দুনিয়ার সফর শেষে পরপারে আরবি-ফারসির কিংবদন্তী অধ্যাপক রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত বদিউর রহমান সাহেব

মীযান ডেস্ক: দুনিয়ার সফর শেষ করে পরপারে পাড়ি দিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক বদিউর রহমান সাহেব। আরবি সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল এই অনন্য উচ্চতার ব্যক্তিত্ব মঙ্গলবার ১৯ সেপ্টেম্বর সকালে ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত আরবি ভাষা সাহিত্যের দিকপাল বদিউর সাহেব ছিলেন অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি। বিশাল জ্ঞান ও পাণ্ডিত্যের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও অহংকার তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি এবং ফারসি সাহিত্যের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান এই অধ্যাপক তাঁর ছাত্রদের কাছে ‘বিআর স্যার’ নামে বেশি পরিচিত ছিলেন।

বাঙালি মুসলমান সমাজের অন্যতম প্রথম সারির একজন বুদ্ধিজীবী ছিলেন। ছিলেন সত্যিকার অর্থে একজন শিক্ষাবিদ। তাঁর ছাত্ররা এতটাই ভক্ত ছিলেন যে বদিউর রহমান সম্পর্কে তারা একটা অন্যরকম অনুভব করেন। আরবি ভাষায় পণ্ডিত হওয়া সত্ত্বেও বাংলা এবং অন্যান্য ভাষাতেও তিনি ছিলেন সমানভাবে দক্ষ। বলা যেতে পারে বর্তমান সময়ে তিনি ছিলেন বাঙালি মুসলিম সমাজের একজন স্তম্ভ ও অভিভাবক।

ইদানিংকালে এরকম মানুষ, এরকম শিক্ষাবিদ সচারচর দেখা যায় না। বর্তমান সময়ে অধিকাংশ শিক্ষক শিক্ষকতাকে পেশা হিসাবে নিয়েছেন। বদিউর সহেবরা শিক্ষকতাকে নেশা হিসাবে নিয়েছিলেন, পেশা হিসাবে নয়। তাই তাঁরা অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীর জন্ম দিয়েছিলেন, যারা আজ স্বমহিমায় সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।

অধ্যাপক বদিউর রহমানের মতো শিক্ষাবিদের দৈহিক মৃত্যু হলেও বেঁচে থাকবেন তার হাতে তৈরি নৈতিক ও মূল্যবোধযুক্ত ছাত্র সমাজের মধ্যে। যেসব যোগ্য ছাত্র আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে মূল্যবোধের শিক্ষাকে আগামী প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চারিত করছেন তাদের মধ্যে বেঁচে থাকবেন, অধ্যাপক বদিউর রহমান এর মতো শিক্ষাবিদরা।

নিজ সল্টলেকের বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। এ দিন আসর নামাযের পর বহু বিশিষ্টজনের উপস্থিতিতে তাঁর জানাযা হয় এবং গোবরা-১ কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়। গত ৯ সেপ্টেম্বর তাঁকে অসুস্থ অবস্থায় আমরি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসার পর সোমবারেই তিনি সেখান থেকে বাড়ি ফেরেন। পরদিন মঙ্গলবার সকালে তিনি ইন্তেকাল করেন।

১৯৮৩ সালে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত হন। দীর্ঘ ৩৩ বছর শিক্ষকতার শেষে ২০১৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নেন। তারপর আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় আরবি বিভাগের ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মেম্বার, সেনেট মেম্বার, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল-সহ নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনি বড় বড় দায়িত্ব পালন করেছেন। বিদেশের মাটিতেও তাঁর বহু গুণগ্রাহী এবং ছাত্রছাত্রী রয়েছে। তিনি আরবি ভাষা এবং সাহিত্য বিষয়ক বেশ কয়েকটি মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন। তার মধ্যে ইংরেজি ভাষায় রচিত ‘হিস্ট্রি অফ আরাবিক লিটারেচার’ এবং ‘এসেজ অন ত্বহা হুসাইন’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আরবি, বাংলা এবং ইংরেজি – তিন ভাষাতেই তাঁর বহু প্রবন্ধ-নিবন্ধ, গল্প, কবিতা ও রম্যরচনা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

Stay Connected

Popular News

Advt.

%d bloggers like this: