১২ দিন পর বাড়ল ভোটের হার, কারচুপির আশঙ্কায় বিরোধীরা, কড়া হুংকার মমতার

মীযান ডেস্ক: প্রথম দফার ভোটগ্রহণ হয়ে গিয়েছে ১৯ এপ্রিল। তারপর পেরিয়ে গিয়েছে ১২ দিন। ইতিমধ্যে হয়ে গিয়েছে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ। এতদিনেও কত শতাংশ ভোট পড়ল, সেটা সঠিকভাবে জানিয়ে উঠতে পারেনি জাতীয় নির্বাচন কমিশন। তা নিয়ে মঙ্গলবার তুমুল হইচই শুরু করে বিরোধীরা। লাগাতার চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত এদিন সন্ধ্যায় কমিশনের বোধোদয় হল। একসঙ্গেই প্রকাশিত হল দু’দফার ভোটদানের হার। কমিশন জানাল, প্রথম দফায় ৬৬.১৪ শতাংশ ও দ্বিতীয় দফায় ৬৬.৭১ শতাংশ ভোট পড়েছে। অবশ্য ভোটগ্রহণের দিন সন্ধ্যা সাতটায় দেওয়া প্রাথমিক হিসেবে অবশ্য এই দুই হার ছিল যথাক্রমে ৬০ ও ৬০.৯৬ শতাংশ। দু’টি পরিসংখ্যানের ফারাক প্রায় ৬ শতাংশের। সাধারণত এমনটা দেখা যায় না। এ এক বিরাট গরমিল। যার মধ্যে বড় রকমের কারসাজি ও কারচুপি হয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। তাদের দাবি, আগে ভোট শেষ হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এই তথ্য প্রকাশ করা হত। এবার তাতে সময় লেগে গেল ১২ দিন। এমনটা নজিরবিহীন। কেন লাগল এত সময়? সেই প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ, তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন, সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরিরা।

এবারের লোকসভা ভোটে কমিশনের কাজে নজিরবিহীন অনেক কিছুই অবশ্য ধরা পড়ছে। যেমন, প্রতিটি আসনে মোট নথিভুক্ত ভোটারের সংখ্যা নিয়ে কোনও চূড়ান্ত তথ্য নেই তাদের ওয়েবসাইট বা অ্যাপে। যার ফলে ত্রিপুরায় কোথাও কোথাও ভোট পড়েছে ভোটার সংখ্যার থেকে অনেক বেশি। সর্বোচ্চ ১১০ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পড়েছে। বুথ ভিত্তিক তালিকা অবশ্য আছে কমিশনের কাছে। এতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তাবড় ভোট বিশেষজ্ঞ থেকে বিরোধী দলের নেতানেত্রীরা। জনৈক ভোট বিশেষজ্ঞের মতে, কোনও সংসদীয় আসনে নথিভূক্ত ভোটারের সংখ্যা জানা না থাকলে ভোটদানের হারের কোনও অর্থই নেই। অথচ বছর দশেক আগেও এই তথ্যগুলি চাইলেই পাওয়া যেত। একই প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লিখেছেন, এতে তো গণনার সময় নথিভুক্ত ভোটারের সংখ্যায় গরমিলের সম্ভাবনা যথেষ্ট। অর্থাৎ, কারচুপির আশঙ্কা থাকছেই। এমনকী প্রাথমিক ও চূড়ান্ত ভোটদানের হারের ফারাক নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

