মীযান ডেস্ক: শুক্রবার লোকসভায় একসঙ্গে তিনটি বিল পেশ করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ব্রিটিশ আমলের দেশদ্রোহ আইন বাতিল করে নতুন আইনের নাম দেওয়া হল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধ! তবে নয়া আইনের পরিধি অনেক বেড়ে গেল। অর্থাৎ ঠিক কোন কোন আচরণ বা কাজকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে, সেই তালিকা হল দীর্ঘতর। একইসঙ্গে নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের হিংসার তকমা দিয়ে কঠোর শাস্তির বিধান আনা হচ্ছে। এবার নাবালিকাকে ধর্ষণ, মব লিঞ্চিং বা গণপিটুনির সাজা মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। মহিলাদের প্রতি অশালীন অঙ্গভঙ্গি এমনকী অর্থপূর্ণ ইঙ্গিত অথবা কোনও কটূক্তি করলেও জেলে যেতে হবে। এখন তিনটি বিলই পাঠানো হয়েছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে। ওই কমিটির রিপোর্ট আসার পর বিলগুলো পুনরায় সংসদে পেশ করা হবে এবং উভয়কক্ষে পাশ করানো হবে।
অপরাধ, তদন্ত এবং নথি সংক্রান্ত ১৮৬০ সালের তিনটি আইন সম্পূর্ণ বাতিল করে নতুন তিন আইনের জন্ম হতে চলেছে। ব্রিটিশ আমলের তিন আইনের সিংহভাগ বিষয়ই শুধু আমূল বদলে ফেলা হয়েছে, এমন নয়। বদলে গিয়েছে ব্রিটিশদের দেওয়া আইনের নামকরণও। ইন্ডিয়ান পেনাল কোড, কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিওর এবং এভিডেন্স অ্যাক্ট। এই তিন আইনের বদলে নয়া আইন হয়েছে যথাক্রমে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা এবং ভারতীয় সাক্ষ্য সংহিতা। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা বর্তমানে চালু থাকা ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের ২২টি ধারা সম্পূর্ণ বিলোপ করেছে। ১৭৫টি ধারার বদল ঘটিয়েছে। নিয়ে এসেছে ৮টি নতুন ধারা। মোট ৩৫৬টি ধারা নিয়ে নতুন আইন আসতে চলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংবিধানে সংহিতা শব্দ যোগ করার মাধ্যমে হিন্দু রাষ্ট্রের বার্তা দিতে চাইল মোদি সরকার।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক এবং নাগরিক, মানবাধিকার ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে দেশদ্রোহী আইনের এবার অবলুপ্তি হওয়া উচিত। কয়েকমাস আগে সুপ্রিম কোর্টও এই মর্মে কেন্দ্রকে ভর্ৎসনা করেছিল। ব্রিটিশ আমলের দেশদ্রোহী আইনকে কেন্দ্র সরকার যখন তখন নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধামতো ব্যবহার করেছে বলে ভুরি ভুরি অভিযোগ রয়েছে। সরকারের নীতি, পলিসি বা কাজের সমালোচনা বা বিরোধিতা করলেই রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের জালে জড়িয়ে বহু লোককে গ্রেপ্তার করে দীর্ঘদিন জেলে রাখা হয়েছে এবং সাজা দেওয়া হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, বিশেষ করে মোদি সরকারের আমলে গত ৯ বছরে এই আইনের ব্যাপক অপব্যবহার হয়েছে।
এবার সেই আইন বাতিল করা হচ্ছে। তবে নয়া বিলকে বিরোধীরা বলছে নতুন বোতলে পুরনো মদ। তাদের অভিযোগ, নিজেদের ইচ্ছেমতো বিষয় নতুন ধারায় ঢুকিয়ে পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরে্াধী এবং সুশীল সমাজকে আরও কোণঠাসা ও দমনপীড়ন চালানোর ব্লুপ্রিন্ট করছে কেন্দ্র সরকার। প্রশ্ন উঠছে, সরকারের বিরুদ্ধ সমালোচনার কণ্ঠরোধ করতে এই আইনকে ব্যবহার করা হবে না তো? তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রী তথা বিরে্াধী জোটের নেতা স্ট্যালিন বলেছেন, আইনেও নাম বদলের আড়ালে হিন্দি শব্দের ব্যবহার শুরু হয়েছে। এভাবে দেশকে হিন্দি সংস্কৃতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে মোদি সরকার। এর প্রবল বিরোধিতা করা হবে।