মীযান ডেস্ক: আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হিসেবে তৈরি করেছেন কেবলমাত্র তাঁরই ইবাদত করার জন্য। মাঝে মধ্যে শয়তানের ধোঁকায় পড়ে সে কথা মানুষ বেমালুম ভুলে যায়। চলতে শুরু করে বিপথে। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করে ফেলে। ফলে শয়তান মানুষকে নিমজ্জিত করে পাপের নর্দমায়। তখনই আল্লাহ তায়ালা সতর্ক করে দেন- হে মুমিনগণ! তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না; যে কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করলে শয়তান তো অশ্লীল ও মন্দ কাজের নির্দেশ দেয়। (সূরা নূর-২১)
গুনাহের কারণে জীবনে যেসব ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়- ১. চেহারা কুৎসিত হয়ে যাওয়া; ২. অন্তর অন্ধকার হওয়া; ৩. রিজিকে সঙ্কীর্ণতা দেখা দেয়া; ৪. মানুষের অন্তরে তার প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হওয়া।
এ ছাড়াও গুনাহের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক অসংখ্য ক্ষতি রয়েছে। মুসনাদে আহমাদে এই মর্মে এক হাদিস বর্ণিত হয়েছে- সেখানে রিজিক সঙ্কীর্ণ হয়ে যাওয়ার কথা এসেছে। তাই সব ধরনের গুনাহ থেকে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। সজ্ঞানে কিংবা অজ্ঞানে কখনো কোনো গুনাহ করে ফেললে কর্তব্য হল তাৎক্ষণিক কোনো ভালো কাজ করে ফেলা। এতে লাভ কী? লাভ হল, কৃত ভাল কাজটি মন্দ কাজের কাফফরা হয়ে যাবে অর্থাৎ মন্দ কাজটাকে মিটিয়ে দেবে। যেমনটা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিঃসন্দেহে সৎ কর্মসমূহ অসৎ কর্মসমূহকে মিটিয়ে দেয়।’ (সূরা হুদ-১২৪)
ভাল কাজ করার পাশাপাশি কৃত গুনাহের জন্য আল্লাহর নিকট তাওবা-ইস্তিগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা করা। কারণ, আল্লাহ তায়ালা বলে দিয়েছেন, কোনো গুনাহ করে ফেললে তাৎক্ষণিক ক্ষমা চেয়ে নিতে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘যে কেউ দুষ্কর্ম করে অথবা নিজের ওপর জুলুম করে অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় দেখতে পাবে।’ (সূরা নিসা-১১০)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘যারা কোনো পাপ কাজ করে ফেললে কিংবা নিজেদের প্রতি জুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে আর আল্লাহ ব্যতীত গুনাহ সমূহ ক্ষমাকারী কে-ই বা আছে? এবং তারা জেনেশুনে নিজেদের (পাপ) কাজের পুনরাবৃত্তি করে না।’ (সূরা আলে ইমরান-১৩৫) যারা গুনাহের পর তাৎক্ষণিক তাওবা-ইস্তিগফার করে আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্য রেখেছেন উত্তম পুরস্কার। যা আল্লাহ তায়ালা পরবর্তী আয়াতে ঘোষণা করেছেন- ‘তাদের পুরস্কার হবে তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং এমন সব উদ্যান, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত থাকবে, সেখানে তারা সর্বদা অবস্থান করবে। কতই না উত্তম প্রতিদান আমলকারীদের জন্য।’ (সূরা আলে ইমরান-১৩৬)
তাওবা-ইস্তিগফারের উপকারিতা:
বান্দার প্রতি আল্লাহ তায়ালার কত যে দয়া ও ভালোবাসা কুরআনের কিছু আয়াত পড়ে সেগুলো বুঝে আসে। বান্দা তার অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চাইলে তিনি তার গুনাহ তো মাফ করেনই; সাথে সাথে তিনি দান করেন অগণিত নিয়ামত। ইস্তিগফারের উপকারিতা বর্ণিত হয়েছে সূরা নূহ-এ। হযরত নূহ (আ:) তাঁর কওমকে ইস্তিগফার করতে বলেছিলেন। ইস্তিগফার করলে কী কী লাভ হবে? কুরআন তা জানিয়ে দেয় সুস্পষ্টভাবে, বলেছি তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, তিনি তো ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটাবেন। তিনি তোমাদের সমৃদ্ধ করবেন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন উদ্যান ও প্রবাহিত করবেন নদীনালা। (সূরা নূহ: ১০-১২)
উপরোল্লিখিত আয়াতগুলোতে ইস্তিগফারের উপকারিতা বর্ণিত হয়েছে। প্রথমত: আল্লাহ তায়ালা গুনাহসমূহ মাফ করবেন। এরপর আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন আর বৃষ্টির কারণে জমিনে ফলন ভাল হবে। এভাবে আল্লাহ তায়ালা রিজিকে সমৃদ্ধি দান করবেন। পাশাপাশি সন্তান-সন্ততিতেও বরকত হবে। আরো বহু কল্যাণ আল্লাহ তায়ালা দান করবেন। তাই আমাদের জন্য করণীয় হল গুনাহ হওয়ার সাথে সাথে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া। বিলম্ব না করা। আল্লাহ আমাদের সহীহভাবে খালেস দিল থেকে তাওবা-ইস্তেগফার করার তাওফীক দিন। আমীন।