মীযান ডেস্ক: বহুমুখী স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাকেও বিক্রি করে দিচ্ছে কেন্দ্র সরকার। স্বভাবতই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাবে অসংখ্য ওষুধ। সস্তায় আর কোনও ওষুধ খোলা বাজারে মিলবে না। খবরে প্রকাশ, জটিল রোগের ওষুধ তৈরি, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার উপকরণ সরবরাহ এবং সাধারণ মানুষের জন্য সস্তায় ওষুধ বিক্রির মতো বহুমুখী কর্মকাণ্ডের নেপথ্যে থাকা সরকারি সংস্থা এইচএলএল লাইফকেয়ার লিমিটেডকেও এবার বিক্রি করে দিতে চলেছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই শুরু করে দেওয়া হবে টেন্ডার প্রক্রিয়া। ভালো দরে এই সংস্থা বিক্রি হয়ে গেলে নিঃসন্দেহে কোষাগারের ঘাটতি কিছুটা পূরণ হবে। আর্থিক লাভের মুখ দেখবে কেন্দ্র সরকার।
কিন্তু সাধারণ মানুষ? বেসরকারি কোম্পানি কিন্তু সস্তায় আর আম জনতাকে ওষুধ দেবে না। আধপেটা খাওয়া বহু মানুষ, যাঁরা চিকিৎসার জন্য সস্তার সরকারি ওষুধের উপর নির্ভরশীল, তাদের মাথায় এবার আকাশ ভেঙে পড়তে চলেছে। সংস্থা বিক্রির এই প্রক্রিয়া শুরুর জন্য অল্টারনেটিভ মেকানিজমের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। এর অর্থ, সংশ্লিষ্ট তিনটি মন্ত্রককে নিয়ে একটি মন্ত্রী-কমিটি গঠন। এই সংস্থাটি যে অল্টারনেটিভ মেকানিজম প্রক্রিয়া কমিটির অধীনে আসে, তাতে রয়েছেন তিন মন্ত্রী—সড়ক পরিবহণমন্ত্রী নীতিন গাদকারি, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্য।
২০১৮ সালেও এই সংস্থা বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছিল মোদি সরকার। কিন্তু কর্মীরা তো বটেই, খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রক তখন আপত্তি জানায়। কারণ, এই সংস্থা সরাসরি আম জনতার স্বাস্থ্য পরিষেবায় যুক্ত। তার মধ্যে প্রধান হল সস্তার ওষুধ। এইমস-সহ বহু হাসপাতালে অমৃত ফার্মাসি নাম দিয়ে এরা সস্তার ওষুধের দোকানও চালায়। সংস্থা বিক্রির অর্থ এইসব পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়া। কিন্তু সব আপত্তি উড়িয়ে দিয়ে বহু মূল্যবান সংস্থাটি বিক্রির সিদ্ধান্ত হওয়ায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে বহু বেসরকারি কর্পোরেট সংস্থা।
সম্প্রতি সংসদেও অর্থমন্ত্রকের পক্ষ থেকে এইচএলএল বিক্রির সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গরিব মানুষের কী হবে? তারা সস্তায় ওষুধ কোথায় পাবে? কর্মীদের ভবিষ্যৎ কী হবে? এসব প্রশ্নের উত্তর সরকার দিতে পারবে না। কারণ, এই সংস্থার কোনও শেয়ার সরকার রাখবে না। ১০০ শতাংশ মালিকানাই বিক্রি করে দেওয়া হবে।
৫৭ বছরের এই সরকারি সংস্থা একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০১৫ সালে শুরু হয়েছিল ক্যান্সার এবং হৃদরোগের সমস্যাজনিত রোগের ওষুধ সস্তায় বিক্রি। সেই লক্ষ্যে নির্মাণ করা হয় অ্যাফর্ডেবল মেডিসিনস অ্যান্ড রিলায়েবেল ইমপ্ল্যান্টস ফর ট্রিটমেন্ট। সংক্ষেপে অমৃত। এই অমৃত ফার্মেসির মাধ্যমেই হাসপাতালে ওষুধ বিক্রির কাউন্টার এবং সরবরাহ ব্যবস্থা চালু হয়। প্রধানত শল্যচিকিৎসার উপকরণ, গর্ভনিরোধক, ব্লাড ব্যাগ এবং ওষুধ তথা চিকিৎসা উপকরণ তৈরিতে এরা সামনের সারিতে। ২০০৫ সাল থেকে বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে লাইফ স্প্রিং হাসপাতাল চেইনও তৈরি করেছে এইচএলএল। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ জীবনদায়ী সংস্থা বিক্রির তীব্র বিরোধিতা করছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও। কিন্তু কেন্দ্র এই সংস্থা চালাতে নারাজ। চড়া দামে বিক্রি করে কোষাগার ভরবে কেন্দ্রের। ভুগবে সাধারণ মানুষ।