মীযান ডেস্ক: বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার দুর্বল হলে তা ভারত ও আমেরিকা কারও জন্যই সুখকর হবে না বলে মনে করে নয়াদিল্লি। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, একাধিক স্তরের বৈঠকে নয়াদিল্লি এ কথা জানিয়েছে বাইডেন প্রশাসনকে। বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আমেরিকার বর্তমান ভূমিকায় ভারত যে খুশি নয়, ওয়াশিংটনকে পৌঁছে দেয়া হয়েছে সেই বার্তাও।
নয়াদিল্লির বক্তব্য, ঢাকায় সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হোক – এটা ওয়াশিংটনের মতো ভারতও চায়। কিন্তু যেভাবে হাসিনা সরকারকে অস্থির করার জন্য আমেরিকার পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, তা প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসাবে ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়ার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য ইতিবাচক নয়।
সেপ্টেম্বরের শুরুতে নয়াদিল্লিতে এক মঞ্চে বসতে চলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আগে ভারতের এই বার্তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। সাউথ ব্লক মনে করে, বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীকে ‘রাজনৈতিক ছাড়’ দেয়া হলে অদূর ভবিষ্যতে ঢাকা মৌলবাদের দখলে চলে যাবে। উদার ও মুক্ত পরিবেশ যেটুকু রয়েছে, তা-ও আর থাকবে না।
ভারতীয় কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়ার পরেই গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত অঞ্চল বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে।
ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক মনে করছে, কাবুলের পাশাপাশি অন্য প্রতিবেশী সম্পর্কে আমেরিকার বিদেশনীতিও নয়াদিল্লির জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে অস্বস্তি বাড়াচ্ছে। ভারতের সঙ্গে দীর্ঘ স্থলসীমান্ত রয়েছে বাংলাদেশের। ফলে সে দেশের যে কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতি ভারতেও প্রভাব ফেলে।
সূত্রের মতে, নয়াদিল্লি বাইডেন প্রশাসনকে জানিয়েছে, হাসিনা সরকার দুর্বল হলে চিনের প্রভাব বাংলাদেশে অনেকটা বেড়ে যাবে, যা কাঙ্ক্ষিত নয় ওয়াশিংটনেরও। এদিকে শুধুমাত্র বাংলাদেশের জন্য পৃথক একটি ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে বাইডেন সরকার। এটা আদৌ উচিত বলে মনে করছে না নয়াদিল্লি। এই নয়া ভিসা নীতির ফলে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন যারা বানচাল করার চেষ্টা করবে, তারা মার্কিন মুলুকে প্রবেশের অধিকার পাবে না।
অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল নয়াদিল্লি এসে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব তথা কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করে গিয়েছেন। সেখানে তারাও বার্তা দিয়েছেন, আঞ্চলিক স্থিতি বজায় রাখার প্রশ্নে বিএনপি-জামায়াত জোট বিপজ্জনক। প্রতিনিধি দলের নেতা বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গেও বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের ঠিক পরেই তার বক্তব্য, ‘আমরা ভারতকে এটাই বলেছি যে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা উভয় রাষ্ট্রের জন্যই জরুরি। শেখ হাসিনা সরকার এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে বাংলাদেশের মাটিকে ভারত-বিরোধী কার্যকলাপে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। রাজ্জাক দেশে ফিরে গিয়ে বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে ভারত পাশে থাকবে বলে আমরা আশাবাদী।
