মো. আমিনুল ইসলাম
সেই ছোট্টবেলা থেকেই আমরা জানি মিথ্যা কথা বলা মহাপাপ। মিথ্যাকে বলা হয় সব পাপের জননী। একটি মিথ্যা থেকে শত শত মিথ্যা ও পাপের উৎপত্তি হয়। মিথ্যাকে চাপা দিতে বা আড়াল করতে গেলে আরও অনেক মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়। শুধু তাই নয়, মিথ্যা বলতে বলতে একটা সময় আসে, যখন মিথ্যা বলতে আর কোনো সংকোচ বা দ্বিধা থাকে না।
মিথ্যাকে শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই ঘৃণা করা হয় না; বরং জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষ মিথ্যাকে ঘৃণা করে। মিথ্যাবাদীকে আল্লাহও অপছন্দ করেন। আল্লাহ রব্বুল আলামিন মিথ্যাবাদীকে সবচেয়ে বড় জালিম হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ বলেন: সেই ব্যক্তির চেয়ে বড় জালিম আর কে, যে আল্লাহতায়ালার ওপর মিথ্যা আরোপ করে এবং একবার তার কাছে সত্য (দ্বীন) এসে যাওয়ার পরও সে তা মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। এমন কাফেরদের ঠিকানা কি জাহান্নামের মধ্যে হওয়া উচিত নয়? (সুরা যুমার, আয়াত-৩২)।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (সা.) বলেছেন, সত্যবাদিতা হচ্ছে শুভ কাজ। আর শুভ কাজ জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। আর বান্দা যখন সত্য কথা বলতে থাকে একসময় সে আল্লাহর কাছে সত্যবাদী হিসেবে পরিচিত হয়। আর মিথ্যা হচ্ছে পাপাচার, যা জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। বান্দা যখন মিথ্যা বলতে থাকে আল্লাহর কাছে একসময় সে মিথ্যুক হিসেবে গণ্য হয়। (বুখারি-৫৭৪৩, মুসলিম-২৬০৭)।
অনেক সময় আমরা অন্যের কথা যাচাই না করে লোকের মুখে শুনেই এদিক-ওদিক বলে বেড়াই, যা মিথ্যার সমতুল্য। রাসূল (সা.) বলেন, কারও কাছে কোনো কথা শোনামাত্রই তা বলে বেড়ানো মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট। (মুসলিম-৯৯৬)।
মিথ্যাবাদীকে মুনাফিকের সঙ্গে তুলনা করা হয়। মিথ্যাবাদীদের শাস্তির ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, এদের মনের ভিতর রয়েছে এক ধরনের ব্যাধি, প্রতারণার কারণে অতঃপর আল্লাহতায়ালা এদের হৃদয়ে একটি রোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন, তাদের জন্য রয়েছে পীড়াদায়ক শাস্তি। কেননা, তারা মিথ্যা বলেছিল। তাদের যখন বলা হয়, তোমরা জমিনে অশান্তি ও বিপর্যয় সৃষ্টি কর না, তখন তারা বলে, আমরাই তো হচ্ছি বরং সংশোধনকারী। জেনে রেখ, এরাই হচ্ছে আসল বিপর্যয় সৃষ্টিকারী, কিন্তু তারা বিষয়টা বুঝে না। (সূরা বাকারা, আয়াত-১০, ১১, ১২)।
মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া মারাত্মক অপরাধ। অথচ এ কাজটি আমরা সাবলীলভাবে সমাজে প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছি। জোর করে অন্যের জমি দখল, সম্পদ অর্জন, অন্যের হক বা অর্থ আত্মসাতের মতো কঠিন পাপ করে অহরহ মিথ্যা বলছি। রাসূল (সা.) বলেন, ‘আমি কি তোমাদের সবচেয়ে বড় গুনাহ সম্পর্কে অবগত করব না? তা হল আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।’ (বুখারি-৬৪৬০)।
মিথ্যা বলা মহাপাপ জানা সত্ত্বেও আমরা প্রতিনিয়ত মিথ্যার মধ্যে ডুবে আছি। মিথ্যা আমাদের মাথার মধ্যে জাঁকিয়ে বসে আছে। ইসলাম ধর্মে মিথ্যাকে সব পাপের মূল উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর মিথ্যার ওপর ভরসা করেই মানুষ জীবনের সবচেয়ে বড় বড় অপরাধ সংঘটিত করে।
আল্লাহ বলেন: ‘মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত-৬১)। ‘এবং তোমরা মিথ্যা কথা বলা পরিহার কর।’ (সূরা হজ, আয়াত-৩০)। ‘আর যারা কুফরি করেছে এবং আমার আয়াতগুলোকে মিথ্যা বলেছে তারাই জাহান্নামের অধিবাসী। তারা সেখানে চিরস্থায়ীভাবে থাকবে।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-৩৯)।
মিথ্যা কোনো মুমিন বান্দার স্বভাব হতে পারে না। যিনি মুমিন মুসলমান তিনি সত্যবাদী। আর সত্য ও মিথ্যা সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী দুটি বিষয়। সুতরাং আমাদের উচিত একজন মুমিন বান্দা হিসেবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সত্যবাদী হওয়া। মিথ্যা পরিহার করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মিথ্যা থেকে রক্ষা করুন। আমীন।