হরিয়ানায় মুখ্যমন্ত্রী-উপমুখ্যমন্ত্রী দ্বৈরথ, মহাফাঁপরে বিজেপি জোট সরকার

মীযান ডেস্ক:  হরিয়ানায় বিরোধীদের অভিযোগ, রাষ্ট্রীয় মদতপুষ্ট হিংসা। অর্থাৎ হরিয়ানার সহিংসতা সম্পূর্ণ পরিকল্পনামাফিক বা ম্যানমেড। কারণ, মণিপুর হোক কিংবা হরিয়ানা—সর্বত্র নীরব দর্শকের ভূমিকায় শাসক দল বিজেপি। কারণ, উভয় রাজ্যেই রয়েছে ডাবল ইঞ্জিন সরকার।উভয় রাজ্যেই হিংসা মোকাবিলায় পুলিশ-প্রশাসনের ব্যর্থতা প্রকট। একতরফা জাতিগত দাঙ্গা বা সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে অশান্তির আগুন ছড়াচ্ছে। মণিপুরের উপত্যকা কুকি শূন্য। আবার পাহাড়ি এলাকা মেইতেই শূন্য। উল্লেখ্য, কুকিরা হল খ্রিস্টান এবং মেইতেইরা হিন্দু।

এদিকে হরিয়ানায় হিংসা দাবানলের মতো ত্বরিৎগতিতে পৌঁছে গিয়েছে অন্য জেলায়। পলওয়ল থেকে সোনা রোড—অসংখ্য দোকান ভস্মীভূত। সবই মুসলিমদের। মসজিদের ইমাম-সহ মৃত্যু বেড়ে ৬। সাইবার সিটি গুরুগ্রামে একের পর এক সেক্টরে হিংসা ছড়িয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে স্কুল-কলেজ, অফিস কাছারি সবই বন্ধ রাখতে হয়েছে। সিংহভাগ কর্পোরেট অফিসের কর্মীদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ ফরম্যাটে। কোথাও ১৪৪ ধারা, কোথাও কার্ফু। আর আগুন নেভানোর পরিবর্তে বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের ভূমিকা কী?

প্রতিবেশি রাজ্য উত্তরপ্রদেশের নয়ডাতেও বজরং দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মিছিল, সমাবেশ, হুমকির দাপট দেখা গিয়েছে দিনভর। দিল্লি পুলিসকে সতর্কবার্তা জারি করতে হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু রাস্তা। সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করেছে। সর্বোচ্চ আদালত দিল্লি পুলিসকে কঠোর ভাষায় বলেছে, পদযাত্রা অথবা সমাবেশ থেকে কোনওরকম বিদ্বেষমূলক বা প্ররোচনামূলক ভাষণ দেওয়া যাবে না। কিন্তু কট্টর গেরুয়া শিবির সে সবে কর্ণপাত করছে না।
একদিকে চলছে সংসদের বাদল অধিবেশন। দিল্লির রাস্তায় রাস্তায় দেওয়া হচ্ছে উগ্র উসকানি ও বিদ্বেষমূলক বক্তৃতা। বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলছে, বিজেপি শাসিত রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের দুর্বলতা প্রত্যেকটি ঘটনায় বেআব্রু হয়ে পড়ছে।

অন্যদিকে এনডিএ-র শরিকদের মধ্যেই শোনা যাচ্ছে উল্টো সুর। গুরুগ্রামের এমপি তথা মোদি সরকারের অন্যতম মন্ত্রী রাও ইন্দ্রজিৎ সিং ইতিমধ্যেই এই হিংসার জন্য বিশ্ব হিন্দু পরিষদকে দায়ী করেছেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘ধর্মীয় শোভাযাত্রায় এত অস্ত্র কেন? কে এই অস্ত্র-মিছিলের অনুমতি দিয়েছে? মিছিল থেকেই প্ররোচনা দেওয়া হয়েছে কি না সব তদন্ত করা হবে।’

এখানেই শেষ নয়, বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করে তাঁকে হরিয়ানার ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্টও দিয়েছেন তিনি। আর এই ঘটনাক্রমের মধ্যেই প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে হরিয়ানায় বিজেপি জোট সরকারের মধ্যে পরস্পরবিরোধী অবস্থান ও বিবৃতি। একদিকে ইন্দ্রজিৎ সিংয়ের সমর্থনে দাঁড়িয়ে গিয়েছেন শরিক জননায়ক জনতা পার্টির নেতা ও উপমুখ্যমন্ত্রী দুষ্মন্ত চৌতালা। আর উল্টো দাবি করছেন মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর। চৌতালা স্পষ্ট বলেছেন, ‘বিশ্ব হিন্দু পরিষদ যে শোভাযাত্রা করেছে, তার আগাম তথ্য তারা দেয়নি কেন? পুলিসের কাছে কোনও খবর ছিল না কেন? স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত নুহ জেলায় এমন সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হয়নি। এর তদন্ত করে দোষীদের কঠোরতম সাজা দেওয়া হবে।’ আর মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মিছিলের ওপরেই নাকি আক্রমণ করা হয়েছে এবং গোটা ঘটনা পরিকল্পিত। অর্থাৎ সব মিলিয়ে বলা যায় হরিয়ানায় মুখ্যমন্ত্রী ও উপমুখ্যমন্ত্রীর দোষারোপ ও পাল্টা দোষারোপের জেরে মহা ফাঁপরে পড়েছে জোট সরকার।

Stay Connected

Advt.

%d bloggers like this: