মীযান ডেস্ক: বিজেপি দলের অন্দর মহলে প্রবল গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের জেরে আসন্ন ৫ রাজ্যের ভোটে কাউকেই মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হিসেবে এবার তুলে ধরেনি গেরুয়া শিবির। এবার দলের বাইরে এনডিএ জোটেও কার্যত গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি চলছে। এক নয়, একাধিক রাজ্যে এই পরিস্থিতি সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ, জেপি নাড্ডারা। একিদেক টিম ইন্ডিয়া-র মোকাবিলা করা, আবার একইসঙ্গে নিজেদের এনডিএ জোটকে ভাঙনের হাত থেক রক্ষা করা – সব মিলিয়ে সাঁড়াশি চাপে পড়ে জোট সামলাতে একেবারেই নাজেহাল মোদি-শাহরা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিজেপির অন্দরে এবং এনডিএ জোটে একপ্রকার স্নায়ুযুদ্ধ বা গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কর্ণাটকে গো-হারার পর বিজেপির নজরে ছিল তামিলনাড়ু। কিন্তু জোট থেকে বেরিয়ে গিয়ে গেরুয়া শিবিরের সেই অঙ্ক একপ্রকার ভেস্তে দিয়েছে জয়ললিতার দল এআইএডিএমকে। লোকসভা ভোটের ঠিক আগে যা বড়সড় ধাক্কা বিজেপির কাছে। ইতিমধ্যেই ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম নেতা শরদ পাওয়ারের সঙ্গে একপ্রস্থ বৈঠক করেছেন এআইএডিএমকে-র শীর্ষ নেতারা। সেখানে তারা বিরোধী মহাজোটে শামিল হওয়ার ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে সম্মত হয়েছে।
ইতিমধ্যে বিহারে এনডিএ-র শরিকরা আসন নিয়ে নিজেদের মধ্যে দড়ি টানাটানি শুরু করায় কপালে ভাঁজ বেড়েছে বিজেপির। সবেমাত্র এনডিএতে যোগ দিয়েছে জিতনরাম মাঝির হিন্দুস্তান আবাম মোর্চা এবং চিরাগ পাসোয়ানের লোকজনশক্তি পার্টি। এই দুই দলের ভোটব্যাঙ্ক মূলত অনগ্রসর শ্রেণি। রামবিলাসের পুত্র চিরাগ পাসোয়ানের কেন্দ্র হল বিহারের জামুই। এখান থেকেই রামবিলাস জিততেন। চিরাগও এখানকারই সাংসদ। কিন্তু হঠাৎ বুধবার জিতনরাম তোপ দাগেন, ‘জামুই আসনে আমরা লড়াই করব। ওই কেন্দ্র মুশাহর সম্প্রদায়ের।’
এতে ক্ষুব্ধ চিরাগ পাসোয়ান বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বকে ক্ষোভ ও নালিশ করেছেন। কিন্তু তাতেও ডোন্ট কেয়ার মনোভাব জিতনরামের। দফায় দফায় একই দাবি করে চলেছেন তিনি। এমনিতেই নীতীশ কুমার এনডিএ জোট ছাড়ায় বিজেপি বিহারে যথেষ্ট নার্ভাস। দলীয় রিপোর্টেই স্বীকার করা হয়েছে, ২৪ এর লোকসভা ভোটে বিজেপির আসন কমবে বিহারে। তাই চিরাগ এবং জিতনরামকে জোটে নেওয়া। কিন্তু দুজনের বিরোধে নতুন করে অস্বস্তিতে পড়েছে বিজেপি।
হরিয়ানায় দর কষাকষি করছে দুষ্যন্ত চৌতালার জননায়ক জনতা পার্টি। রাজ্যের প্রায় অর্ধেক আসন চেয়ে বসেছে এই দল। যা বিজেপির পক্ষে মেনে নেওয়া অসম্ভব। কিন্তু দাবি মানা না হলে দুষ্যন্ত জোট ছেড়ে দেবেন কিনা, সে ব্যাপারে জল মাপছে বিজেপি। মধ্যপ্রদেশে প্রার্থী তালিকায় মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের নাম না থাকায় চোরাস্রোত বইতে শুরু করেছে। এটা আঁচ করেই ড্যামেজ কন্ট্রোলে একের পর এক হেভিওয়েট কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীদের টিকিট দিয়ে মোদি-শাহ সর্বশক্তি নিয়োগ করছেন।
একই অবস্থা রাজস্থানে। বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়ার অনুগামীদের ক্ষোভ প্রশমিত হচ্ছে না। কারণ, তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হবে না। কিন্তু তাঁকে আদৌ প্রার্থী করা হবে তো? এ প্রশ্নের উত্তর এখনও পাননি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা। সুতরাং এনডিএ নিয়ে মোটেই স্বস্তিতে নেই বিজেপি। সব মিলিয়ে এটা স্পষ্ট যে, ঘরে-বাইরে স্নায়ুযুদ্ধ বা গৃহযুদ্ধ সামলাতে রাতের ঘুম ছুটে যাচ্ছে বিজেপির।