বেশি চাপ দিলে চীনের দিকে চলে যাবে বাংলাদেশ, আমেরিকাকে ভারতের বার্তা

মীযান ডেস্ক:  বাংলাদেশের পার্লামেন্ট নির্বাচন আসন্ন। এই মুহূ্র্তে হাসিনা সরকারকে বেশি চাপ দিলে বাংলাদেশ চীনের দিকে চলে যেতে পারে। তাছাড়া ঢাকার ওপর অতিরিক্ত মার্কিন চাপের কারণে বাংলাদেশে চরমপন্থী ও মৌলবাদী শক্তির হাতকে শক্তিশালী করতে পারে। এর প্রভাব পড়তে পারে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায়। ওয়াশিংটনকে এভাবেই নিজেদের উদ্বেগের কথা জানাল নিকটতম প্রতিবেশি দেশ ভারত।

হিন্দুস্তান টাইমস-এর আন্তর্জাতিক বিভাগের সম্পাদক রেজাউল লস্কর এক বিশেষ প্রতিবেদনে লিখেছেন, সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ করতে চায়নি। তারা জানান, সাম্প্রতিক বেশ কিছু আলোচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নিজেদের উদ্বেগের বিষয়টি ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়। নয়াদিল্লি মনে করে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ইস্যুতে মার্কিন চাপ বাংলাদেশকে চীনের দিকে ঠেলে দিতে পারে, যা এই অঞ্চলের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।

যদিও ভারতের পক্ষ থেকে আমেরিকাকে পক্ষ স্পষ্ট করে বলা হয় যে, তারাও বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। কিন্তু এই বিষয়ে অত্যধিক চাপ প্রয়োগ চরমপন্থী ও মৌলবাদী শক্তিকে উৎসাহিত করবে। এসব অশুভ শক্তিকে হাসিনা সরকার দমন করতে সক্ষম হয়েছে। সুতরাং হাসিনা সরকার বিদায় নিলে সেইসব অশুভ শক্তি পুনরায় মাথাচাড়া দেবে বলে আশঙ্কা ভারতের।

ওয়াশিংটন চলতি বছরের মে মাসে হুমকি দিয়ে বলে, আসন্ন নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত বাংলাদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমকে তাদের স্বাধীনভাবে মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়গুলোকে নিয়ামক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে গত ২৩ আগস্ট দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এরপর ভারতের চাপ ও উদ্বেগ বেড়েছে। তারা মনে করে, মার্কিন চাপের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতির সুযোগ নেবে বেজিং। চীনা বিদেশ মন্ত্রকের এক বিবৃতিতে বলা হয়, জোহানেসবার্গের বৈঠকের পর চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বহিরাগত হস্তক্ষেপের বিরোধিতায় বাংলাদেশকে সমর্থন করে চীন।’ একইসঙ্গে বেইজিং তাদের মৌলিক স্বার্থে একে অপরকে সমর্থন করার জন্য ঢাকার সাথে কাজ করবে।

শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে টানা তিন দফায় ক্ষমতায় আছেন। তিনি চতুর্থ মেয়াদেও অভূতপূর্ব বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। তাকে প্রতিবেশী ভারতের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রদের একজন হিসেবে দেখা হয়। ভারতবিরোধী বিদ্রোহীগোষ্ঠীগুলোকে দমন করার পাশাপাশি, তার সরকার উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনের জন্য প্রধান বন্দরগুলো ব্যবহারের অনুমতিসহ বিদ্যুৎ এবং বাণিজ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরো গভীর করেছে।

বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে পরবর্তী নির্বাচন হওয়ার কথা। এই ইস্যুতে আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে হাসিনা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির ফলে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। তারা এরই মধ্যে বেশ কিছু বড় সমাবেশ আয়োজন করেছে।

প্রতিবেদনে লেখা হয়, বিশেষ করে ১৪ আগস্ট বাংলাদেশের প্রাক্তন এমপি আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা জামায়াত নেতা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্রয়াণের পর বিএনপির ঘনিষ্ঠ মিত্র জামায়াতে ইসলামীর নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা নয়াদিল্লির উদ্বেগের কারণ। আবার গত ১০ জুন ঢাকায় ১০ বছর পর বিশাল সমাবেশ আয়োজন করে বাংলাদেশ জামায়াত। আবার সাঈদীর রহস্যমৃত্যুর পর তাদের লোকেরা আগের থেকে এখন অনেক বেশি চাঙা হয়ে উঠেছে।

ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আমন্ত্রণে আওয়ামী লীগের এক প্রতিনিধিদল চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে নয়াদিল্লি সফর করে। তারা বিজেপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং ভারতের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে তারা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরেন বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে।

Stay Connected

Advt.

%d bloggers like this: