বামন মানুষদের নিয়ে বিনোদন পার্ক চীনের ইউনান প্রদেশের কুনমিং শহরে

মীযান ডেস্ক: ‘গালিভারস ট্রাভেলস’। বিশ্বসাহিত্যে এই অন্যতম ধ্রুপদি গল্প লিখেছিলেন প্রখ্যাত আইরিশ লেখক জোনাথন সুইফট। গল্পের মূল কথা ও কাহিনি আবর্তিত হয় লিলিপুটদের নিয়ে। দেশ ভ্রমণের নেশা নিয়ে জাহাজে চড়েছিলেন তিনি। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায় সেই জাহাজ। বহুকষ্টে তীরে পৌঁছান গালিভার। চোখ মেলে দেখেন স্বাভাবিক কোনো জায়গা নয়; বরং সেটা ছিল লিলিপুটদের এক রাজ্য। মাত্র ছয় ইঞ্চি উচ্চতার বামন মানুষেরা গালিভারকে বন্দী করেন। অনেক বুদ্ধি খাটিয়ে অনেক কসরত করে অবশেষে সেখান থেকে মুক্ত হওয়া এবং লিলিপুটদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলে গালিভারের গল্প।

শুনলে অবাক হবেন, এমনই একটি জায়গা বাস্তবে এখনও রয়েছে। সেখানে উচ্চতায় খাটো ব্যক্তি বা বামনেরা মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ান ও বসবাস করেন। সবাইকে আনন্দ দেন তাঁরা। জায়গাটি দেখতে হলে যেতে হবে চীনে। দেশটির ইউনান প্রদেশের কুনমিং শহরের পূর্বাঞ্চলে এই কল্পনার স্বর্গরাজ্যের নাম হল ‘কিংডম অব লিটল পিপল’। অনেকে জায়গাটিকে ‘বামন সাম্রাজ্য’ও বলে থাকেন। এটা আসলে একটি থিম পার্ক বা বিনোদনকেন্দ্র। ইউনান প্রদেশে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় একটি গন্তব্য এই বামন সাম্রাজ্য। ২০০৯ সালে পার্কটি চালু হয়। ১ কোটি ১০ লাখ পাউন্ড (ভারতীয় মুদ্রায় ১১৬ কোটি ২২ লক্ষ ২৫ হাজার ২৮৪ টাকা) ব্যয়ে এই পার্কটি বানিয়েছেন চীনের বিশিষ্ট ধনকুবের তথা আবাসন ব্যবসায়ী চেন মিংঝিং।

কী নেই এখানে। ১৫০ জন বামনের বসবাসের জায়গা, মাশরুমের আদলে ছাদ, দুর্গ, অ্যাম্ফিথিয়েটার, লর্ড অব দি রিংস–এর দ্য শায়ারের প্রতিলিপি দেখে মজা পান ভ্রমণপিপাসুরা। প্রতিদিন এখানকার ১৫০ বামন দর্শনার্থীর জন্য বিশেষ অনুষ্ঠান করেন। নেচে-গেয়ে, বিভিন্ন খেলা-কসরত, রঙ-তামাশা মধ্যযুগীয় যুদ্ধের দৃশ্য দেখিয়ে পর্যটকদের মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করেন তারা। এখানে পুরোনো একটি উড়োজাহাজের ভেতরে তৈরি করা হয়েছে রেস্তোরাঁ। মজার মজার সব খাবার পাওয়া যায় সেই রেস্তোরাঁয়। পার্কটিতে প্রবেশ করতে লাগে ১১ পাউন্ড। তাঁরা এখানে ‘লিলিপুটদের রাজ্যের’ নানা কার্যক্রম নিজের চোখে দেখতে পান। আনন্দিত হন।

ব্যবসায়ী চেন মিংঝিং এর উদ্দেশ্য ছিল, এখানে বামনদের আশ্রয় দেওয়া। সমাজের মূল স্রোত থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন বামনেরা এখানে স্বাচ্ছন্দে থাকতে পারবেন। জুটবে চাকরিও। উচ্চতায় খাটো বা বামনদের জন্য জায়গাটি হবে একটি ‘স্বর্গ’। তবে সমালোচকদের মতে, জায়গাটি আদতে একটি ‘মানব চিড়িয়াখানা’। দর্শনার্থীরা টাকার বিনিময়ে সেখানে বেঁটেখাটো মানুষদের কসরত দেখতে যান। তাদের মতে, নৈতিক ও মানবিকতার দিক থেকে এটা ঠিক নয়। সমালোচনা হলেও পার্কটিতে থাকতে পেরে, কাজ করতে পেরে, মানুষকে বিনোদন দিতে পেরে আনন্দিত সেখানকার বামনেরা। ভবিষ্যতে ১৩ হাজার একর জায়গাজুড়ে পার্কটি বিস্তৃত করতে চান চেন মিংঝিং। আরও নতুন নতুন রাইড, অতিথিনিবাস, ২৩০ ফুট লম্বা হলরুম যুক্ত করতে চান তিনি। তাঁর লক্ষ্য, পার্কটিতে হাজারখানেক কর্মী থাকবেন, কাজ করবেন ও কসরত দেখাবেন। আর তাঁরা সবাই হবেন বামন।

Stay Connected

Advt.

%d bloggers like this: