী’ সেটা করেন না। তিনি আসলে ‘পরিবর্তন’ করেন; একটি ‘ব্যবস্থা’র জায়গায় আরেকটি ‘ব্যবস্থা’র প্রবর্তন।
যাঁরা ‘সংস্কারক’-এর কথা বলেন তাঁদের কথাবার্তার ধরন দেখে মনে হয়, তাঁরা ঠিক ‘সংস্কারক’-এর কথা বলছেন না, বলছেন আসলে ‘বিপ্লবী’র কথা। এই অনুমান যদি নির্ভুল হয় তাহলে বলতে হবে যে, কথাটা অযৌক্তিক ও অবাস্তব। আলটপকা মন্তব্যে যাঁরা অভ্যস্ত তাঁদের উদ্দেশে কিছু বলা বৃথা। কিন্তু, যাঁরা সিরিয়াস জ্ঞান ও বুদ্ধিচর্চায় আগ্রহী ও আন্তরিক এবং ‘ইসলাম’ নিয়েও যাঁদের পরিচ্ছন্ন, বৌদ্ধিক কৌতূহল রয়েছে তাঁদের উদ্দেশে একটি কথা বলা যায়। ইসলামের দর্শন ও চিন্তাপ্রণালীর (School of thoughts) ক্ষেত্রটি বিপুল ও বিস্তৃত। বহমান ইতিহাসের পটভূমিকায় একথা নির্ভেজাল সত্য। রবীন্দ্রনাথের দু’চারটি ‘কোটেশন’ জানলেই যে রবীন্দ্রনাথকে জানা, বোঝা যায় না, এই বিষয়টাও যে ঠিক তেমনই সেকথা তাঁরা নিশ্চয় বুঝবেন।
প্রসঙ্গত একটি নির্দোষ কৌতূহল। আমার বাড়ির সংস্কার নিয়ে অন্যের মাথাব্যথা কেমন ব্যাপার? আমি বাড়িটিতে দিব্যি বসবাস করছি, আর কেউ বলছে বাড়িটি সংস্কারের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে, এটা অদ্ভুত কথা নয় ?
‘মহামেডান ক্লাব’ নামটির সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। অনেকেই আবার মুসলিমদেরকেও ‘মহামেডান’ বলেন। সম্ভবত নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর সঙ্গে ‘সম্পর্কিত’ করে দেখানোর জন্য। ‘সম্পর্কিত’ তো বটেই, কিন্তু এই প্রক্রিয়াটা ডাহা ভুল। যীশু খ্রিস্ট বা গৌতম বুদ্ধের অনুসারীরা যেভাবে পরিচিত, মুসলিমদেরকে সেভাবে পরিচিত করানোর অবকাশ রাখা হয়নি। তার মানে কি মুসলিমরা নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর অনুসারী নয় ? নিশ্চয়ই। কিন্তু, ‘অনুসারী’ বলতে ইসলাম নিছক নবীর জীবন নিঃসৃত শিক্ষার অনুসরণকারী বুঝিয়েছে, নবীকে আল্লাহ’র কেবল একজন বার্তাবাহক হিসেবে চিহ্নিত করে। অর্থাৎ, অনুসরণের মধ্য দিয়ে যেভাবে খ্রিস্ট বা বুদ্ধকে কালক্রমে ‘ঈশ্বরের মহিমা’ দেওয়া হয়েছে সেই অবকাশ ইসলাম রাখেনি। সে জন্যই মুসলিমদেরকে ‘মহামেডান’ বলা একেবারেই ভুল। ‘মুসলিম’ কথাটির অন্তর্নিহিত অর্থ হ’ল, আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পিত। ‘মহামেডান’ বললে যা বোঝায় তা কিন্তু এই কথাটির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আজকাল আরেকটি শব্দবন্ধের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। ‘আরবের ইসলাম’। এটাও সম্পূর্ণ ভুল কথা। আমরা কি কখনও বলি, বেথেলহেম বা জেরুজালেমের খ্রিস্টান? কিংবা, কপিলাবস্তুর বৌদ্ধ? তবে, ‘আরবের ইসলাম’ কথাটা একেবারে যে ‘অজ্ঞতা’ থেকে বলা হয় তা নয়; বরং অনেকটা ‘ভেবেচিন্তেই’ বলা হয়। নিভৃত মনস্তত্ত্বটা হ’ল, দেড় হাজার বছর আগের প্রাচীন আরবে যে ইসলাম প্রচারিত হয়েছিল তা আজকের আধুনিক বিশ্বে অচল – এই ‘শিশুসুলভ ভাবনা’ প্রচারের ইচ্ছার অনুরণন আছে ওই ব্যবহৃত শব্দবন্ধটিতে। যদিও ইসলামের থেকে আরও প্রাচীন ধর্মগুলি সম্পর্কে তা কিন্তু বলা হয় না।
অমুসলিমদেরকে কী আর বলা যাবে, মুসলিমরাই তো ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ ! ‘মহরম’ বা ‘আশুরা’-এর কথাই ধরা যাক। এই দিনটিতে ‘যা হয়’ আর ‘যা হওয়া উচিত’ দুটির মধ্যে দুস্তর ব্যবধান লক্ষণীয়। উপরে ‘আরবের ইসলাম’-কে সঙ্গত কারণেই ভুল বলা হ’ল। কিন্তু, একথা ঠিক যে, আরব দেশগুলি আজও ‘রাজতন্ত্র’ উচ্ছেদ করতে পারেনি এবং তা পাশ্চাত্যের কিছু দেশের মতো নিতান্ত নিয়মতান্ত্রিকও নয়; বরং তা রীতিমতো দণ্ডমুণ্ডের শাসনব্যবস্থা। অথচ, নবী (সা.)-এর অত্যন্ত প্রিয় দৌহিত্র হুসাইন (রা.) এই ‘রাজতন্ত্র’ উচ্ছেদেই ‘শহীদ’ হয়েছিলেন। সেই ‘বিষাদসিন্ধু’ আশুরা-র মর্মলোকে প্রবাহিত। কিন্তু, যেসব আঙ্গিকে আশুরা উদযাপিত হয়, যা ইসলাম সমর্থিত নয়, সেই চেতনা কবে জাগ্রত হবে কে জানে!