মীযান ডেস্ক: ‘অবৈধ’ বা ‘বাতিল’ হওয়া বিয়ের ক্ষেত্রেও বাবা-মায়ের সম্পত্তি থেকে সন্তানদের বঞ্চিত করা যাবে না। হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের অধীনে তারা পৈতৃক সম্পত্তির অধিকার দাবি করতে পারবে। বৈধ বিয়ের সন্তানদের মতোই উত্তরাধিকার সংক্রান্ত সমস্ত সুযোগ-সুবিধা সেইসব অবৈধ সম্পর্কের ফসল বা জারজ সন্তানরাও পাবে। তবে শুধুমাত্র হিন্দু উত্তরাধিকার আইনেই এই অধিকার দাবি করতে পারবে ওই ধরনেরসন্তানরা। ২০১১ সালে দায়ের হওয়া এক মামলায় শুক্রবার এমনই রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। তবে এর জন্য বৃদ্ধি করা হবে হিন্দু বিবাহ আইন (১৯৫৫)-এর ১৬ (৩) ধারার পরিসর।
২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্টের দুই সদস্যের বেঞ্চ রায় দিয়েছিল, ‘অবৈধ’ সম্পর্কের সন্তানরা কেবলমাত্র বাবা-মায়ের স্বোপার্জিত সম্পদের অধিকার দাবি করতে পারবেন। কিন্তু পৈতৃক বা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তির ভাগ তারা পাবে না। এদিন সেই রায় খারিজ করে দেয় দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডি.ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ। বিচারপতিরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, স্বোপার্জিত এবং উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত— বাবা-মায়ের দুই ধরনের সম্পত্তিতেই অধিকার দাবি করতে পারবেন ওই সন্তানরা। অবশ্য হিন্দু উত্তরাধিকার আইন পশ্চিমবঙ্গ এবং অসম ছাড়া সমগ্র ভারতেই প্রযোজ্য।
উল্লেখ্য, হিন্দু বিবাহ আইনে অবৈধ বিয়েকে ‘ভয়েড অ্যাব ইনিশিও’ তকমা দেওয়া হয়েছে। লাতিন এই শব্দবন্ধের অর্থ, ‘শুরু থেকেই অবৈধ’। যদিও সেই আইনেই এ ধরনের ‘বিবাহিত’ দম্পতির সন্তানদের সমান অধিকার ও মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। তবে আইনের ১৬ (৩) ধারায় বলা হয়েছে, এই সন্তানরা শুধুমাত্র বাবা-মায়ের অর্জিত সম্পত্তিরই অধিকার দাবি করতে পারবেন। আর এখানেই প্রশ্ন তোলেন মামলাকারী, হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের আওতায় যৌথ পরিবারে বাবা-মায়ের সম্পত্তি কীভাবে নির্ধারণ করা হবে? এদিন তারই নিষ্পত্তি হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে।
বেঞ্চ পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, ‘অতীতে যা অবৈধ ছিল তা আজ বৈধ হতে পারে। বৈধতার ধারণাটি সামাজিক ঐক্যমত থেকেই জন্মায়। একটি পরিবর্তনশীল সমাজে আইন কোনওভাবে স্থির থাকতে পারে না।’ উল্লেখ্য, এর আগে একইভাবে মাদ্রাজ হাইকোর্ট জানিয়েছিল লিভ ইন বা লিভ টুগেদার সম্পর্কের ক্ষেত্রে সন্তানরা বাবা-মায়ের অর্জিত এবং বংশানুক্রমিক সম্পত্তি অংশীদারিত্ব পাবে। সেই রায়কেই এদিন মান্যতা দিল সুপ্রিম কোর্ট। সমাজবিজ্ঞানীদের একাংশ এই রায়ের সমালোচনা করে আদালতের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই প্রশ্ন তুলেছেন, এভাবে পরোক্ষে অবৈধ সম্পর্ক, পরকীয়া, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ককে বৈধতা দেওয়া হল না কি?