মীযান ডেস্ক: দলের যাবতীয় সাফল্যের কৃতিত্ব মোদি নিজে নেন, কিন্তু ব্যর্থতার দায় নেন না, ঝেড়ে ফেলে দেন। এবার কিন্তু অন্যরকম দেখা যাচ্ছে। ভোটের ফল প্রকাশ হতেই অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকট বিজেপিতে। ‘অব কি বার চারশো পার’ বলে নরেন্দ্র মোদির স্লোগান মুখ থুবড়ে তো পড়েছেই, সঙ্গে বিজেপির আসনসংখ্যা ৩০৩ থেকে নেমে ২৪০ হয়েছে। তাতে দলের অনেকেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। সূত্রের খবর, বিজেপির মতাদর্শগত অভিভাবক রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘও বিজেপির ফলাফল নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছে। তাই এসব সরকার গঠন প্রক্রিয়ার মধ্যেই বিজেপি এবং সঙ্ঘের মধ্যে পুরোদস্তুর মোদির বিকল্প খুঁজে রাখার গোপন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
সংঘ পরিবারের পছন্দের নীতিন গড়করি, রাজনাথ সিংয়ের মতো নেতাদের পিছনের সারিতে পাঠিয়ে দিয়ে দলের পুরো রাশই যে মোদি-শাহ নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছেন, তারই মাশুল দলকে গুনতে হচ্ছে বলে মনে করছে সংঘ পরিবার। গড়করি, রাজনাথের মতো নেতাদের দলের কাজে আরও অনেক বেশি লাগানো হলে তাঁদের নিজেদের রাজ্য যথাক্রমে মহারাষ্ট্র এবং উত্তরপ্রদেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে দলের আসনসংখ্যা এভাবে নেমে যেত না বলে বিজেপির তাত্ত্বিক নেতারা মনে করছেন।
শুধুমাত্র দলের পুরনো নেতাদের কোণঠাসা করাই নয়, দলের থেকে বেশি ব্যক্তিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তা নিয়েও বিজেপির একাংশ অখুশি। এবারে বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহার যে ‘মোদি কি গ্যারান্টি’ শীর্ষকে প্রকাশ করা হয়েছে তাতে প্রশ্ন উঠেছে, ‘সব কিছুই তো মোদিময়। সেখানে বিজেপি কোথায়?’ এ প্রশ্ন আগেও দলের অন্দরে উঠেছিল।
গতবার বিজেপির আসন বেশি থাকায় মোদি-শাহরা যে এনডিএ-র শরিকদের পাত্তা দেননি, তাতেও অখুশি সংঘ পরিবার। শিবসেনা, অকালি দলের মতো পুরনো শরিকরা তাদের ছেড়ে গিয়েছে। নীতীশ কুমার, চন্দ্রবাবু নাইডুরাও অপমানের প্রতিশোধ নিতে একই রাস্তায় হাঁটলেও পরবর্তীকালে তাদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে এনডিএ-তে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু সম্পর্ক যে আগের মতো নেই, তা সকলেরই জানা। এই দুই নেতা যদি আবারও এনডিএ থেকে বেরিয়ে যান তাহলে মুখ থুবড়ে পড়বে মোদির সরকার গড়ার পরিকল্পনা। সেই আশঙ্কার মেঘও বিজেপির অন্দরমহলে আনাগোনা করছে এখন থেকেই।
শোনা যাচ্ছে, মোদির দাপটে এতদিন যারা ভয়ে কথা বলতে পারতেন না, এবার তারা ইতিউতি মুখ খুলছেন। তাদের বক্তব্য, নতুন সরকার দুর্বল হবে, মোদিও দুর্বল হবেন দলের অন্দরে। আর মোদি দুর্বল হলে সবথেকে বেকায়দায় পড়বেন অমিত শাহ। এই জুটির একচেটিয়া দাপট ও অথরিটি আর থাকবে না। তাই নতুন বিকল্প তৈরি করা দরকার। অতএব মোদি-শাহ জোট ভবিষ্যতেও বিজেপির প্রধান পরিচালক থাকবেন কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে। এই প্রেক্ষিতে দলের মধ্যেই মোদি-বিরোধী অংশ ফের সক্রিয় হচ্ছে।
মঙ্গলবার ফল প্রকাশের মাঝখানেই রাজনাথ ও অমিত শাহ উঠে গিয়ে নাড্ডার ঘরে বসে উত্তরপ্রদেশের বেহাল দশা নিয়ে কথা বলছিলেন। তাদের সন্দেহ, যোগী বনাম মোদির যে গোপন ইগোর লড়াই ওই রাজ্যের ভোটে কাজ করেছে। উল্লেখ্য, রাজনাথ এবং যোগী আদিত্যনাথ দুজনেই ঠাকুর। রাজনাথ একসময় উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তাই যোগী ও তাঁর মতো ঠাকুরদের প্রভাব উত্তরপ্রদেশে বিশেষ কাজ করে উচ্চবর্ণের উপর। এবার কি সেই যৌথ প্রভাব ময়দানে কম পড়েছে? অন্তর্ঘাত কাজ করেছে? এসব প্রশ্ন উঠছে।
গোপন সূত্রে খবর, উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক মহলের মতে, মোদি দুর্বল হলে অমিত শাহ দুর্বল হবেন। তাঁকেই আবার আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভাবা হচ্ছে। পক্ষান্তরে যোগী আদিত্যনাথ, রাজনাথ সিং, নীতিন গাদকারি, বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া, শিবরাজ সিং চৌহানদের রাজনৈতিক গুরুত্ব বজায় রাখতে বা গুরুত্ব বাড়াতে মোদির দুর্বল হওয়াটা জরুরি। যেহেতু এবার ফলাফলে মোদি দুর্বল হয়ে গেলেন, তাহলে কি আগামী দিনে বিজেপির অন্দরেও মোদি-যুগের অবসান হবে?