মীযান ডেস্ক: খাদ্যদ্রব্যের হালাল সার্টিফিকেশন দেবে কেবলমাত্র সরকার। কোনও এজেন্সি এটা করতে পারে না – এভাবেই উত্তরপ্রদেশ সরকারের পাশে দাঁড়াল কেন্দ্র সরকার। যোগী সরকারের হালাল সার্টিফিকেট বিতর্কে এমনই মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ। সদ্য যোগীরাজ্য উত্তর প্রদেশে ‘হালাল’ পণ্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ হালাল সার্টিফিকেশন ট্যাগ যুক্ত যেকোনও পণ্যসামগ্রী নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, শুধুমাত্র সরকার খাদ্য শংসাপত্র বা ফুড সার্টিফিকেশন (হালাল) করতে পারে, কোনও বেসরকারি সংস্থা তা করতে পারে না। উল্লেখ্য, হালাল সার্টিফিকেট প্রাপ্ত পণ্য হল সেই জিনিসগুলি যা ইসলামিক আইন মেনে তৈরি করা হয়েছে এবং ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন না করে সে সব পণ্য ইসলাম ধর্মাবলম্বী বা মুসলিমরা ব্যবহার করতে পারেন। হালাল খাদ্য বা পণ্য অমুসলিমদের কোনরকম ক্ষতি না করলেও শুধুমাত্র মুসলিমদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দেওয়ার জন্যই যোগী সরকার উত্তরপ্রদেশে হালাল খাদ্য ও পণ্যসামগ্রী নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। সেই প্রেক্ষিতে নির্মলা সীতারামণ বলেন, সরকার ছাড়া অন্য কোনও প্রতিষ্ঠান ফুড সার্টিফিকেশন (হালাল) করতে পারে না। খাদ্যের মান এবং খাদ্যবস্তু পরীক্ষা মূলত একটি সরকারি কাজ। তাই এটা সরকারেরই করা উচিত। কোনও এনজিও বা বেসরকারি সংস্থা এটা করতে পারে না।’ নির্মলা আরও বলেন, ফুড সার্টিফিকেশনের জন্য ‘ভারত সরকারের ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া’ রয়েছে। খাবারে রাসায়নিক সংযোজন, কৃত্রিম বা ক্ষতিকারক রং ইত্যাদি আছে কিনা তা নিশ্চিত করবে সরকারি সংস্থা। 'হালাল' সার্টিফিকেট ট্যাগ সম্পন্ন পণ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠাতে এই মন্তব্য করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। তাঁর কথায়, জনগণের খাবার জন্য কোনটি মানসম্পন্ন, তা নির্দিষ্ট করবে সরকারি সংস্থা, ‘বেসরকারি সংস্থার এটা করা ঠিক নয়।’ বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, বিজেপি সরকার হালাল সার্টিফিকেট দেবে মানে হল, তারা এ দেশের মুসলিমদের জন্য হালাল সবকিছুকে হারাম বা নিষিদ্ধ করে দেবে। এটাই তাদের ষড়যন্ত্র। শরীয়ত মোতাবেক মুসলিমদের শালীন পোশাক হিজাব-বোরকার পর এবার খাদ্যের ওপর গেরুয়া হামলার ছক কষছে বিজেপি। কারণ হল, মূলত কয়েকটি রাজ্যের চলমান বিধানসভা নির্বাচন এবং মাস ৫-৬ পর লোকসভা নির্বাচনে বাজিমাত করতে এসব সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে দেশে জাতপাতের ভিত্তিতে বিভাজন ও মেরুকরণ ঘটানো। যাহোক, অন্যদিকে যোগী সরকারের হালাল-নিষিদ্ধ ফরমানকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতে যাচ্ছে হালাল ট্রাস্ট। সংস্থার সিইও নিয়াজ আহমেদ এ কথা জানিয়েছেন। হালাল সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত যে কোনও পণ্য উৎপাদন, মজুত, বণ্টন ও বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হচ্ছে উত্তর প্রদেশে। যদিও হালাল সার্টিফায়েড পণ্য বিদেশে রফতানির ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ব্যাপারটা ঠিক গো-মাংসের মতো। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে গো-মাংস একরকম নিষিদ্ধ। কিন্তু বিদেশে গো-মাংস রফতানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে ভারত। যদিও রফতানিকারক কোম্পানিগুলোর অধিকাংশের মালিক অমুসলিম এবং তাদের অধিকাংশই আবার বিজেপির রাজনৈতিক ভাবশিষ্য।