বাড়ল ইমাম-মুয়াজ্জিন ও পুরোহিত ভাতা, মাত্র ৫০০ টাকা বাড়ায় ক্ষোভ উগরে দিলেন একাংশ

মীযান ডেস্ক:  পুরোহিত এবং ইমাম-মুয়াজ্জিনদের এবার ৫০০ টাকা করে মাসিক ভাতা বৃদ্ধি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার ২১ আগস্ট কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ইমাম, মুয়াজ্জিনদের এক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের মাসিক ভাতা বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করেন।
২০১২ সালে রাজ্য সরকারের তরফে ইমাম, মুয়াজ্জিনদের ভাতা দেওয়া চালু হয়। কিন্তু গত ১১ বছরে সেই ভাতা বাড়েনি। যদিও অন্যান্য অনেক রাজ্যে এই ভাতা পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় অনেকটাই বেশি। এতদিন রাজ্যের ইমামরা ২৫০০ টাকা করে মাসিক ভাতা পেতেন। এখন তা বেড়ে হল ৩০০০ টাকা। মুয়াজ্জিনদের ভাতা ১০০০ থেকে বেড়ে হচ্ছে ১৫০০ টাকা। রাজ্যে প্রায় ৩০ হাজার ইমাম ও ২০ হাজার মুয়াজ্জিন এই সরকারি ভাতা পেয়ে আসছেন। যদিও এই ভাতা দেওয়া হয় রাজ্যের ওয়াকফ বোর্ডের আয় থেকে। এছাড়া, রাজ্যের প্রায় ৩০ হাজার পুরোহিতও মাসে ১০০০ টাকা করে ভাতা পেয়ে আসছিলেন। এখন থেকে তাঁরা পাবেন ১৫০০ টাকা। মুখ্যমন্ত্রী জানান, কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের প্রাপ্য ১ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকা। এই অবস্থায় অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও রাজ্য ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি আরও জানান, সংখ্যালঘু পরিবারের ছেলে-মেয়েরা ব্যবসার জন্য ৫ লক্ষ টাকা করে ঋণ পাবেন। সেই ঋণের গ্যারেন্টার থাকবে রাজ্য সরকারই।
ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সম্মেলনে এদিন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ভিড় উপচে পড়ে। দীর্ঘক্ষণ ধরে চলা এই সম্মেলনে বারবার উঠে এসেছে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের প্রসঙ্গ। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিজেপি-র যত রাগ সংখ্যালঘুদের উপর। ওরা ভাগাভাগি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। টাকা ছড়িয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা চলছে। কিন্তু বাংলা হল সম্প্রীতি ও সৌভ্রাতৃত্বের পীঠস্থান।’ সম্মেলনে উপস্থিত ইমাম মুয়াজ্জিনদের কাছে মমতার আবেদন, ‘কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের মেয়াদ আর মাত্র ছ’মাস। তাই কেউ বিজেপির উত্তেজনা বা প্ররোচনায় পা দেবেন না।’ রাজ্যের সংখ্যালঘুদের জন্য তাঁর সরকার কী কী কাজ করেছে, সেই খতিয়ানও এদিন তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। গত ১২ বছরে ৩ কোটি ৬৩ লক্ষ মাইনোরিটি স্কলারশিপ প্রদানের জন্য ৭১৪২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এদিকে দুর্গাপুজোর অনুদানও এবার মমতা ব্যানার্জী বাড়াতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। গত বছর দুর্গাপুজো বাবদ অনুদান ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০ হাজার টাকা করেছিলেন। গত বছর রাজ্যে মোট ৪২ হাজার ২৮টি পুজো কমিটিকে এই অনুদান দেওয়া হয়েছিল। এবার এই সংখ্যাও বাড়তে পারে বলে সূত্রের খবর।
অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ঘোষণায় অখুশি হয়ে সভা শেষ না করেই ইমাম-মুয়াজ্জেনদের একাংশ নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম ছেড়ে বেরিয়ে যান। তখনও বক্তব্য রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার নেতাজি ইন্ডোরে এই সভায় হাজির ছিলেন নাখোদা মসজিদের ইমাম ক্কারী শফিক কাসেমী, পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, ফুরফুরার পীর ত্বহা সিদ্দিকী, ইমামে ঈদায়ীন ক্কারী ফজলুর রহমান-সহ বিভিন্ন জেলার ইমাম কো-অর্ডিনেটররা। স্টেডিয়াম ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে ক্ষুব্ধ ইমামরা বলেন, দীর্ঘ ১১ বছর পর মাত্র ৫০০ টাকা বাড়িয়ে আমাদের অপমান করা হল। এভাবে আমরা ভিক্ষা চাই না। আমরা আমাদের অধিকার চাই। এই টাকা রাজ্য সরকার দেয় না। দেয় ওয়াকফ বোর্ড। তাঁরা এও বলেন, দুর্গাপুজোর অনুদান গত বছর ১০ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৬০ হাজার করা হয়েছিল। ৪২ হাজার পুজো কমিটিকে সেই বিপুল টাকা দেওয়া হয় রাজ্য কোষাগার থেকে। এই টাকা হিন্দু মুসলিম সহ আপামর জনগণের। কিন্তু ইমাম ভাতা কেবলমাত্র মুসলিমদের দেওয়া ওয়াকফের টাকায়। এই টাকায় কী হবে?

Stay Connected

Advt.

%d bloggers like this: