মীযান ডেস্ক: গাজায় একতরফা ইজরায়েলী যুদ্ধ চলছে ১৯ দিন ধরে। অন্তত ৫ হাজার গাজাবাসী তথা ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। প্রতিদিন গড়ে ৪০০ শিশু হত্যাহত হচ্ছে। এই হাড়হিম করা পরিস্থিতিতে মুসলিম দুনিয়াকে সেভাবে সোচ্চার হতে দেখা যাচ্ছে না। তুরস্ক, ইরান, কাতার, সৌদি, লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেন থেকে হুথিদের তরফে কিছু প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। উল্টোদিকে আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্সের মতো শীর্ষ দেশগুলো ইতিমধ্যেই ইজরায়েল সফর করে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে এই যুদ্ধে ইজরায়েলকে সমর্থন ও সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
একমাত্র তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান প্রথম থেকেই কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়ে চলেছেন। গত ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধের শুরুতে তিনি বলেছিলেন, যুদ্ধেরও কিছু নিয়ম কানুন এবং বিধি নিষেধ থাকে। সেসব দুপায়ে মাড়িয়ে রীতিমতো গণহত্যা চালাচ্ছে ইজরায়েল। অবিলম্বে এই জেনোসাইড বন্ধ করতে হবে ইজরায়েলকে। এরই মাঝে বলেছিলেন, জেরুজালেমস্থিত পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস কেবল ফিলিস্তিনিদের নয়, এটা সমগ্র মুসলিম উম্মাহর সম্পদ। বায়তুল মুকাদ্দাস ছাড়া জেরুজালেম বা ফিলিস্তিন হল মুণ্ডুবিহীন ধড়। তাই বায়তুল মুকাদ্দাস সহ জেরুসালেমকে ইহুদিদের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করাটা মুসলিম বিশ্বের ঈমানী দায়িত্ব। সবশেষে বুধবার এরদোগান বলেছেন, ফিলিস্তিনে শান্তি ফেরাতে হলে একমাত্র বিকল্প হল মুসলিম দেশগুলোকে একজোট হতে হবে। এছাড়া বিকল্প কিছু নেই।
তিনি আরও বলেছেন, হামাস জঙ্গি বা সন্ত্রাসী সংগঠন নয়। তারা মুজাহিদ। তারা তাদের দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়ছে। তারা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড এবং তাদের দেশের নাগরিকদের অধিকার রক্ষার জন্য যুদ্ধ করছে। এটা কেন অপরাধ হবে? তিনি এও বলেন, ‘‘ফিলিস্তিনে শান্তি ফেরাতে অবিলম্বে মুসলিম বিশ্বকে একজোট হতে হবে। আপাতত এছাড়া বিকল্প পথ নেই।’’
তুরস্কের ক্ষমতাসীন ‘জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি’-র সাংসদদের সভায় তিনি অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধবিরতির পক্ষে সওয়াল করে বলেন, ‘‘ফিলিস্তিনে শান্তি ফেরাতে মুসলিম বিশ্বকে একজোট হতেই হবে।’’ উল্লেখ্য, মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটো-র সদস্য তুরস্ক। তবুও তাৎপর্যপূর্ণভাবে বুধবার ইসরায়েলের পাশে দাঁড়ানোর জন্য পশ্চিমী দুনিয়ার কড়া সমালোচনা করে এরদোগান বলেন, ‘‘গাজায় ইজরায়েল নির্বিচারে গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। নারী এবং শিশুদের অকাতরে হত্যা করছে। অথচ পশ্চিমারা ইজরায়েলের জন্য চোখের জল ফেলছে।’’ অথচ তাদের এতটুকু মানবিকতা নেই যে, গাজায় ত্রাণ পৌঁছানোর লক্ষ্যে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু পশ্চিমারা সেটা চাইছে না; বরং তারা যুদ্ধ চালিয়ে যাবার জন্য ইজরায়েলকে পিঠ চাপড়াচ্ছে, অস্ত্র সাহায্য দিচ্ছে।
জবাবে ইজরায়েলের বিদেশমন্ত্রক বলেছে, এরদোগান একটা দেশের প্রেসিডেন্ট হয়ে ‘সন্ত্রাসী সংগঠনের’ পক্ষ নিয়েছেন। সারা বিশ্ব যে ভয়াবহতা দেখছে, এরদোগানের ভিত্তিহীন বক্তব্য এবং উস্কানিমূলক কথাবার্তা তা পরিবর্তন করবে না।
