মীযান ডেস্ক: গত ২৭ আগষ্ট হরিয়ানার চরখি দাদরি এলাকায় গো-মাংস খাওয়ার অভিযোগ তুলে ২৩ বছরের বাঙালি যুবক সাবির মল্লিককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পাশবিকভাবে পিটিয়ে হত্যা করে ‘গো-রক্ষক’ বাহিনী। তারই প্রতিবাদে বুধবার ৪ সেপ্টেম্বর কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে বিভিন্ন গণসংগঠন। ‘জাস্টিস ফর সাবির’ ব্যানারে প্রেস কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেন সংগ্রামী আদিবাসী মঞ্চ, সংবিধান বাঁচাও দেশ বাঁচাও মঞ্চ, এপিসিআর, আদিবাসী মানবাধিকার সংগঠন, সদ্ভাবনা মঞ্চ, বন্দীমুক্তি কমিটির নেতারা।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, দোষীদের গ্রেফতার করা হলেও তাদের যে বেশিদিন জেলে থাকতে হবে না, বা জামিনে মুক্তি পেলে ফুলমালা দিয়ে বরণ করা হবে, সেটা হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। সাবিরের বাড়িতে থাকা মাংস ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। মহঃ আখলাকের ঘটনার পুনরাবৃত্তি।
উল্লেখ্য, গণপিটুনিতে নিহত সাবির মল্লিক দক্ষিণ ২৪পরগণার বাসন্তীর বাসিন্দা। তার স্ত্রী ও ২ বছরের এক কন্যা আছে। একই সঙ্গে মহারাষ্ট্রে একজন বৃদ্ধ মুসলিমকে গরুর মাংস নিয়ে যাচ্ছে বলে গুজব ছড়িয়ে চলন্ত ট্রেনে হেনস্থা, অপমান ও নির্যাতন করছে। তিনি বারবার বলছেন, এটা গরু নয়, খাসীর মাংস। ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। আমরা এই সকল ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। আমাদের আশঙ্কা হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচনের আগে এরকম ঘটনা আরও ঘটবে।
আপনাদের স্মরণে আছে, লোকসভা নির্বাচনের আগে ইলেক্টোরাল বন্ডের যে তালিকা প্রকাশ হয়েছিল, তাতে দেখা যাচ্ছে বিজেপি গো-মাংস রপ্তানিকারক কোম্পানির কাছ থেকে মোটা টাকা চাঁদা নিয়েছে।
দ্বিচারিতায় বিজেপি-আরএসএস একমেব অদ্বিতীয়ম। যার কোনও বিকল্প নেই। নারীর বিরুদ্ধে অপরাধ ও ধর্ষণের তালিকায় শীর্ষে থাকা (১৩৫ জন বিধায়কের মধ্যে ৫৪ জন বিজেপির ও ১৭ জন বিজেপির জোটসঙ্গী চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম পার্টির) বিজেপির নেতা-কমীরা গরুকে মা বানিয়ে গো-মাংস খাওয়াকে রাজ্যে রাজ্যে নিষিদ্ধ করছে, আর গোমাংস রপ্তানিকারক কোম্পানির থেকে মোটা টাকা নিচ্ছে। আর এই সমস্ত ঘটনায় পৃষ্ঠপোষকতা করছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আপনাদের মনে আছে মালদার শ্রমিক আফরাজুলের খুনী শম্ভু রেগারকে বিজেপি নির্বাচনে প্রার্থী করেছিল।
আজকের প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন ‘বন্দী মুক্তি কমিটি’র ছোটন দাস, কবি প্রসূন ভৌমিক, সংবিধান বাঁচাও মঞ্চের ভানু সরকার, আদিবাসী রক্ষা মঞ্চের সুবল সরকার ও শা’দাব মাসুম প্রমুখ। উপস্থিত সকলে নিম্নোক্ত দাবিগুলি তুলে ধরেন।
১) দোষীদের আইন অনুযায়ী কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
২) গোদি মিডিয়া ও সামাজিক মাধ্যমে ইসলাম-বিদ্বেষী প্রচার অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
৩) হরিয়ানা সরকারকে নিহতের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৪) কে কী খাবে, আর কে কী খাবে না – সেটা মানুষ ঠিক করবে। এই সংক্রান্ত সমস্ত আইন ২০১৪ ও নিষেধাজ্ঞা বাতিল করতে হবে।