অনাস্থার জবাবে মণিপুর নেই, শুধুই দম্ভ-অহমিকা দেখালেন মোদি, অভিযোগ ‘ইন্ডিয়া’-র

মীযান ডেস্ক:  প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভুলে গেছেন, অতি দর্পে হত লঙ্কা। অনাস্থা বিতর্কে জবাবী ভাষণে মণিপুর নিয়ে তেমন কিছুই বললেন না তিনি। কেবলই আমিত্ব, দম্ভ, অহমিকা, বিরোধীদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করলেন। দু’ঘণ্টার ভাষণের ৯০ শতাংশ জুড়েই ‘ইন্ডিয়া’ এবং কংগ্রেস। মণিপুর নিয়ে অনাস্থা প্রস্তাবের জবাবী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দিলেন, আত্মবিশ্বাস ‘দর্পে’ রূপান্তরিত হলেও জোট নিয়ে উদ্বেগ তাঁর কাটেনি। তাই বারবার দেশবাসীকে বলতে চাইলেন, বিরোধীরা কতটা অযোগ্য।

কিন্তু মণিপুর? দীর্ঘ ভাষণে সামান্য কয়েক মিনিটই বরাদ্দ থাকল উত্তর-পূর্বের রাজ্যটির লাগামছাড়া হিংসার জন্য। তবুও সব অশান্তির দায় স্রেফ ঝেড়ে ফেললেন তিনি। প্রমাণ করতে চাইলেন, মণিপুরে আজকের পরিস্থিতির জন্য দায়ী কংগ্রেসই। পাশাপাশি আত্ম-প্রশংসায় নিজের সব রেকর্ডও এদিন ভেঙে ফেললেন নরেন্দ্র মোদি। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর ভবিষ্যদ্বাণী, তাঁর শাসনকাল তথা এই মহান সময়সীমায় যা কাজ হচ্ছে, তার সুফল ভারত পাবে এক হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে। তিনি বললেন, ‘এই কালখণ্ড এক মাহেন্দ্রক্ষণ। এই সময় যা কিছু হচ্ছে তা কস্মিনকালেও হয়নি, হবেও না।’ ২০২৪ সালের লোকসভা ভোট নিয়ে মোদির সামান্যতম উদ্বেগ অথবা সংশয় নেই। জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর জয়ের কারিগর স্বয়ং ঈশ্বর। ‘যখনই আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এসেছে, ঈশ্বরের আশীর্বাদে পরের ভোটে আমিই জয়ী হয়েছি। ২০২৪ সালেও রেকর্ড ভেঙে জিতব আমরাই!’

তিনদিনের অনাস্থা-আলোচনার শেষে মোদি মনে করেন, বিরোধীদের সব বক্তার সম্মিলিত যোগফল শূন্য। তাঁর কটাক্ষ, ‘অনাস্থা প্রস্তাবের ভাষণে আপনারা শুধুই নো-বল করে গেলেন। আর আমরা একের পর এক সেঞ্চুরি হাঁকালাম। সমস্ত চার-ছয় রান আমাদের বক্তারাই নিলেন।’ মোদির বিদ্রুপ, ‘এত সুযোগ দিলাম। আপনারা একটু ভালেভাবে হোমওয়ার্ক করেও এলেন না! ২০২৮ সালে আবার যখন অনাস্থা প্রস্তাব আনবেন, আশা করব তৈরি হয়ে আসবেন।’ ঔদ্ধত্য ও দম্ভের এহেন প্রচারের ছত্রে ছত্রে টার্গেট ছিল ‘ইন্ডিয়া’। বিরোধী জোটকে কটাক্ষ করে মোদি বলেছেন, ‘অবশেষে ইউপিএ নামক জোটের শ্রাদ্ধশান্তি হওয়ায় আমার সমবেদনা রইল। এখন আবার নতুন নাম নিয়ে যে জোট হয়েছে, সে যেন ধ্বংসস্তূপে নতুন প্লাস্টার। অচল গাড়ি চালানোর চেষ্টা। ভারতের নাম ব্যবহার করে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্য করা যাবে না।’

অনাস্থায় জয়ের আশা বিরোধীরা করেনি। উদ্দেশ্য ছিল, প্রধানমন্ত্রীকে মণিপুর ইস্যুতে বলতে বাধ্য করা। যদিও জবাবী ভাষণের প্রথম দেড় ঘণ্টায় তার আভাসও মেলেনি। বিরোধীরা ওয়াক আউট করার পর মণিপুরের কথা মনে পড়ে মোদির। বিরোধীশূন্য কক্ষে তাঁর সাফাই, রাজ্য সরকার দায়ী নয়। মুখ্যমন্ত্রী ব্যর্থ নন। কেন্দ্রীয় সরকারেরও দায় নেই। তাহলে দায়ী কে? মোদির ঘোষণা, মণিপুরের হিংসার জন্য দায়ী কংগ্রেস। কিন্তু গত তিন মাস ধরে একের পর এক দেশ সফর করলেও কেন তিনি একবারের জন্যও মণিপুর গেলেন না, এ প্রশ্নের জবাব দেননি প্রধানমন্ত্রী। বরং ইতিহাস প্ল্যানচেট করে তিনি বলেন, মিজোরাম থেকে মণিপুর অথবা অসম—সব সমস্যার মূলে জওহরলাল নেহরু ও ইন্দিরা গান্ধী। চলতি বছর মে মাস থেকে শুরু হওয়া মণিপুরের সন্ত্রাস প্রসঙ্গে মোদি টেনে এনেছেন কখনও ১৯৬২ সাল, কখনও ১৯৬৬ সালকে। আক্রমণ করেছেন নেহরু ও ইন্দিরা গান্ধীকে। দায় ঝেড়ে ফেলে তাঁর শুকনো আশ্বাস, ‘দোষীদের কঠোর সাজা দেওয়ার জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য চেষ্টা করছে। মণিপুরে শান্তির সূর্য উঠবেই।’ সেই সূর্যোদয় দেখার অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে ভারতবাসী।

Stay Connected

Advt.

%d bloggers like this: