মীযান ডেস্ক: গিরিশচন্দ্র সেন। জন্ম ১৮৩৪। বাংলাদেশের নরসিংদী জেলার পাঁচদোনা গ্রামে। তিনি উত্তরপ্রদেশের লক্ষৌ থেকে আরবি ও ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করেছিলেন। ফার্সি, সংস্কৃত ভাষাতেও তার ছিল অগাধ পাণ্ডিত্য। গিরিশচন্দ্র নিরাকার একেশ্বরবাদী ব্রাহ্ম মতে দীক্ষিত হন ১৮৭১ সালে। বিভিন্ন ভাষা ও ধর্ম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হন তখন থেকেই।
বাঙালি মুসলমানদের জন্য তার অমর কীর্তি পবিত্র কুরআন শরিফ-এর বাংলা অনুবাদ। ১৮৮১ থেকে ৮৬ পর্যন্ত এই মহৎ কর্মে নিয়োজিত ছিলেন। মুসলমান পণ্ডিতদের কাছ থেকে তিনি জয়মাল্য পেয়েছেন। মাওলানা মুহাম্মদ আকরম খাঁ গিরিশচন্দ্রকে প্রশংসা সংবলিত পত্র প্রেরণ করেন।
তার তাপসমালা বিখ্যাত সাধক শেখ ফরিদুদ্দিন আত্তারের ‘তাজকেরাতুল আউলিয়া’ অবলম্বনে রচিত হয়েছে; যাতে ৯৬ জন মুসলিম মনীষীর জীবনী রয়েছে। ‘মিশকাত শরিফ’-এর অর্ধেক অনুবাদ করেন, আর জালালুদ্দিন রুমির ‘মসনবি শরিফ’ অনুবাদ করেন ‘তত্ত্বরতমালা’ নামে। ইসলামের শেষ পয়গম্বর মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা:) ও ইসলাম ধর্ম, ইমাম হাসান ও হোসাইনের জীবনী; চার সাধ্বী মুসলমান নারীসহ মোট ৪২টি গ্রন্থ রচনা ও অনুবাদ তার অমর কীর্তি। বাংলা ভাষায় তিনিই একমাত্র অমুসলিম কুরআনের প্রথম ও সম্পূর্ণ অনুবাদক। এককথায় বলা যায়, শুধু কুরআন শরীফের বাংলা অনুবাই নয়; তিনি ইসলাম ধর্ম বিষয়ক অনেক গ্রন্থ অনুবাদ করেন। অমুসলিম হয়েও তিনি ইসলাম ধর্ম নিয়ে অনেক গবেষণাও করেন।
১৯১০ সালের ১৫ আগস্ট তিনি প্রয়াত হন। এ বছর এই জ্ঞানতাপসের ১১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মহাগ্রন্থ তথা জীবনবিধান আল কুরআন এবং মুসলিম মনীষীদের জীবনী লিখে রেখে গেছেন অনন্য দৃষ্টান্ত। তাই বিশেষ করে বাঙালি মুসলিম সমাজ গিরিশচন্দ্র সেন এর কাছে চিরঋণী থাকবে বৈ কি।