মীযান ডেস্ক: আদালতের নির্দেশে সাংসদ পদ ফিরে পেয়েই লোকসভায় ঝড় তুললেন কংগ্রেস নেতা তথা বিরোধী মহাজোটের অন্যতম মুখ রাহুল গান্ধী। বুধবার রাহুল-ঝড়ে যেন লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল ট্রেজারি বেঞ্চ। সংসদে ফেরার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে বিতর্কে অংশ নিয়ে যেন বিদ্যুতের মতো জ্বলে উঠলেন রাহুল। লোকসভায় এদিন কোনও রাখঢাক না রেখে সরাসরি আক্রমণ করলেন প্রধানমন্ত্রীকে। বললেন, মণিপুরে তিনমাস ধরে রোজ খুন হচ্ছে মানুষ। ভারতমাতার খুনি মোদি! এককথায় বুধবার প্রথম দিনেই দেশবাসীর মন একরতম জয় করে নিলেন রাহুল। অনেকদিন পর লোকসভায় রাহুলকে ফিরে পেয়ে বিরোধী জোট যেন মৃতসঞ্জীবনীর সন্ধান পেল।
যদিও শুরুতে মনে হয়নি এতটা ঝাঁঝালো ভাষণ দেবেন কংগ্রেসের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড সোনিয়া-পুত্র। টি-২০ ম্যাচের মতো শেষ কয়েক মিনিটে ঝড় তুললেন। অগ্নিগর্ভ মণিপুর পরিদর্শনের অভিজ্ঞতার রসদকে ব্যবহার করলেন বারুদ হিসেবে। ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রার কথা টেনে বললেন, ‘ভারত স্রেফ একটা দেশ নয়। ভারত হল ১৪০ কোটি মানুষের হৃদয়ের কথা। আর তাকেই মণিপুরে হত্যা করা হয়েছে। মণিপুরে ভারতমাতাকে খুন করেছেন মোদি। সেই জন্যই বিভিন্ন দেশ সফর করলেও প্রধানমন্ত্রী একবারও মণিপুর যাননি। আপনি দেশের রক্ষক নন, খুনি। দেশপ্রেমী নন, আপনি দেশদ্রোহী!’
এখানেই থামেননি রাহুল। সামনের আসনে বসা সোনিয়া গান্ধীকে দেখিয়ে আবেগপ্রবণ গলায় বলেন, ‘এখানে আমার এক মা বসে আছেন। আর মণিপুরে আর এক মাকে খুন করা হচ্ছে… ভারতমাতা। ভারতীয় সেনা একদিনেই মণিপুর শান্ত করতে পারে। কিন্তু তাদের সেই সুযোগ দিচ্ছেন না প্রধানমন্ত্রী। গোটা দেশে তিনি অশান্তির আগুন লাগাতে চাইছেন। মণিপুরে কেরোসিন ছড়িয়েছেন, এবার হরিয়ানাতেও করছেন।’
রাহুল ভারতমাতাকে খুনের প্রসঙ্গ তুলতেই রে রে করে ওঠে বিজেপি এমপিরা। মন্ত্রী কিরণ রিজিজু বলেন, ‘উত্তর-পূর্ব ভারতকে খুন করেছে কংগ্রেস। রাহুল গান্ধীকে ক্ষমা চাইতে হবে।’ পাল্টা সোচ্চার হন অধীর চৌধুরী, গৌরব গগৈ, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘ওয়েলে’ নেমে আসেন বিরোধীরা। শুরু হয়ে যায় হল্লাবোল। বিরোধীদের ‘রাহুল’ ‘রাহুল’, ‘ইন্ডিয়া ইন্ডিয়া’ এবং পাল্টা বিজেপির ‘মোদি মোদি’ স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে লোকসভা।
প্রধানমন্ত্রী অবশ্য এদিন লোকসভায় আসেননি। বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আজ বৃহস্পতিবাদ সংসদে জবাব দেবেন প্রধানমন্ত্রী। তার আগে এদিন মোদিকে দাম্ভিক বলেও তোপ দাগেন রাহুল। বক্তৃতা তিনি নোট করে এনেছিলেন আই-প্যাডে। যদিও দু’বার ছাড়া বাকি সময় না-দেখে বক্তব্য রাখেন। সুযোগ বুঝে টেনে আনেন আদানি প্রসঙ্গও। পোস্টার দেখিয়ে কটাক্ষ করেন, কুম্ভকর্ণ আর মেঘনাদের মতো দু’জনের কথাই মাত্র শুনতেন রাবণ। ঠিক তেমনি নরেন্দ্র মোদি স্রেফ দু’টি লোকের কথা শোনেন, অমিত শাহ আর আদানি।’