মীযান ডেস্ক: মিসরের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতা নিশ্চিত করেছেন। ৮৯.৬ শতাংশ ভোট পেয়ে তিনি আবারও নির্বাচিত হয়েছেন। গতকাল সোমবার ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর ভোট নেওয়া হয়। দেশটির জাতীয় নির্বাচন কমিশন জানায়, এবার ৬৬.৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। অর্থাৎ ৩ কোটি ৯০ লাখেরও বেশি ভোটার জেনারেল আলসিসিকে ভোট দিয়েছেন।
এক দশক ধরে মিসর শাসন করছেন আলসিসি। একদা সেনাপ্রধান ছিলেন তিনি। ২০১৩ সালে সেনা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মোহাম্মদ মুরসিকে মাত্র এক বছরের মাথায় ক্ষমতাচ্যুত করে মসনদ দখল করেন জেনারেল সিসি। পরে ২০১৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হন তিনি। ডজন খানেক গুরুতর ফৌজদারি মামলা সাজিয়ে মিশরের একমাত্র নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসিকে টানা ৬ বছর জেলে অবরুদ্ধ করে রাখে আলসিসি সরকার। ২০১৯ সালের ১৭ জুন আদালতে এজলাশ চলাকালে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ইন্তেকাল হয় ইসলামপন্থী প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুরসির।
এদিকে এবারের নির্বাচনে আলসিসির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আরও তিন প্রার্থী। তাঁদের কেউই অবশ্য তেমন পরিচিত মুখ নন। তাদেরকে একরকম ডামি প্রার্থী করেছিলেন আলসিসি। অনেকবছর আগেই সব রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করে দেন আলসিসি। তাই এর আগেও দুবার একইভাবে অচেনা দু-তিনজনকে পুতুলের মতো দাঁড় করিয়ে নিজে জেতার পথ প্রশস্ত করেছিলেন পশ্চিমা ও আরবদের মদতপুষ্ট আলসিসি। তাই ভোটের লড়াইয়ে সিসিকে কখনোই সেভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হয়নি। এবার সিসির সবচেয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাজেম ওমর পেয়েছেন মাত্র ৪.৫ শতাংশ ভোট। এছাড়াও ফরিদ জাহরান ২.৮ এবং আবদেল সানাদ ইয়ামামা পেয়েছেন ২.৩ শতাংশ ভোট।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১০ বছর ধরে ক্ষমতা আঁকড়ে রেখে মিশরকে কাঙাল করে ছেড়েছেন আলসিসি। কিন্তু তবুও সরকারটা চলছে শুধুমাত্র সৌদি সহ কয়েকটি আরব দেশ এবং আমেরিকা, ইজরায়েল ও ইউরোপের কয়েকটি দেশের আর্থিক অনুদানে। আলসিসি মিশর থেকে গণতন্ত্রকে বিদায় দিয়ে সামরিকতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র বা একনায়কতন্ত্র লাগু করলেও পশ্চিমারা তাকে সমর্থন ও সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে চলেছে। কারণ, তাদের ভয় হল, আলসিসি সরে গেলে আবার ইসলামপন্থীরা হয়ত ক্ষমতায় ফিরবে। তাহলে মিশর হাতের হাতের বাইরে চলে যাবে। তাই প্রেসিডেন্ট মুরসির সরকারকে উৎখাত করতে ২০১৩ সালে যেভাবে আরব ও পশ্চিমারা আলসিসিকে সবরকম সাহায্য সহযোগিতা দিয়েছিল, এখনও দিয়ে চলেছে। এর আরেকটি অন্যতম নেপথ্য কারণ হল, তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক বা কামাল পাশার মতোই আলসিসিও মিশরের বুক থেকে ইসলামের ইতিহাস, ঐতিহ্য মুছে দিতে সক্ষম হয়েছে।