মীযান ডেস্ক: শেষমেষ জানা গেল, সংসদে হামলাকারীরা বিজেপি সাংসদের অতিথি! খবরে প্রকাশ, দুই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি মহীশুরের বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিনহার অতিথি। আজ বুধবার পার্লামেন্টের অধিবেশন চলাকালে আচমকা তারা গ্যালারি থেকে নীচে ঝাঁপ দেয় এবং সাংসদদের বসার আসনে গিয়ে হলুদ রঙের গ্যাস স্প্রে করতে থাকে। ওই সময় তাঁদের মুখে ছিল, ‘জয় ভীম’ স্লোগান। আচমকা এই ঘটনায় লোকসভায় ছড়ায় ব্যাপক আতঙ্ক। হতভম্ব হয়ে গিয়ে নিরাপত্তার কথা ভেবে সাংসদরা নিজ নিজ আসন ছেড়ে ছোটাছুটি করতে থাকেন। গোটা ঘটনায় নিরাপত্তায় বিরাট গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে বিরোধী দলগুলো। এদিকে, এই ঘটনায় উঠছে একাধিক প্রশ্ন। কীভাবে বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিনহার পাস হাতে পেল হামলাকারীরা? নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে কীভাবে গ্যাস বম্ব নিয়ে পার্লামেন্টের ভেতরে অধিবেশন কক্ষে পৌঁছয় অভিযুক্তরা?
এই ঘটনায় দিল্লি পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা। তিনি বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, সেই ধোঁয়ায় বিশেষ কোনও কিছু ছিল না। তা প্রতিবাদ করার জন্যই ব্যবহার হয়েছিল। ফলে আতঙ্কের কারণ নেই।”
এখনও পর্যন্ত যা তথ্য মিলছে তা থেকে দাবি করা হচ্ছে, ওই দুই ব্যক্তির সঙ্গে ছিল স্মোক গ্রেনেড। যা জুতোর ভিতরে লুকানো ছিল। কিন্তু কী করে তারা তা পেল, এর পিছনে কোনও গোষ্ঠীর হাত আছে কিনা তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। উল্লেখ্য, এদিনই সংসদে হামলার ২২ বছর পূর্তি। সেদিনই এই হামলার ফলে দুইয়ের মধ্যে কোনও যোগ আছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
সংসদে হামলার ২২ বছর
২২ বছর পূর্ণ হল সংসদে জঙ্গি হানার। ২০০১ সালে আজকের দিনেই ১৩ ডিসেম্বর ঘটেছিল সেই ‘কাপুরুষোচিত’ হামলা। সেই ঘটনায় শহিদ জওয়ানদের স্মৃতিতে সংসদে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রী ও রাজ্যসভার চেয়ারম্যান তথা উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় সাক্ষাৎ করেন নিহত জওয়ানদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ১৩ ডিসেম্বর পাঁচ লস্কর ও জইশ জঙ্গি ঢুকে পড়েছিল সংসদ চত্বরে। শুরু হয় গুলির লড়াই। জঙ্গিদের নিকেশ করা গেলেও প্রাণ হারান আট জওয়ান। নিহত হন সংসদের এক মালিও। সেই ঘটনাকে স্মরণে রেখে শহিদ জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী মোদি, লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, বিজেপির জাতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা প্রমুখ।
‘ফাঁসি দেওয়া উচিত’, মত হামলাকারীর বাবার
কোনও ভুল করলে ফাঁসি দেওয়া হোক। সাফ জানালেন সংসদে হামলাকারী ডি মনোরঞ্জনের বাবা দেবরাজ। অপর অভিযুক্ত নীলম সিংয়ের মায়ের মতে, এই হামলা সম্পর্কে তারা কিছুই জানতেন না। সংসদে জঙ্গি হামলার ২২ বর্ষ পূর্তিতেই লোকসভার অধিবেশন চলাকালীন এদিন গ্যাস নিয়ে হামলা চালায় দুই ব্যক্তি। আটক করা হয়েছে ৪ জনকে। এখনও পলাতক জড়িত আরও ২ অভিযুক্ত।
প্রাথমিকভাবে ৪ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে আইবি। সংসদের ভিতরে ঢোকে সাগর শর্মা ও মনোরঞ্জন ডি। মাইসুরুর এক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পড়ুয়া সাগর। মনোরঞ্জনও মাইসুরুর বাসিন্দা। বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা দুজনের মধ্যে একজন মহিলা। হরিয়ানার বাসিন্দা ওই মহিলার নাম নীলম সিং। অপরজন মহারাষ্ট্রের অমল শিণ্ডে। ধৃতদের জেরার পাশাপাশি তাঁদের বাড়িতে গিয়েও তল্লাশি শুরু করে স্থানীয় পুলিশ ও গোয়েন্দা আধিকারিকরা।
বেকারত্বের প্রতিবাদ জানাতে চেয়েছিলাম: হামলাকারী
আটক করার সময়ে নীলম জানান, বেকারত্বের প্রতিবাদ করতে চেয়েই তাঁদের এই পদক্ষেপ। ‘তানাশাহি নেহি চলেগা’, ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগানও শোনা যায় তাঁর মুখে। একই কথা বলেন তাঁর মাও। হরিয়ানার ঝিন্দে বসে তিনি জানান, “চাকরি না পাওয়া দীর্ঘদিন খুব চিন্তিত ছিল নীলম। ওর সঙ্গে নিয়মিত কথা হলেও দিল্লির এই হামলা নিয়ে কিছুই জানতাম না। বারবার বলত, এত পড়াশোনা করে চাকরি না পাওয়ার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো।”
তবে আরেক অভিযুক্ত মনোরঞ্জনের বাবার গলায় একেবারে উলটো সুর। তিনি সাফ বলেন, “এটা অন্যায়, কারোওরই এমন কাজ করা উচিত নয়। যদি আমার ছেলে ভালো কাজ করত তাহলে অবশ্যই সমর্থন করতাম। কিন্তু ভুল করলে অবশ্যই ধিক্কার জানাব। আমার ছেলে কোনও ভুল করে থাকলে ওকে ফাঁসি দেওয়া উচিত।” উল্লেখ্য, হামলাকারী ৬ আততায়ী একযোগে হামলা চালিয়েছে নাকি আলাদা আলাদা উদ্দেশ্যে তারা সংসদে ঢুকেছিল, সেই নিয়ে তদন্ত চলছে। সংসদে হামলা চালানো নিয়ে খলিস্তানি হুঁশিয়ারির পরেই গ্যাস অ্যাটাকের ঘটনায় নানা মহলে উঠছে প্রচুর প্রশ্ন।