মীযান ডেস্ক: মুসলিম মিল্লাতের মধ্যে ঐক্যের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে ঐকতান মিল্লী ইত্তেহাদ মজলিস। বিভিন্ন জেলায় সফর করে মাযহাব, মসলক নির্বিশেষে সকলের মধ্যে ঐক্য ও সংহতির প্রয়াস চালাচ্ছে এই সংগঠন। আজ শনিবার ১৪ অক্টোবর হুগলী জেলার সিঙ্গুরের বাসুবাটি আয়মাপাড়া মসজিদে আয়োজিত সভায় হাজির ছিলেন আশপাশের গ্রামের লোকজন। বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন ও জামাতের নেতৃত্ব বক্তব্য রাখেন। এই মহতী সভায় উপস্থিত ছিলেন রুহুল আমীন মন্ডল, মুহাম্মদ তাহেরুল হক, আমিনুল আম্বিয়া, গওসুল আযম, শাহ নাওয়াজ আলম প্রমুখ বিশিষ্ট আলেমগণ। স্থানীয় গুণীজন হিসেবে বক্তব্য রাখেন ডা: আলাউদ্দিন আহমেদ ওরফে রাজা ডাক্তার ও শিক্ষক মোজাম্মেল হক। সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঐকতান মজলিসের হুগলি জেলার আহ্বায়ক ওবায়দুর রহমান সাহেব। পবিত্র জীবন বিধান আল কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে সভার সূচনা হয়। তিলাওয়াত করেন বাসুবাটি মসজিদের পেশ ইমাম শেখ মইজেল হক।
বক্তাগণ তাদের আলোচনায় বলেন, সাইকেলের যেমন দুটো চাকা, তেমনি মুসলমানদের দুটো প্রধান বিষয় হল কুরআন ও হাদিস। বিদায় হজের ভাষণে বিশ্বনবী
বলেছিলেন, কুরআন মজীদ এবং হাদীস — এই দুটোকে আঁকড়ে ধরে থাকতে পারলে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। আমাদের আল্লাহ এক, নবী এক, কুরআন এক, কলেমা এক, কিবলা এক — তাহলে ইসলাম অনেক রকম হবে কেন? আমাদের মধ্যে বিভেদ, বৈষম্য, বিভাজন কেন হবে ? অতিথিরা তাদের বক্তব্যে বলেন, মাসলাক যার যার, ইসলাম সবার। ধর্ম যার যার, দেশ সবার। এই মূল নীতিমালা থেকে মুসলমান কখনো বিচ্ছিন্ন হতে পারে না।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল, আমাদের মধ্যে বিভাজন করছে কিছু ব্যবসায়ী আলেম। ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদি সোশ্যাল মিডিয়া একদিকে যেমন ইসলাম প্রচারের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে, অন্যদিকে তেমনি এগুলো ফিৎনা সৃষ্টি করছে। তাই ইসলামকে সহীহভাবে জানতে হলে কুরআন ও সুন্নাহ থেকে জানতে হবে। সীরাত চর্চা করতে হবে। নবীজীর শিক্ষা, আদর্শ ও জীবন দর্শনই হল মুসলমানের মানদণ্ড।
উপস্থিত বক্তাগণ বলেন, কবরে সওয়াল জওয়াব হবে। সেখানে প্রশ্ন করা হবে না যে, আপনি কোন জামাত করতেন, আপনি ফুরফুরা কিনা, হানাফী কিনা, দেওবন্দী কিনা? প্রশ্ন করা হবে, তোমার রব কে, নবী কে, তোমার দ্বীন কী? সুতরাং মাযহাব, মসলাক নিয়ে বাড়াবাড়ি না করাই শ্রেয়।
তাছাড়া বর্তমানে আমাদের দেশ তথা বিশ্বজুড়ে মুসলমানের ওপর অত্যাচার, আক্রমণ চলছে। ইসলাম বিদ্বেষ, ইসলামোফোবিয়ার স্রোত বয়ে চলেছে। এই গড্ডালিকা প্রবাহে হাওয়া দিচ্ছে মিডিয়ার একাংশ। সংবাদ মাধ্যম তাদের নিরপেক্ষতা ও বস্তুনিষ্ঠতার নীতি থেকে দূরে সরে গেছে। বিশ্বজুড়ে কর্পোরেট মিডিয়া এখন জায়নবাদীদের কব্জায়। তাই মিডিয়া এখন আর মাধ্যম নয়, মিডিয়াই এখন পরিচালকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। মুসলিম মিল্লাত ও উম্মাহ মিডিয়ার আগ্রাসন ও মিডিয়া সন্ত্রাসের শিকার। এ সব থেকে মুসলমানদেরকে সাবধান সতর্ক করেন বক্তারা। একইসঙ্গে নিজেদের মধ্যে খুঁটিনাটি বিষয়ে মতভেদ ও মতপার্থক্য দূরে সরিয়ে রেখে মিল্লাত ও কওমের বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্য ও সংহতির আহ্বান জানান তারা।