মীযান ডেস্ক: এবার মধ্য আফ্রিকার দেশ গ্যাবনেও সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বহুকাল ক্ষমতায় থাকা স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করা হয়েছে। গত মাসে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারে সেনা অভ্যুত্থানে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর এবার মধ্য আফ্রিকার দেশ গ্যাবনের প্রেসিডেন্ট আলি বঙ্গোকে উৎখাত করা হল। দেশটিতে একটানা ৫৬ বছর ধরে শাসন ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছিল বোঙ্গো পরিবার। দেশটির শাসনভার এখন সামরিক জান্তার হাতে। সেনাপ্রধান জেনারেল ব্রিস ওলিগুই এনগুয়েমা শুক্রবার নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেন। আফ্রিকার অধিকাংশ দেশের মতোই গ্যাবনও এককালে ফরাসি উপনিবেশ ছিল। এমনকি বাকি সব দেশের মতো নামে স্বাধীন হলেও দেশ তথা সরকার পরিচালিত হত ফরাসিদের স্বার্থে, ফ্রান্সের রিমোট কন্ট্রোলে। নাম কা ওয়াস্তে প্রেসিডেন্ট, সরকার ইত্যাদি ছিল বটে, কিন্তু তারা ছিল ফ্রান্সের একান্ত অনুগত। ১৯৬০-১৯৯৯ পর্যন্ত দেশটি থেকে ২৮ হাজার টন ইউরেনিয়াম হাতিয়ে নিয়েছে ফ্রান্স। এ ছাড়া খনিজ তেল, লোহা, ম্যাঙ্গানিজ, হীরা, টাইটেনিয়ামের মতো বহুমূল্য খনিজ সম্পদের ভাণ্ডার রয়েছে গ্যাবনে। ১৯৬৪ সালে গ্যাবনে ফ্রান্স সমর্থিত প্রেসিডেন্ট লিওন মবা-র বিরুদ্ধে হওয়া অভ্যুত্থানের পর সঙ্গে সঙ্গে তাকে ক্ষমতায় ফেরাতে সেনা পাঠিয়েছিলেন তৎকালীন ফরাসি প্রেসিডেন্ট শার্ল দ্য গল। গ্যাবনে ফ্রান্সের কায়েমী এবং ঔপনিবেশিক স্বার্থের ঐতিহাসিক পরম্পরার দীর্ঘ অন্ধকার ইতিহাস রয়েছে। নানারকম প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ গ্যাবন স্বাধীনতার পরও ছিল ফরাসি সাম্রাজ্যের একান্ত অনুগত। আন্তর্জাতিক মিডিয়া বলছে, গ্যাবনে গত বৃহস্পতিবার যে সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে, তা সাবেক উপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্সের স্বার্থের ওপর ভয়াবহ আঘাত হানবে। এমনকি বৃহত্তর অঞ্চলে ফ্রান্সের অর্থনীতি ও সামরিক স্বার্থের ওপরও তা আঘাত হানতে পারে। বোঙ্গো পরিবারের শাসন চলছিল অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে। এর নেপথ্যে ছিল ফ্রান্সের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। শুধুমাত্র এই আনুগত্যের কারণেই গ্যাবনে সুদীর্ঘ সাড়ে ৫ দশক গদিতে বসিয়ে রাখা হয়েছিল বঙ্গোদের। সে দেশের রাজনীতির হালচাল নির্ধারণে এই সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। কিন্তু গ্যাবনে অভ্যুত্থান এমন এক সময় ঘটেছে, যখন গ্যাবন ও পুরো অঞ্চলে ফরাসি-বিরোধী ভাবাবেগ তীব্র হয়ে উঠেছে। নাইজার, বুরকিনা ফাসো, মালি, সুদান ও গিনির মতো আফ্রিকার একের পর এক দেশে সেনা অভ্যুত্থান হয়ে চলেছে। একথা অনস্বীকার্য, যেকোনো ধরনের ফরাসি-বিরোধী বিক্ষোভ হলে ফরাসি কোম্পানিগুলো, বিশেষ করে খনি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো পাততারি গোটাতে বাধ্য হবে। সর্বোপরি আফ্রিকার দেশগুলি থেকে ফরাসি প্রভাব দ্রুত ক্ষয়িষ্ণু হচ্ছে। এভাবেই ক্রমে নড়বড়ে হচ্ছে ফরাসি মৌরসীপাট্টার ভিত।