লজ্জার আরবি শব্দ ‘হায়া’। তাই লজ্জাহীন বা নির্লজ্জকে বলা হয় বেহায়া। হায়ার সমার্থক শব্দ শালীনতা, শিষ্টাচার, লজ্জাশীলতা ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থে লজ্জাশীলতা হচ্ছে মানবীয় এমন চরিত্র, যা নিকৃষ্ট, কদর্য কথা ও কর্ম পরিহারে অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত করে এবং যথাযোগ্য হকদারকে অবহেলা ও উপেক্ষা করতে বাধা প্রদান করে। অর্থাৎ লজ্জাশীলতা হল আল্লাহর অপরিসীম দয়া, অনুগ্রহ ও এহসানের প্রতি লক্ষ্য করা এবং নিজের ত্রুটি ও অক্ষমতা সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করা। এই উভয়বিধ চিন্তার ফলে মানসপটে যে ভাবের উদয় হয়, তাকেই বলা হয় লজ্জাশীলতা। (রিয়াজুস সালেহিন)
লজ্জা দুই প্রকার—
১) জন্মগত ও স্বভাবগত লজ্জা: প্রিয় নবী (সা.) বলেন, লজ্জাশীলতা কল্যাণ আনে (বুখারি)। ওমর (রা.) বলেন, যে লজ্জা করল সে আড়ালে গেল। যে আড়ালে গেল সে আত্মরক্ষা করল। আর যে আত্মরক্ষা করল সে পরিত্রাণ পেল।
২) অর্জিত লজ্জা: আল্লাহর পরিচয় ও তাঁর মহত্ব, বান্দার নিকটবর্তী হওয়া, বান্দাদের ও তাদের কাজকর্ম দেখা, দৃষ্টির অবাধ্যতা ও অন্তরের গোপনীয় বিষয় সম্পর্কে তাঁর অবগতি প্রভৃতি জানার মাধ্যমে যে লজ্জা অর্জিত হয় – এটা হচ্ছে ঈমানের উচ্চ পর্যায়ের বৈশিষ্ট্য, এটা হচ্ছে সুন্দরতম, শ্রেষ্ঠতর গুণ।
প্রিয় নবী (সা.) বলেন, আল্লাহকে অনুরূপ লজ্জা করো, যেমন কোনো লোক যথাযোগ্য স্বজন থেকে লজ্জা করে। (মিশকাত)
কারও কারও মতে, লজ্জা হল প্রকৃতিগত, জ্ঞানগত ও শরিয়াহগত। লজ্জা হল মুমিনের ভূষণ। শরিয়তের বিধান পালনে লজ্জা বিশেষ সহায়ক। লজ্জা বা লাজুকতাকে প্রিয় নবী (সা.) ঈমানের অঙ্গ বলেছেন। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা প্রিয় নবী (সা.) এক আনসার ব্যক্তির কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন সে তার ভাইকে লজ্জা করার ব্যাপারে উপদেশ দিচ্ছিল। এ সময় প্রিয় নবী (সা.) বলেন, তাকে ছেড়ে দাও। কেননা, লজ্জা হল ঈমানের অঙ্গ। (মুসলিম)
বহুল আলোচিত এক হাদিসে আছে, ঈমানের ৭০টির বেশি শাখা-প্রশাখা রয়েছে। তার মধ্যে সর্বোত্তম হল ‘আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই’—এ কথা বলা এবং সর্বনিম্ন স্তর হল রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো। আর লজ্জা হল ঈমানের একটি শাখা। (বুখারি ও মুসলিম)। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, লজ্জা ও অল্প কথা ঈমানের দুটি শাখা। অশ্লীলতা ও বাকপটুতা মুনাফিকির দুটি শাখা। (তিরমিজি)
লজ্জা ইসলামের অনুষঙ্গ ও ধর্মীয় রীতির বিশেষ স্বভাব। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, প্রত্যেক ধর্মের একটি বিশেষ স্বভাব আছে। আর ইসলামের বিশেষ স্বভাব হল লজ্জাশীলতা (বুখারি)। প্রিয় নবী (সা.) আরো বলেছেন, লজ্জাশীলতা পুণ্য ও কল্যাণ ছাড়া আর কিছুই আনে না। অন্য বর্ণনায় আছে, লজ্জার সর্বাংশই উত্তম। (মুসলিম)
লাজুকতাকে মহান আল্লাহ ভালবাসেন। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, নিশ্চয়ই তোমার মধ্যে এমন দুটি চারিত্রিক গুণ বা বৈশিষ্ট্য আছে, যা আল্লাহ ভালোবাসেন ও পছন্দ করেন। গুণ দুটি হল (ক) বুদ্ধিমত্তা (খ) লজ্জাশীলতা। (আদাবুল মুফরাদ)
বস্তুত, লাজুকতা মানুষকে পুণ্য কর্মে উদ্যোগী করে, আর লজ্জাশীলতার কারণে সে জান্নাতের দিকে ধাবিত হয়। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, লজ্জা ঈমানের অঙ্গ। আর ঈমানের স্থান জান্নাত। পক্ষান্তরে নির্লজ্জতা দুশ্চরিত্রের অঙ্গ। আর দুশ্চরিত্রতার স্থান জাহান্নাম (বুখারি)। যার লজ্জা নেই, নির্লজ্জ বা বেশরম, বেহায়া; সে সবরকম গুনাহের কাজ অকাতরে করতে পারে।