বিষয়টি নিয়ে সোজাসাপ্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। তাঁর প্রশ্ন, ‘দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণের চারদিন বাদে চূড়ান্ত ভোটদানের হার প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। চারদিন আগে প্রকাশিত প্রাথমিক পরিসংখ্যান থেকে তা লাফিয়ে ৫.৭৫ শতাংশ বেড়েছে। এটা কি স্বাভাবিক?’ এনিয়ে ডেরেক কটাক্ষ করেছেন প্রধানমন্ত্রীকেও। এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে ধ্বংস করে দিতে সংসদে আইন পাল্টে ফেলেছেন মোদি। কমিশনের তো প্রতি দফা ভোটের পর সাংবাদিক সম্মেলন করার কথা। সেটাই বা হচ্ছে না কেন?’ কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ, শিবসেনা (উদ্ধব) প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদীও সমস্বরে কমিশনের ভূমিকার নিন্দা করে তাঁরা বলেন, এবিষয়ে যাবতীয় সন্দেহ দূর করতে কমিশনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এনসিপি (শারদ পাওয়ার) নেত্রী সুপ্রিয়া সুলে কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেছেন। বিরোধীদের অভিযোগ, প্রথম দু’দফায় পরাজয়ের স্পষ্ট আভাস পেয়েছেন মোদি। সেই কারণেই এধরনের নানা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

মুর্শিদাবাদের কান্দিতে ভোটপ্রচারে গিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

এদিকে মুর্শিদাবাদের কান্দিতে ভোটপ্রচারে গিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন তৃণমূলনেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির বিরুদ্ধে ইভিএম মেশিনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন তিনি। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ মমতার। ভোটদানের হার ৫.৭৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে, গতকাল, বুধবার এমনটাই অভিযোগ তৃণমূল নেত্রীর। এর জন্য দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলকে সর্তক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ইভিএম মেশিনগুলিতে কড়া নজরদারি রাখার অনুরোধও করেছেন। গতকাল বুধবার মুর্শিদাবাদের বড়ঞা ব্লকের ডাকবাংলায় নির্বাচনী জনসভায় মমতা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, বিশ্বগুরুকে সমর্থন জানানোর জন্য ওনারা স্পিকটি নট হয়ে বসে আছে। আপনাকে স্যালুট ভয়েস মাস্টার। প্রথম ফেজে একটা হিসেব দিলেন। পরের ফেজে আবার একটা হিসেব দিলেন। আর মঙ্গলবার রাতে আরও একটা হিসেব দিলেন। তাতে ভোটদানের হার একলাফে বেড়ে গেল ৫.৭৫ শতাংশ।

মমতা এদিন আরও বলেন, ১৯ লক্ষ ইভিএম মেশিন মিসিং হয়ে আছে। এত মেশিন কোথায় গেল তার আজ পর্যন্ত কোনও জবাব পাইনি। বিজেপি ওই মেশিন গুলি ব্যবহার করছে। ভোটদানের পর বিজেপি আসল মেশিন বদলে দিচ্ছে। আমাদের সন্দেহ দানা বেঁধেছে। তাই আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে এটা জানতে চাই কোন বিধানসভায় কত ভোট হয়েছে? কোন বুথে কত ভোট হয়েছে? কত শতাংশ ভোট হয়েছে তার বিস্তারিত তথ্য চাই। কমিশনের হিসেব অনুযায়ী ৫.৭৫ শতাংশ ভোট জাম্প হয়েছে। আমাদের দলের পক্ষ থেকে বিষয়টির উপর চিঠি দিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে জানতে চেয়েছি। ইভিএমের চিপ কে তৈরি করেছে সেটাও জানতে চাই।’

ওই জনসভায় তৃণমূল নেত্রীর আরও অভিযোগ, ‘বিজেপি রাতের বেলায় কাউন্টিং সেন্টার গুলিতে যাচ্ছে। যেখানে বিজেপি দুর্বল সেখানে গিয়ে কাউটিং ঘরের তালা ভেঙে এভিএম মেশিন বদলে দিচ্ছে। আমাদের রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী বিজেপির হয়ে তাঁবেদারি করছে। আমাদের উপর নির্যাতন করছে। আমরা কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বলতে চাই। আপনাদের অনেকদিন চাকরি আছে। শুনে রাখুন বিজেপি এবার ক্ষমতায় ফিরবে না। এবারে ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় আসতে চলেছে।’

 

Stay Connected

Advt.

%d bloggers like this: