নূহতে ‘জাতিগত নিকেশ অভিযান’ কেন? বুলডোজার অভিযান নিয়ে হরিয়ানাকে বিঁধল হাইকোর্ট

মীযান ডেস্ক:  একটি রাজ্য বা রাষ্ট্র কীভাবে বুলডোজার চালিয়ে জাতিগত নিকেশ অভিযান চালাতে পারে? এ প্রশ্ন তুলে হরিয়ানার বিজেপি সরকারকে বিঁধল হাইকোর্ট। অপরাধীর বিচার করবে আদালত। সরকার কেন বুলডোজার চালিয়ে অভিযুক্তদের বাড়িঘর, দোকানপাট, ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংস করবে? অভিযোগ, সম্প্রতি নূহতে একতরফা দাঙ্গার পর বেছে বেছে মুসলিমদের ব্যক্তিগত ও সম্পত্তি বুলডোজার চালিয়ে ভেঙে তছনছ করে দিচ্ছে সেখানকার মনোহরলাল খট্টর সরকার। একইসঙ্গে মজলুম মুসলিমদের বেছে বেছে ধরপাকড় চালানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে তারা উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, আসামের সহিংস নীতি নিয়ে চলেছে। পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট এই মর্মে স্বতঃপ্রণোদিত মামলায় এভাবে তীব্র ভর্ৎশনা করল হরিয়ানার বিজেপি সরকারকে।

দুই বিচারপতি হরপ্রীত কাউর জিয়ান ও জি.এস সানধাওলিয়া হরিয়ানা সরকারকে প্রশ্ন করেন, গত দু-সপ্তাহে কতগুলো ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও ধর্মীয় স্থাপনার ওপর বুলডোজার অভিযান চালানো হয়েছে। তার এফিডেবিট আদালতে জমা করতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। বুলডোজার চালানোর আগে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছিল কিনা, সেটাও জানতে চেয়েছে আদালত। স্থানীয়দের মতে, সরকার যেভাবে নির্মম হয়ে বুলডোজার চালিয়ে মুসলিমদের সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে, সেই অভিযান দেখলে চোখ ফেটে পানি আসতে বাধ্য। শিশুদের কোলে নিয়ে বাবা-মায়েরা নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে পালাচ্ছে। অন্যেরা আসবাবপত্র এবং গৃহস্থালির সামগ্রী বস্তাবন্দি করছে। এই বিভীষিকা চোখে দেখা যায় না। যেন মনে হচ্ছিল ভূমিকম্প হয়েছে। এসব অসহায় সর্বহারা মানুষের আর্তনাদ সরকারের কানে পৌঁছয়নি। সরকার এমনই নির্দয় ও অমানবিক আচরণ করছে।

একটা বাড়ি তো কেবল একজন ব্যক্তি বা পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই নয়। তাদের সর্বস্ব সহায় সম্বল এই বাড়ি। একটা বাড়ি শুধু ইট-কাঠ-পাথরের কাঠামো নয়; একটা বাড়ি হল সেই পরিবারের চৌদ্দ পুরুষের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে। একটা বাড়ি একটা পরিবারের পরম্পরাগত ইতিহাস ধরে রাখে। একটা বাড়ির ইট-কাঠ-পাথরে এমন আজানা কত কাহিনি সাজানো থাকে। শুধু তো বাড়ি নয়, যে জায়গায় বাড়িটি ছিল, সেই জমিনেরও ইতিহাস থাকে। চোদ্দ পুরুষের ভিটে-মাটি ও জন্মভূমি মানুষকে সারা জীবন মায়ার বন্ধনে জড়িয়ে রাখে। সেইসব ঘরবাড়ি হরিয়ানা সরকার অকারণে, বিনা অপরাধে যেভাবে বুলডোজার দিয়ে চোখের পলকে ধূলিসাৎ করে দিচ্ছে, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এই কারণেই নিজ ভূমে পরবাসীর হয়ে ঘরবাড়ি হারিয়ে, মাথার ওপর ছাদ হারিয়ে উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। এভাবে একটা সম্প্রদায়কে জাতিগতভাবে নিকেশ অভিযান চালাচ্ছে বিজেপি শাসিত ডাবল ইঞ্জিন সরকারগুলো। এইসব রাজ্যের মুসলিমরা যেন সিরিয়া, ফিলিস্তিন কিংবা রাখাইনের রোহিঙ্গা। এসব বিবেচনা করেই হাইকোর্ট হরিয়ানা সরকারকে তোপ দেগে বুলডোজার অভিযান অবিলম্বে বন্ধের নিদান দিয়েছে।

Stay Connected

Advt.

%d bloggers like this: